বাস্তবের দুনিয়ার তাবড় অপরাধ হোক বা গোয়েন্দা গল্পের রোমাঞ্চকর কাহিনি, সই বা হাতের লেখার উপর ভিত্তি করে অপরাধীকে ধরে ফেলছেন পুলিশ বা গোয়ন্দা— এ দৃশ্য আমাদের অপরিচিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের প্রতিটি মানুষের হাতের লেখা আলাদা। আর গ্রাফোলজিস্টদের মতে, এর সূত্র ধরেই বুঝে যাওয়া সম্ভব, কে কেমন মনের মানুষ!
গ্রাফোলজি, এই বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে মানবচরিত্র নির্ণয়ের এই পদ্ধতিতে অংশ নেবেন নাকি? জেনে নিন, আপনার সই করার পদ্ধতি ও হাতের লেখা কী ইঙ্গিত করছে আপনার সম্পর্কে।
সই করার সময় কি কেবল নিজের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে তার পর পদবী লেখেন? বিশেষজ্ঞ অ্যানেট পয়েনজারের মতে, এমনটা যাঁরা করেন, তাঁরা আসলে জীবনে গোপনীয়তাকে গুরুত্ব দেন। ব্যক্তিগত জীবন ও নিজের পরিচয় গোপন রাখতে ভালবাসেন বলেই এমনটা করেন তাঁরা।
আপনার হাতের লেখায় প্রতিটি অক্ষরের ক্ষেত্রেই কি কোণ তৈরি হয়? একঝলক দেখলে মনে হয়, লেখার টানে প্রতিটি অক্ষরই নানা ভাবে জ্যামিতিক কোণের জন্ম দিয়েছে। এমন হলে সেই মানুষ বুদ্ধিমান ও তাঁর বিশ্লেষণী ক্ষমতা অন্য সকলের চেয়ে বেশি বলে মনে করছে হাতের লেখার বিজ্ঞান।
অনেকের লেখায় গোল গোল আকার থাকে বেশি। প্রতিটি অক্ষরের মধ্যেই একটা বৃত্তাকার টান থাকে। মন দিয়ে খেয়াল করলে বোঝা যায়, গোল বড় অক্ষরগুলির মাঝে ছোট অক্ষরগুলি যেন গুটিসুটি মেরে রয়েছে। এমন লেখার মালিকরা আসলে নিরাপত্তাহীণতায় ভোগেন, আত্মরক্ষার দিকে থাকে তাঁদের কড়া নজর। তবে এঁরা খুব আবেগী হন।
ইংরেজিতে কিছু লেখার সময় বেশির ভাগ সময় সব বড় হাতের অক্ষরই ব্যবহার করতে ভালবাসেন? তা হলে আপনি নির্ঘাৎ স্বাধীনচেতা। যে কোনও সিদ্ধান্ত নিজে নিতেই ভালবাসেন। বিশ্ব বিখ্যাত কমিক চরিত্র ‘দ্য সিম্পসন’-এর স্রষ্টা ম্যাট গ্রোয়েনিংয়ের হাতের লেখাও ঠিক এমনটাই। স্বাধীনচেতা মানুষ হিসাবে তাঁরও কম পরিচিতি নেই!
এক এক সময় এক এক রকম হাতের লেখায় লেখেন আপনি? অক্ষরের গঠন, মাপ, আকার সবই বদলে বদলে যায়? কখনও হয়তো সোজা লিখছন, কখনও আবার বেঁকিয়ে! এমন করলে সেই মানুষ বেজায় মুডি এবং তাঁদের আবেগের নানা বাঁক আছে। সেই প্রভাবই পড়ে হাতের লেখায়। তবে বেঁকিয়ে লেখা ও লেখার পংক্তি ক্রমে উপরের দিকে উঠে গেলে আপনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
পয়েজনারের মতে, কোনও কোনও মানুষ আবার এমন ভাবে লেখেন যেখানে অক্ষরগুলো অনেকটা কুঁচকে আছে বলে মনে হয়। মানসিক চাপে থাকাই এমন লেখার লক্ষণ। কিছু মানুষ স্বভাবজাত ভাবেই টেনশনে ভোগেন, সাধারণত, তাঁদের লেখাই এমন হয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
পাতা বা পেনের উপর কতটা চাপ দিয়ে লেখেন, তাও নির্ধারণ করে আপনার ব্যক্তিত্ব। গ্রাফোলজিস্টদের মতে, তুলনায় বেশি সংবেদনশীল মনের অধিকারী হলে, লেখার সময় পাতার উপর কম চাপ দেন তিনি। যে কোনও আবেগতাড়িত বিষয়ে এঁরা বেশি জড়িয়ে পড়েন। পেনের উপরেও যেন চাপ দিতে কষ্টই হয় এঁদের!
খুব ফাঁক রেখে লেখেন কি? লেখার সময় প্রতিটি শব্দ ও অক্ষরের মধ্যে যদি বেশি ফাঁক রাখেন কেউ, তা হলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা একটু কঠিন বিষয়। চার পাশের সঙ্গে একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতেই তিনি ভালবাসেন। ব্যক্তিগত স্পেস নিয়েও তিনি ওয়াকিবহাল। আবার কম ফাঁক রাখলে তাঁর সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ সম্ভব ও তিনি খুব মিশুকে হন।
খুব খুদে খুদে হাতের লেখায় লেখেন অনেকে। খুঁটিয়ে না পড়লে বোঝাই দুষ্কর কী লিখেছেন, তেমন মানুষরা ব্যক্তিগত জীবনে খুবই অন্তর্মুখী হন। নিজেদের সব কিছু হাট করে কারও সঙ্গেই মিশতে পছন্দ করেন না তাঁরা। তাঁদের মনঃসংযোগও অন্যদের চেয়ে বেশি হয়।
বড় বড় অক্ষরে লেখেন কি? গ্রাফোলজির যুক্তিতে তা হলে আপনি আলাদা করে মনোযোগ চাইছেন অন্যের। শুধু তা-ই নয়, বড় বড় হাতের লেখার অধিকারীরা নিজেদের মত সম্পর্কেও খুব সচেতন, এবং তা ঘন ঘন পাল্টান না। বরং যে কোনও ঘটনায় তাঁদের মতামত খুব ব্যতিক্রমী উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।
একেবারে বইয়ের পাতায় ছাপা অক্ষরের মতোই আপনার লেখা? তা হলে কিন্তু আপনি মানুষটা বেশ গতানুগতিক ধারণায় বিশ্বাসী। খুব নিয়মানুবর্তী ও সব কাজেই পারফেক্ট থাকতে পছন্দ করেন।
কোনও কোনও মানুষ বেশ জড়িয়ে লেখেন ও লেখার মাঝে বার বার কাটাকুটি করেন। সেই কাটার কায়দাও বেশ ছবির আকারে। এমন হাতের লেখার মানুষ সৃজনশীল না হযে যান না। মনের মধ্যে সব সময়ই এক শিল্পীসত্ত্বা পোষণ করেন তিনি। উদাহরণ? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! ছবি: শাটারস্টক ও পিক্সঅ্যাবে।