এই ছবি কি বদলাবে? রবিবার বিকেলে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে থিক থিক করছে রোগীর আত্মীয়দের ভিড়। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালের তিনতলা থেকে এক সদ্যোজাত উধাও হওয়ার ঘটনা দেখিয়ে দিল পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার হাল। এরপরেই প্রকাশ্যে আসে হাসপাতালের সিসিটিভি বিকল হয়ে পড়ে থাকার কথা। শুক্রবার সকাল থেকে নিখোঁজ হওয়া সেই শিশুর হদিস সোমবার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার হাসপাতালে বহিরাগতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নিতে নামছে কর্তৃপক্ষ।
স্থির হয়েছে এ বার থেকে বেসরকারি হাসপাতালের ধাঁচে রোগীর শুধু একজন আত্মীয়কে হাসপাতালে ‘ভিজিটিং আওয়ারে’ ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে। এ জন্য হাসপাতাল থেকে নির্দিষ্ট কার্ড দেওয়া হবে। সোমবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান পুরুলিয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ।
এ দিকে এ দিনই শিশু নিখোঁজের ঘটনার প্রেক্ষিতে গড়া চার সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জমা পড়েছে। বিকেলে সেই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। সেই বৈঠকেই হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়। মানবেন্দ্রবাবু জানান, এ ছাড়াও পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে আরও কয়েকটি সিসিটিভি লাগানো হবে।
গত শুক্রবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের নবজাত পরিচর্যা বিভাগ তথা নিওনেটাল ওয়ার্ড থেকে নিখোঁজ হয় ওই সদ্যোজাত। আড়শার কালীপুর গ্রামের প্রসূতি মেনকা মুর্মুর সদ্যোজাতকে উদ্ধার করার দাবিতে শনিবারই গ্রাম থেকে কয়েকশো বাসিন্দা এসে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। ইতিমধ্যেই নিখোঁজ শিশুটির সন্ধান পেতে গোয়েন্দাদের দ্বারস্থ হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার এসইউসি-র তরফেও নিখোঁজ শিশুটিকে দ্রুত খুঁজে বের করার দাবিতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এই দাবিতে তাঁরা এ দিন হাসপাতাল মোড়ে পথসভা করেন।
দলের জেলা কমিটির সদস্য রঙ্গলাল কুমার বলেন, “হাসপাতালে নিরাপত্তার হাল কতটা খারাপ তা এই শিশু নিখোঁজের ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে দাবি করেছি যাদের গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটেছে তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দাবি করেছেন, শিশু নিখোঁজের ঘটনায় তারা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন।
বস্তুত সদর হাসপাতাল থেকে শিশু নিখোঁজের ঘটনায় যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তারই প্রেক্ষিতে এ বার হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়-সহ বহিরাগত লোকজনের যখন তখন হাসপাতালে ঢুকে পড়ার ক্ষেত্রে রাশ টানতে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতালে আরও কয়েকটি জায়গায় সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। বিকল হয়ে যাওয়া সিসিটিভিগুলিও সারানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাসপাতালের এক কর্তা জানান, এতদিন রোগী ভর্তি হলে তাঁর আত্ময়ীদের জন্য একটি কার্ড দেওয়া হয়ে আসছে ঠিকই। কিন্তু সেই কার্ড দেখিয়ে একজনের বদলে একাধিক লোকজন রোগীকে দেখতে ভিতরে ঢোকেন। তা ছাড়া ভিজিটিং আওয়ারের বাইরে যে ঢোকা উচিত নয়, সেই বাধ্যবাধ্যকতাও কিছু রোগীর আত্মীয় মানতে চান না। এ নিয়ে অনেকবার নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের গোলমালও হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার পরে আর ওই অব্যবস্থা চলতে দিতে নারাজ কর্তৃপক্ষ।
মানবেন্দ্রবাবু বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বেসরকারি হাসপাতালগুলির ধাঁচে এ বার থেকে সদর হাসপাতালেও সাধারণ রোগীদের একজন মাত্র আত্মীয়কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া কার্ড দেখিয়ে ভিজিটিং আওয়ারে রোগীর সাথে দেখা করতে দেওয়া হবে। তবে আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা রোগী ও প্রসূতিদের ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ কার্ড দেবে। ওই কার্ড দেখিয়ে রোগীর একজন আত্মীয় ২৪ ঘণ্টা রোগীর সাথে থাকতে পারবেন।”