অভিযোগ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে

এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্তকে আগেই ছুটি, বিতর্ক

পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত রোগীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে তা নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই কিশোরীর ছুটি বাতিল করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩০
Share:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি কল্যাণী বর্মন। —নিজস্ব চিত্র।

পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত রোগীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে তা নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই কিশোরীর ছুটি বাতিল করা হয়।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কল্যাণী বর্মন নামে এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত এক কিশোরীকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। সে কোচবিহারের রসিকবিল এলাকার বাসিন্দা। তার পরিবারের লোকজন হাসপাতাল সুপারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন, এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি ওই কিশোরী। তাঁদের সঙ্গে যান বিজেপির স্থানীয় নেতারাও। এর পরে সুপার সব্যসাচী দাস ওই কিশোরীর ছুটি বাতিল করেন। বিজেপির মাটিগাড়া ১ নম্বর অঞ্চল কমিটির সহ-সভাপতি নিরঞ্জন রায়, উত্তম বিশ্বাসেরা বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকার রোগীদের সুস্থ না করে ছুটি দেওয়ায় তাঁদের নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন পরিবারের লোকেরা। তা যাতে না হয়, সে জন্য সুপারকে বলা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।”

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও জটেশ্বর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা, পেশায় কৃষক প্রভাতচন্দ্র রায়কে সুস্থ হওয়ার আগেই ছুটি করিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। শিবমন্দিরের বাসিন্দা দীনেশ সাহা নামে এক ব্যক্তি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ছ’দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে ভর্তি ছিলেন। সপ্তাহখানেক আগে তাঁকেও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত মঙ্গলবার ফের তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

Advertisement

কল্যাণীর পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ১১ অগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এনসেফালাইটিস আক্রান্ত বছর পনেরোর ওই কিশোরী। এখনও সুস্থ হয়নি সে। উঠে বসতে পারছে না। কথা বলা বন্ধ। খেতেও পারছে না সে। কিশোরীর পরিবার এ দিন সুপারকে জানান, এই পরিস্থিতিতে তাকে বাড়ি নিয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে। কল্যাণীর বাবা স্বদেশবাবু বলেন, “মেয়ের যা শারীরিক অবস্থা, তাতে এ দিন চিকিত্‌সক ছুটি দেওয়ায় চিন্তায় পড়েছিলাম। সুপারকে জানিয়েছি। এখানে আরও কিছু দিন রেখে চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।” সব্যসাচীবাবু বলেন, “এখনই যাতে কল্যাণীকে ছুটি না দেওয়া হয় তা দেখছি। ওর ফিজিওথেরাপি ও আনুষঙ্গিক চিকিত্‌সা করাতে হবে। এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত রোগীর জীবনের ঝুঁকি কাটার পরে বেশিদিন হাসপাতালে থাকলে অন্য সংক্রমণ হতে পারে। তাই বাড়ি নিয়ে গিয়ে রোগীর পরিচর্যা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।” কল্যাণীর পরিবারের দাবি, সুপার তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন, এই ধরনের রোগীদের পরবর্তী চিকিত্‌সা করার জন্য মেডিক্যাল কলেজের মধ্যেই একটি কেন্দ্র খোলা হবে। কিন্তু তা চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত কল্যাণীর পরিবারের লোকেরা মাস খানেক ঘরভাড়া করে থাকলে প্রয়োজনীয় চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই। স্বদেশবাবু জানান, মাসখানেক আগে জ্বরে আক্রান্ত হয় কল্যাণী। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার চিকিত্‌সা বাবদ প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।

এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের ‘ব্যর্থতা’ এবং সারদা কেলেঙ্কারির মতো বিষয় নিয়ে আগামী ২৯ অগস্ট উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কয়েক জন তাতে সামিল হবেন বলে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত রোগীদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিবির করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement