কোথায় হবে এইমস, টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। চূড়ান্ত স্থান নির্বাচন করতে রাজ্য সরকার এখনও কিছুটা দ্বিধায় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো চিঠিতে অবশ্য বলা হয়েছে, এইমসের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের প্রথম পছন্দ কল্যাণী। যদিও ওই দফতর সূত্রের খবর, বিকল্প ঠাঁই হিসেবে একই সঙ্গে ভাবা হচ্ছে শিলিগুড়ির নামও।
এত দিন পরেও রাজ্য সরকার এইমসের স্থান বাছাইয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে না-পারায় স্বাস্থ্য দফতরের অনেক অফিসারই বিস্মিত। তাঁরা বলছেন, ২০১৩ সালে রাজ্য থেকে যে-চিঠি পাঠানো হয়, তাতে এইমসের স্থান হিসেবে শিলিগুড়ি কিংবা কোচবিহারের কথা বলা হয়েছিল। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, একাধিক জায়গায় এইমসের ধাঁচে প্রতিষ্ঠান হতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকারের ইচ্ছা, প্রথমটি হোক কল্যাণীতে।
এখনও এইমস নিয়ে রাজ্য সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারল না কেন? কল্যাণীর পাশাপাশি দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে কেন উঠে আসছে শিলিগুড়ির নাম? কল্যাণীর চিহ্নিত জমি নিয়ে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, “বামফ্রন্ট সরকারও কল্যাণীতে এইমস গড়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেখানে জমিও চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তৃণমূল সরকারও সেই পথে হাঁটতে শুরু করে। কিন্তু কল্যাণীর জমিকে ঘিরে অন্য কিছু জট তৈরি হওয়ায় মাঝখানের বেশ কিছুটা সময় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে ছিল।” স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, সেই জট অনেকটাই খুলেছে। কিন্তু প্রশাসনিক জট এখনও পুরোপুরি খোলেনি। তাই রাজ্য সরকার বিকল্প একটি জায়গার নামও উল্লেখ করে রেখেছে চিঠিতে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এইমসের জন্য এক সময় রায়গঞ্জ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল। কারণ, সেখানকার দুই প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এবং তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি রায়গঞ্জে এইমস গড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে লাগাতার চাপ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসে রায়গঞ্জের প্রস্তাব পুরোপুরি বাতিল করে দেয়। সেই সময়েই রায়গঞ্জের বিকল্প হিসেবে উত্তরবঙ্গেরই অন্য শহর শিলিগুড়ির নাম উঠে আসে।
শিলিগুড়িই বা কেন?
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, ওখানে বিমানবন্দর রয়েছে। সেটাই সব থেকে বড় সুবিধা। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানাচ্ছেন, রায়গঞ্জে এইমস না-গড়ার পিছনে পুরোটাই রাজনীতি, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। এইমসের মতো প্রতিষ্ঠানে নামী চিকিৎসকদেরই নিয়ে যেতে চায় সরকার। কিন্তু তাঁরা কেউই ওই প্রত্যন্ত জায়গায় যাবেন না। “শুধু থাকার জায়গার বন্দোবস্ত করলেই তো হবে না। বাদবাকি পরিকাঠামোও থাকতে হবে। সেই জন্যই কল্যাণী, বা শিলিগুড়ি,” বললেন ওই কর্তা।
কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠনের পরে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে প্রস্তাব পাঠান, রাজ্য যেখানে চাইবে, সেখানেই এইমসের ধাঁচে প্রতিষ্ঠান গড়া হবে। তিনি স্পষ্ট ভাবেই জানান, রাজনীতির কথা না-ভেবে সাধারণ মানুষের স্বার্থে এইমসের মতো সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরির কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। কিন্তু কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে সাড়া দিতে রাজ্য সরকার কেন দশ-দশটা দিন লাগিয়ে দিল, তা নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের অনেকেই বিস্মিত।