পোলিও-মুক্ত ভারতকে মডেল করতে চায় হু

দু’লক্ষ থেকে শূন্য। অনেক বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আসার পরে ভারতকে গোটা বিশ্বের কাছে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। যেখানে একটা সময়ে বছরে প্রায় দু’লক্ষ পোলিও আক্রান্তের সন্ধান মিলত, সেখানে এখন এক জনও নেই। কী ভাবে একটা দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তার নজির হিসেবে পোলিও-মুক্ত ভারতকে অন্যান্য দেশের সামনে তুলে ধরা হবে। রবিবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে এই সেরার শিরোপাই পেল ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এবং নিজস্ব অননুকরণীয় ভঙ্গিতে ‘দো বুন্দ জিন্দেগি কা’-র স্লোগানে যিনি পোলিওর প্রচারকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন সেই অমিতাভ বচ্চনও ছিলেন অনুষ্ঠানে।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:২২
Share:

দু’লক্ষ থেকে শূন্য। অনেক বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আসার পরে ভারতকে গোটা বিশ্বের কাছে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। যেখানে একটা সময়ে বছরে প্রায় দু’লক্ষ পোলিও আক্রান্তের সন্ধান মিলত, সেখানে এখন এক জনও নেই। কী ভাবে একটা দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তার নজির হিসেবে পোলিও-মুক্ত ভারতকে অন্যান্য দেশের সামনে তুলে ধরা হবে। রবিবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে এই সেরার শিরোপাই পেল ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এবং নিজস্ব অননুকরণীয় ভঙ্গিতে ‘দো বুন্দ জিন্দেগি কা’-র স্লোগানে যিনি পোলিওর প্রচারকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন সেই অমিতাভ বচ্চনও ছিলেন অনুষ্ঠানে।

Advertisement

২০১১-র ১৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় খোঁজ মেলা ২ বছরের মেয়ে রুকসার খাতুন ছিল এ দেশে পোলিওর শেষ নজির। তার পরে আর পোলিও আক্রান্তের হদিস পাওয়া যায়নি। পর পর তিন বছর কোনও দেশে পোলিও-আক্রান্তের হদিস না মিললে সেই দেশকে পোলিও-মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গত মার্চে আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তার পরে নানা নিয়ম পেরিয়ে এ দিন ভারতের সাফল্যের উদ্যাপন হল দিল্লিতে।

হু-র ভারতীয় প্রতিনিধি নাতা মেনাবদের মতে, “পোলিও নির্মূলের ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য গোটা পৃথিবীর কাছে অনুকরণীয়।” ইউনিসেফের লুই জর্জেস আর্সেনলও বলেছেন, “একটা সভ্যতার অগ্রগতি থমকে দিতে পারে পোলিও। কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, ভারত তা দেখিয়েছে।” হু, ইউনিসেফ ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কর্তাদের পাশাপাশি এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্বাস্থ্যকর্মীরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায় এঁরা সকলেই পোলিও-মুক্ত ভারত গড়ার কাজে এক এক জন সৈনিক। বস্তুত, ভারতের ‘পোলিও-মুক্ত’ শিরোপা যাতে অটুট থাকে, সে জন্য ইতিমধ্যেই নানা কর্মসূচি নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সব রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে ডাকতে চলেছেন হর্ষবর্ধন। তৈরি হয়েছে বিশেষ বাহিনীও, যার কাজই হল পোলিও কর্মসূচীর উপরে নিরন্তর নজরদারি।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এ দিন বলেন, “২৩টা দেশ এক সময়ে পোলিও-মুক্ত হয়েও ফের আক্রান্ত হয়েছে। তাই আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ নেই। রাজনৈতিক রঙের তোয়াক্কা না করে সমস্ত রাজ্যকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।” স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, সিরিয়ার মতো সাতটি পোলিও আক্রান্ত দেশ থেকে এ দেশে আসার আগে প্রতিষেধক নিয়ে আসা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কিছু কড়া পদক্ষেপও করা হবে।

গত আট বছর ধরে পোলিওর প্রচার করছেন অমিতাভ বচ্চন। ইউনিসেফের ‘গুডউইল অ্যাম্বাসাডর’ হিসেবে আট বছরের সফরের কথা বলতে গিয়ে এ দিন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, “সিনেমায় আমি রেগে থাকি, তাতে গুন্ডারা শায়েস্তা হয়। আমাকে বলা হয়েছিল, পোলিও প্রচারেও যেন আমার সেই রাগটা থাকে। তাই আমি একটা প্রচারে বেশ ধমক দিয়ে পোলিও খাওয়াতে বললাম। আর তাতে ম্যাজিকের মতো কাজ হল। আমি রাগলে যদি ভারত পোলিও-মুক্ত হয়, তা হলে আমি সব সময়ে রেগে থাকতে রাজি আছি!”

এ দেশে ১৯৯৫ সালে ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন চালু হয়। ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তখন বছরে প্রায় ২ লক্ষ পোলিও-আক্রান্তের হদিস মিলত। সেখান থেকে কমতে কমতে সংখ্যাটা এখন শূন্যে এসে ঠেকেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা জানালেন, বিহার ও উত্তরপ্রদেশকে নিয়ে ভয়টা বেশি ছিল। এমনকী পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য কর্তারাও জানিয়েছেন, এ রাজ্যে যে পোলিও-আক্রান্তদের সন্ধান মিলত, তাদের একটা বড় অংশই ওই দুই রাজ্য থেকে আসা।

দেশের সর্বশেষ পোলিও আক্রান্তের হদিস যেহেতু মিলেছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকেই। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষকর্তা রবিবার জানান, পোলিওর দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা হিসেবে তাঁরা রাজ্যের ৯টি জেলার ১১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ১০০টি পুরসভা অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছিলেন। তার মধ্যে কলকাতাও ছিল। ওই কর্তা এ দিন বলেন, “তিন বছর পোলিও পাওয়া না গেলেও আমরা কাজে ঢিলে দিচ্ছি না। যে সব জায়গায় পোলিও খাওয়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ছিল, সেখানেও আমরা নিরন্তর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement