সদ্যোজাতদের স্বাস্থ্যের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছে রাজ্য। অথচ খোদ কলকাতা শহরের নামী সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’দিন বয়সী শিশুর উপরে বেড়ালের হামলা হল বৃহস্পতিবার সকালে। ঘটনাস্থল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের চিকিত্সকেরাই আতঙ্কিত হয়ে স্বীকার করেছেন, ভাগ্যক্রমে শুধুমাত্র হাতে ও গালে বেড়ালের আঁচড় ছিল। তার বেশি কিছু ঘটেনি। নাক-মুখ বা ঘাড়ে বেড়াল তেমন জোরে কামড়ালে শিশুটির মৃত্যুও ঘটতে পারত।
কিন্তু নার্সারি বা লেবার রুমে বেড়াল ঢুকছে কী ভাবে? কেন বেড়াল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? হতাশ গলায় অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল জানান, অজস্র বার বেড়াল ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা দরপত্র ডেকেছেন। কিন্তু কোনও সংস্থা আগ্রহ দেখায়নি।
তাঁর কথায়, “একটি সংস্থা বলল, তারা বেড়াল ধরে নির্বীজকরণ করে আবার ফেরত দিয়ে যাবে। তাতে লাভ কী? নির্বীজকরণ করলে কি বেড়াল আঁচড়াবে-কামড়াবে না? আরেকটি সংস্থা বলল, তারা বেড়াল ধরে আমার ঘরের সামনে একটা খাঁচা বানিয়ে তাতে পুরে রেখে দেবে। খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে হাসপাতালকেই। অবাস্তব সব প্রস্তাব!” তাঁর আরও বক্তব্য, “হাসপাতালে প্রচুর খাবার। রান্নাঘর রয়েছে, ক্যান্টিন রয়েছে। খাবারের দোকান রয়েছে। তাই বেড়ালও আছে। আমরা হয়রান, বিভ্রান্ত। জানি না কী ভাবে মোকাবিলা করব।” কলকাতা পুরসভা কেন বেড়াল ধরে নিয়ে যায় না? পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “আমাদের কুকুর ধরার নিয়ম রয়েছে, কিন্তু বেড়াল ধরার নিয়ম নেই। বেড়াল ধরতে প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞ লোকও আমাদের নেই।”
বৃহস্পতিবার যে সদ্যোজাতের উপরে বেড়াল হামলা করেছে, তার মা সাবেরা বিবি জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তিনি মেয়েকে নিয়ে বসেছিলেন। শয্যা পাননি। মাটিতেই জায়গা হয়েছিল। আচমকা পাশের জানলা দিয়ে একটা বড়, মোটা বেড়াল লাফ দিয়ে মেয়ের উপরে এসে পড়ে। তিনি চিত্কার করে এক ধাক্কায় বেড়ালটিকে সরিয়ে দেওয়ার আগেই মেয়ের হাতে ও গালে আঁচড় লাগে। গোটা নার্সারিতে হুলস্থূল শুরু হয়। গুজব ছড়ায়, বেড়াল ওই শিশুটিকে মেরে ফেলেছে। শিশুটির বাড়ির লোক এবং হাসপাতালে আসা অন্য অনেক রোগীর আত্মীয়েরা দল বেঁধে সুপার ও ডেপুটি সুপারের অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। অবস্থা সামলাতে টালা থানা থেকে পুলিশ আসে। শেষ পর্যন্ত শিশুটির বাবা ইব্রাহিম মোল্লাকে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখালে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
ইব্রাহিম তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন রাজারহাটে। তিনি পেশায় গাড়িচালক। বলেন, “কোনও মতে আমার বাচ্চাটা বেঁচে গিয়েছে। মরেও যেতে পারত। তখন হাসপাতালের কর্তারা কী জবাব দিতেন? কেন বাচ্চাদের ওয়ার্ডে এই ভাবে বেড়াল ঢুকে পড়বে? এটা কোনও সভ্য জায়গায় হয়? আমরা গরিব বলেই কি আমাদের এই হেনস্থা?” চারপাশে জমায়েত অন্য রোগীর আত্মীয়েরাও চিত্কার করে হাসপাতালে পরিষেবার অভাব ও টাকার জুলুম নিয়ে অভিযোগ জানাতে থাকেন। তাঁদের বক্তব্য, শুধু বেড়ালের অত্যাচারই নয়। কোনও বাচ্চা জন্মালেই আয়া থেকে শুরু করে গেটম্যান, ওটি অ্যাসিস্ট্যান্ট, ওয়ার্ড বয় প্রত্যেককে ৫০০-১০০০ টাকা না দিলে বাচ্চাকে দেখতে দেওয়া হয় না। রোগীর যত্নও নেওয়া হয় না। এ ব্যাপারে ডেপুটি সুপার সুপ্রিয় চৌধুরী বলেন, “মাসখানেক আগে এই রকম লিখিত অভিযোগ
পেয়ে এক ওয়ার্ড বয়কে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ লোক লিখিত অভিযোগ করতে চান না। শুধু মুখে বলেন। ফলে আমাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়।”