এডসের বিরুদ্ধে লড়াই এইচআইভি আক্রান্তের

নিজে শিকার এই রোগের। যদিও দীর্ঘ চিকিৎসায় এখন অনেকটা স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু শুরুর সে সব দিন আজও তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। আর তাই মারণ এডসের বিরুদ্ধে লড়াইকে ছড়িয়ে দিতে রাস্তায় নেমেছেন তিনি। একটাই লক্ষ্য, তাঁর মতো কেউ যেন এই রোগের শিকার না হন। জীবনের ‘ভুল’-এর মাসুল কম দিতে হয়নি নিশিথ চেল (নাম পরিবর্তিত) নামের ওই যুবককে। বাড়ি হুগলির বলাগড়ের একটি গ্রামে। দরিদ্র পরিবারে ৬ বোন ও এক ভাই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। সাংসারিক চাপে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
Share:

সোমবার বিশ্ব এডস দিবসে মিছিল চুঁচুড়ায়। ছবি: তাপস ঘোষ।

নিজে শিকার এই রোগের। যদিও দীর্ঘ চিকিৎসায় এখন অনেকটা স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু শুরুর সে সব দিন আজও তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। আর তাই মারণ এডসের বিরুদ্ধে লড়াইকে ছড়িয়ে দিতে রাস্তায় নেমেছেন তিনি। একটাই লক্ষ্য, তাঁর মতো কেউ যেন এই রোগের শিকার না হন।

Advertisement

জীবনের ‘ভুল’-এর মাসুল কম দিতে হয়নি নিশিথ চেল (নাম পরিবর্তিত) নামের ওই যুবককে। বাড়ি হুগলির বলাগড়ের একটি গ্রামে। দরিদ্র পরিবারে ৬ বোন ও এক ভাই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। সাংসারিক চাপে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ’৯৩ সালে কলকাতার গার্ডেনরিচ এলাকার একটি কারখানায় কাপড়ে নকশা আঁকার কাজ নেন। নিশিথের কথায়, ‘‘তখন সদ্য যুবক। কারখানারই এক মহিলার সঙ্গে কয়েক বার সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ি। বছর খানেক পর শরীর খারাপ হতে শুরু করে। মাঝেমধ্যেই জ্বর, পেটখারাপ, সর্দি-কাশি হত। পরে যক্ষাও হয়।” জানালেন, ২০০৪ সালে বিয়ে করেন। ২০০৬ সালে ছেলের জন্ম। ওই বছরের শেষ দিকে ফের মারাত্মক শরীর খারাপ হয়। এ বার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষায় ধরা পড়ে শরীরে বাসা বেধেছে এইচআইভি। স্ত্রীর শরীরেও একই জীবাণুর অস্তিত্ব। বাড়িতে এসে সব জানান। কিন্তু পাশে থাকার বদলে আজন্মের পরিচিত চৌহদ্দিটা দূরে সরে যেতে থাকে। নিশিথের কথায়, ‘‘বাবা আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি। অসুখের কথা শুনে আত্মীয়-স্বজন মুখ ফিরিয়ে নেন। খুবই ভেঙে পড়েছিলাম।’’ ২০০৭ সালে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ভর্তি হন নিশিথ। সেখানে তিন মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেই সময়েই শ্রীরামপুরের এইচআইভি-এডস আক্রান্তদের সংস্থাটির খোঁজ পান নিশিথ। সংস্থার সদস্যরা নিশিথের বাবা, পরিবারকে বোঝান। যদিও তাতে তেমন কাজ হয়নি। তবে একই রোগে আক্রান্ত আর পাঁচ জনের সান্নিধ্যে জীবনটা বদলে যায় নিশীথের। এই রোগে আক্রান্তদের মানুষ যাতে বাঁকা চোখে না দেখে, সে জন্য লড়াই শুরু করেন তিনি। এখন এইচআইভি-এডস্ রোধে কাজ করা একটি সংগঠনের কর্তা। কি কারণে এডস্ হতে পারে, এডস্ রোধে কিকি সতর্কতা নেওয়া উচিত, সে সব নিয়েই নিরন্তর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সোমবার বিশ্ব এডস দিবসে হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ায় এক সচেতনতা মিছিলে সামিল হন তিনি। নিশিথের কথায়, ‘‘এক সময় প্রায় মৃত্যুমুখে চলে গিয়েছিলাম। এখন অনেকটা স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছি। কাজও করছি।’’ তিনি জানান, ওই রোগে আক্রান্তদের অন্ত্যোদয় যোজনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। সংগঠনের সদস্য সংখ্যা হাজারের উপর। এঁদের মধ্যে ১৩৮ জন অন্ত্যোদয়ের কার্ড পেয়েছেন। বাকিদের জন্য চেষ্টা চলছে। আর এ ভাবেই নিজের লড়াইকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দতে চান নিশীথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement