প্রতীকী ছবি।
সায়ন্তনীর আজ জন্মদিনের পার্টি। বাড়িতে প্রচুর অতিথি আসবেন। কেক কাটা হবে, খাওয়াদাওয়া হবে। বাবা-মা খুবই খোসমেজাজে রয়েছেন। কিন্তু পাঁচ বছরের সায়ন্তনীর মন মোটেই ভাল নেই। এত লোক তার পছন্দ নয়। সকলে এসে গাল টিপবে, কথা বলতে চাইবে, পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস করবে— এ সব পছন্দ নয় তার। কিন্তু সে বুঝতেই পারে না, বাবা-মা তা-ও জোর করে কেন তাকে সকলের সঙ্গে কথা বলতে বলে।
সায়ন্তনীর মতো আরও অনেক বাচ্চাই রয়েছে যারা কিছুতেই অন্যদের সঙ্গে মিশতে পারে না। একটু লাজুক প্রকৃতির। তাদের বন্ধুবান্ধবও কম। করোনাকালে অনলাইনে ক্লাসের যুগে সেই সমস্যা বেড়েছে আরও কিছুটা। কোনও অসুবিধা হলে তারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারে। পড়াশোনা বাদে অন্য কোনও বিষয়ে তাদের উৎসাহ নেই। কারণ এক্সট্রা কারিক্যুলার অ্যাক্টিভিটির ক্লাসে আরও নতুন লোকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাই তারা নিজের মতো একটা জগৎ তৈরি করে সেখানেই থাকতে পছন্দ করে।
কিন্তু বাবা মায়েদেরও এই নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। বাকি বাচ্চাদের তুলনায় তাঁদের সন্তান সব বিষয়ে পিছিয়ে পড়ছে, এই ভয়ে তাড়া করে বেড়ায় তাঁদের। যে কারণে একটু বেশি বকাঝকাও করে ফেলেন তাঁরা। তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উল্টো ফল হয়। লাজুক বাচ্চাদের বাবা-মা হিসেবে কী করবেন?
কোনও ছকে বেঁধে দেবেন না
আমার সন্তান খুব লাজুক— এই কথাটা ওর সামনে বারবার বলবেন না। তাহলে ছোটরাও সেটা বিশ্বাস করে হীনমন্যতায় ভুগবে। অন্য কেউও যদি সেটা করেন, আপনি বাধা দেবেন। কেউ যদি বলে, ‘আসলে ছেলেটা খুব লাজুক’, আপনি শুধরে দিয়ে বলবেন, ‘না লাজুক নয়, আজ কম কথা বলছে’।
প্রতীকী ছবি
ওকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেবেন না
কোথাও গেলে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে, সন্তানকে উত্তর দেওয়ার সময় দিন। যারা একটু লাজুক প্রকৃতির হয়, তারা নতুন লোকেদের কথার উত্তর চট করে দিতে পারে না। কিন্তু আপনি অপেক্ষা করে দেখুন, আপনার সন্তান কিছু বলছে কি না। যদি দেখেন ওর খুবই সমস্যা হচ্ছে, তাহলে বাড়িতে অবসর সময় নতুন মানুষদের সঙ্গে পরিচয় হলে যে ধরনের কথোপকথন হতে পারে, তা বাচ্চার সঙ্গে বলুন। খেলার ছলে প্র্যাকটিস করান।
ওর প্রকৃতি মেনে নিন
সব বাচ্চারা সমান হয় না। সকলের বেড়ে ওঠাও এক রকম হবে না। কিন্তু সেটা কোনও খামতি নয়, এটা বিশ্বাস করুন। কেউ লাজুক মানেই জীবনের সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে এমন নয়। বরং যা আপনার সন্তান করতে ভালবাসে, সেদিকে নজর দিন। ওকে উৎসাহ দিন সব রকম কাজেই। নিজের জগতে থাকতে দিন। এতে তাঁদের কল্পনাশক্তি বাড়বে।
অনুষ্ঠানবাড়িতে একটু আগে পৌঁছোন
নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে আপনার সন্তানের সমস্যা হলে নতুন কোনও জায়াগায় যাওয়ার আগে তাকে সেই সম্পর্ক গল্প বলুন। কোনও পার্টিতে যাওয়ার হলে, যাওয়ার আগে সন্তানকে বলুন কাদের বাড়ি যাচ্ছেন, কারা আসবেন, কী হবে, কখন ফিরবেন— এগুলি আগে থেকে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করে নিন। অনুষ্ঠান শুরুর সামান্য আগে পৌঁছে যান। যাতে সে একটু সময় পায় মানিয়ে নেওয়ার।