অসুখ হলে নিখরচায় চিকিত্সকের পরামর্শ মিলত। নামমাত্র খরচে মিলত ওষুধ। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনে পাওয়া যেত আর্থিক সহযোগিতাও। কিন্তু প্রায় চার বছর ধরে এলাকার একমাত্র স্টুডেন্টস হেল্থ হোমটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে উদয়নারায়ণপুর ব্লকের বহু ছাত্রছাত্রী। সংলগ্ন হুগলির বলাইচক এবং রাজবলহাট এলাকার বহু স্কুলের ছাত্রছাত্রীও ওই হেল্থ হোমটির উপরে নির্ভরশীল ছিল। হোমটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থাভাবকেই দায়ী করেছেন কর্তৃপক্ষ।
হাওড়া জেলায় স্টুডেন্টস হেল্থ হোমের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্মৃতিভূষণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, স্কুলগুলিই ছাত্রছাত্রীদের থেকে চাঁদা তুলে হোম চালানোর জন্য জমা দেয়। শিক্ষকেরাই পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। এ ছাড়া, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কিছু অনুদান এবং নানা মানুষের আর্থিক সাহায্যে চলে। তাঁর অভিযোগ, “উদয়নারায়ণপুরে স্কুলগুলি থেকে সে ভাবে চাঁদা না মেলায় হোমটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। স্কুল এগিয়ে এলেই ওই হোমের পুনরুজ্জীবন সম্ভব। এই মুহূর্তে আমাদের কিছু করার নেই।” রাজনৈতিক কিছু কারণে যে ওই হোমে শেষ দিকে চাঁদা জমা দেওয়া হত না তা মেনে নিয়েছেন ওই এলাকার কিছু স্কুলের শিক্ষকেরা। হোমটি খুললে তাঁরা ফের চাঁদা তুলে দিতে রাজি বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষকেরা।
হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫২ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কিছু ছাত্র মৌলালিতে সংস্থাটি গড়ে তোলেন। ক্রমে তা বিভিন্ন জেলাতেও ছড়ায়। ঘটে। হাওড়া জেলায় মধ্যে বালিতে প্রথম ওই কেন্দ্র হয়। ধীরে ধীরে দক্ষিণ হাওড়া, উলুবেড়িয়া, আমতাতেও তা গড়ে ওঠে। ২০০৬ সালে সালে বাগনান এবং উদয়নারায়ণপুরে প্রায় একই সঙ্গে স্টুডেন্টস হেল্থ হোম তৈরি হয়। উদয়নারায়ণপুরেরটি ছাড়া বাকিগুলি এখনও চলছে। কেন্দ্রগুলিতে অন্তত তিন-চার দিন চিকিত্সকেরা আসেন। কেন্দ্রগুলিতে পড়ুয়াপিছু চাঁদা বছরে ১০ টাকা। কেন্দ্র থেকে ওষুধ নিতে গেলে দিতে হয় ৫ টাকা।
উদয়নারায়ণপুরের কেন্দ্রটির অধীনে রয়েছে অন্তত ২৫টি স্কুল। ২০০৯-১০ অর্থবর্ষ থেকেই ওই কেন্দ্রে অর্থাভাব শুরু হতে থাকে বলে অভিযোগ। বন্ধ হয়ে যায় ২০১১ সালে। হোম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ওই সময়ে বিভিন্ন স্কুল পরিচালন সমিতির ক্ষমতা রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের হাতে চলে যায়। সেই সমিতি আর এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি।
এই অভিযোগ মানেননি স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “ওই কেন্দ্রগুলি আসলে সিপিএমের যুব ও ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ওখানে স্কুল চাঁদা দিতে যাবে কেন? ওই সব কেন্দ্রের আয়ব্যয়ের কোনও হিসেবও নেই। তবে, আমরা কোনও ভাবে স্কুলগুলিকে চাঁদা দিতে বারণ করিনি।” দলের ছাত্র ও যুব সংগঠন যে ওই কেন্দ্রগুলি দেখভাল করত, তা মেনে নিয়েছেন উদয়নারায়ণপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক চন্দ্রলেখা বাগ। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “সমীরবাবুর অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আয়ব্যয়ে কোনও গরমিল নেই।” আয়ব্যয়ের অস্বচ্ছতার অভিযোগ মানেননি স্মৃতিভূষণবাবুও।
কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা যে সমস্যায় পড়েছে, তা মেনে নিয়েছে উদয়নারায়ণপুরের বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রী। তাদের মধ্যে মানশ্রী গয়ারাম হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সঞ্চয়িতা মণ্ডল বলে, “আমার কানে একটু সমস্যা রয়েছে। কয়েক বার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। কিন্তু ওই কেন্দ্র থেকে আর্থিক সাহায্য না মেলায় চিকিত্সা এখনও শেষ করতে পারিনি।”
উদয়নারায়ণপুর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সুবিনয় রায় বলে, “এক সময়ে অসুখ হলে অনেক বার ওই কেন্দ্রে থেকে ওষুধ নিয়েছি। আমাদের এখন বেশি খরচ করে অন্যত্র ডাক্তার দেখাতে হয়।” কেন্দ্রটি দ্রুত চালু করার দাবি তুলেছে তারা।