ছুটিতে মুম্বইয়ের বাড়িতে ফেরার পর ডায়েরিয়া হয়েছিল নাইজেরিয়া-প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ারের। আশঙ্কা কাটাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ‘হেল্পলাইনে’ ফোন করেন ইবোলা-আক্রান্ত দেশের বাসিন্দা ললিত কুমার আহির।
এর পরই পড়েন ফাঁপরে।
অভিযোগ, দু’দিন ধরে সরকারি হাসপাতালের ঘরে তাঁকে আটকে (কোয়ারান্টাইন) রাখা হয়। সেখানে সকাল-সন্ধে মশা ছেঁকে ধরত বছর তিরিশের ওই যুবককে। গত কাল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও ভয় কাটেনি ললিতের। তবে তা ইবোলার নয়, মশাবাহিত ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির! ছুটির মজাও নষ্ট হয়েছে চিকিৎসকদের ফরমানে। তাঁরা জানিয়েছেন, ৭ দিন বাড়ির বাইরে তিনি বেরোতে পারবেন না। ভাইরাস-হামলার ভয়ে তাঁকে এড়িয়ে চলছেন আত্মীয়-বন্ধুরাও।
অনেকটা একই কাণ্ড ঘটেছে নয়াদিল্লিতে। নাইজেরিয়া থেকে আসা এক বিমানযাত্রীকে দু’দিন থাকতে হয়েছে সেখানকার হাসপাতালের ‘আইসোলেশন ওয়ার্ডে’। তবে তাঁর দেহেও ইবোলার খোঁজ মেলেনি। অন্য দিকে, গুয়াহাটির একটি ক্লাবের ৮ জন নাইজেরীয় ফুটবলারকে ২১ দিনের জন্য নজরবন্দি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাঁদের এক জন সম্প্রতি সে দেশ থেকে ফিরেছিলেন। অসম প্রশাসন জানিয়েছে, রাজ্যের অন্যান্য ফুটবল ক্লাব কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সাত বছর ধরে নাইজেরিয়ার কর্মরত রয়েছেন মুম্বইয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার ললিত। তিনি জানিয়েছেন, মাসখানেকের ছুটি নিয়ে ২৮ জুলাই নিজের শহরে পৌঁছন। ৪ অগস্ট তাঁর ডায়েরিয়া হয়। পারিবারিক চিকিৎসক আশ্বাস দিলেও, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে নয়াদিল্লির ‘ইবোলা হেল্পলাইনে’ ফোন করেন ললিত। তাঁকে ভাসি এলাকার একটি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ১০ অগস্ট সেখানে পৌঁছনোর পরই চিকিৎসকরা ললিতকে একটি ঘরে আলাদা ভাবে রেখে দেন। ওই যুবকের কথায়, “মশার কামড়ে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম এ বার ম্যালেরিয়া নয় ডেঙ্গিতে মরতে হয়। এক বার শুধু রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয়েছিল।” গত কাল দিল্লিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চিকিৎসকদের ফোন করে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানান। দুপুরের পর তিনি রেহাই পান। তবে হাসপাতালের চিকিৎসক রানি বদলানি জানান, সপ্তাহখানেক তাঁকে ঘর থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে।
এ দিকে, নাইজেরিয়ার আবুজায় একটি হাসপাতালে কর্মরত তিন ভারতীয় চিকিৎসক অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদের দেশে ফিরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য তা অস্বীকার করে জানিয়েছেন, মুমূর্ষ রোগীদের ফেলে এ ভাবে আচমকা দেশে না-ফিরতে তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছিল। আবুজায় ইবোলা সংক্রমণও ছড়ায়নি। নয়াদিল্লি সূত্রের খবর, এ নিয়ে তৎপর হয়েছে নাইজেরিয়ায় ভারতীয় দূতাবাস। ভারতে ইবোলা-হানা রুখতে সরকারকে পদক্ষেপ করার অনুরোধ উঠেছে রাজ্যসভায়।
মারণ-ভাইরাসের মোকাবিলায় আমেরিকার একটি ওষুধ নির্মাতা সংস্থার তৈরি ‘ভ্যাকসিন’ পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ইতিমধ্যেই পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা-আক্রান্ত দেশগুলিতে তা পৌঁছে গিয়েছে। হু জানিয়েছে, সেখানকার গিনি, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং নাইজেরিয়ায় এখনও পর্যন্ত ওই মারণ-ভাইরাসের শিকার হয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ। এ দিন স্পেনের মাদ্রিদে একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে লাইবেরিয়ায় ইবোলা-আক্রান্ত এলাকা থেকে আসা এক প্রৌঢ় যাজকের।