শক্তিনগর হাসপাতালে চলছে কেমোথেরাপির চিকিৎসা। নিজস্ব চিত্র।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে শুরু হল ক্যানসারের কেমোথেরাপি ইউনিট। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা এখান থেকে কেমো নিলে শুধুমাত্র ওষুুধের খরচ দেবেন। বাকি যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে এর আগে ক্যানসারের আউটডোর চালু ছিল। দু’জন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সপ্তাহে সোম, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার আউটডোরে রোগী দেখতেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরামর্শ দিতেন। এবার থেকে পরামর্শের পাশাপাশি জেলা হাসপাতালেই চিকিৎসার সুবিধা মিলবে জেনে খুশি জেলাবাসী। শুক্রবার এই ইউনিটটি চালু হয়। প্রথম দিনই কেমোথেরাপি চালু করা হয় কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণীর বাসিন্দা রীতা পালের। বছর খানেক আগে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়েছে। মোটা টাকা খরচ করে মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। এই মুহুর্তে তাঁর তিনটি কেমোথেরাপি করা প্রয়োজন। রীতাদেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক চেষ্টা করে কৃষ্ণনগরের একটি নার্সিংহোম থেকে প্রথম কেমোথেরাপি করা হয়েছিল। জেলা হাসপাতালে নিখরচায় এই পরিষেবা মিলবে জেনে আর দেরি করেনি রীতাদেবীর পরিবার। তাঁর স্বামী বিজয়কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘‘শক্তিনগরে কেমোথেরাপি চালু হওয়ায় আমাদের খুবই সুবিধা হয়েছে। কলকাতা ছাড়া এত দিন কেমোথেরাপি করা যেত না। তাতে টাকা যেমন খরচ হত, তেমনই রোগীরও কষ্ট হত। এবার অন্তত সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া গেল।’’
হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রী হালদার বলেন ‘‘এই মুহুর্তে কেমোথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা পুরোপুরি কলকাতাকেন্দ্রিক। জেলা স্তরে কেমোথেরাপি পরিষেবার সুযোগ করে দেওয়া এই মুহুর্তে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আগামী দিনে দুঃস্থদের ওষুধের খরচাও বহন করার কথা ভাবা হচ্ছে।” জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, এর আগে দক্ষিণ দিনাজপুর ও জলপাইগুড়ি জেলায় এই ভাবে বিনামূল্যে কেমোথেরাপি চালু হলেও কোনও রকম কেন্দ্রীয় অনুদান ছাড়া নদিয়াতেই প্রথম এই ধরণের ইউনিট চালু হল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাই মণ্ডল বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়াই সম্পূণর্র্ জেলার উদোগে এই ধরনের ইউনিট শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে প্রথম। আমরা স্থানীয় ভাবে এই খরচ চালানোর ব্যবস্থা করে নিয়েছি। আশা করছি এর ফলে জেলার ক্যনসার আক্রান্ত মানুষ, বিশেষ করে দুঃস্থরা খুবই উপকৃত হবেন।’’
এই মুহুর্তে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে তিন শয্যার এই ইউনিটটি চালু করা হয়েছে। এই ইউনিটের জন্য বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কেমোথেরাপির পাশাপাশি রেডিওথেরাপিও দ্রুত শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার ইউনিট চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই মতো একটি প্রকল্প তৈরি করে স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত তার অনুমোদন পেয়ে যাব।’’
জেলা হাসপাতালের এই কেমোথেরাপির নতুন ইউনিটকে সব রকম ভাবে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসনের সঞ্জীবনী প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট। তারা জেলার ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের তালিকা তৈরির কাজ করছে। সঞ্জীবনীর সহ-সভাপতি রমেন সরকার বলেন, ‘‘আমরা এমন অনেক ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর কথা জানি যাদের কেমোথেরাপি নেওয়ার মতো ক্ষমতা নেইকারও আর্থিক সমস্যা, কারও শারীরিক আবার কারও নিয়ে যাওয়ার লোকের অভাব। আমরা এদের পাশে থেকে সবরকম ভাবে সাহায্য করব। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেব আমরা।”