—প্রতীকী ছবি।
খাবার থেকে বিষক্রিয়া এবং সেখান থেকে মৃত্যু। এমন ঘটনা নতুন নয়। পুজোর প্রসাদ, মিড ডে মিলের খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হওয়ার খবর মেলে প্রায়ই। চিকিৎসকেরা বলছেন, কাঁচা বা আধসেদ্ধ মাছ, ডিম বা মাংস থেকে স্যালমোনেল্লা ব্যাক্টেরিয়া, না ফোটানো দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার থেকে লিস্টেরিয়ার মতো ব্যাক্টেরিয়া হানা দিতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে প্রায় প্রতি দিনই খেতে হয় এমন একটি খাবার, যা থেকেও যে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, তা হয়তো জানেন না অনেকেই। আগের দিনের বেঁচে যাওয়া ভাত পরের দিন গরম করে খাওয়া হয় অনেক বাড়িতেই। ভাত রান্না করার পর তা সঠিক তাপমাত্রায়, সঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করলে তার মধ্যে ব্যাসিলাস সেরেয়াস নামক ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। সেই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে যে রোগ হয়, তা-ই ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম নামে পরিচিত।
ভাত রান্না করার পর তা সঠিক তাপমাত্রায়, সঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করলে তার মধ্যে ব্যাসিলাস সেরেয়াস নামক ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। ছবি: সংগৃহীত।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষক কেথ আর স্কেনেইডার বলছেন, “ব্যাসিলাস সেরেয়াস হল এমন একগুচ্ছ ব্যাক্টেরিয়া, যাকে ধ্বংস করা কঠিন। রান্না করার সময়ে সঠিক তাপমাত্রা পেলেই এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়া আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু তা-ই নয়, সংখ্যায় তড়িৎগতিতে বাড়তে থাকে। খাবারের মধ্যে দিয়ে তা পেটে গেলে ব্যাক্টেরিয়া থেকে নির্গত টক্সিনের ফলে সমস্যা শুরু হয়।” তবে কেথ বলছেন, খাবার সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে, সঠিক তাপমাত্রায় রাখলে এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। খাবার ভাল করে গরম করলে বা ফুটিয়ে নিলেও এই ব্যাক্টেরিয়াকে পুরোপুরি মেরে ফেলা যায় না।
কী কী উপসর্গ দেখলে বুঝবেন এই ব্যাক্টেরিয়া আক্রমণ করেছে?
১) বমি
কোনও খাবার থেকে ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে ১ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে একাধিক বার বমি হতে দেখা যায়। বাসি ভাত বা ভাত দিয়ে তৈরি খাবার থেকে কোনও ভাবে সংক্রামিত হলে বমি হবেই।
২) ডায়েরিয়া
ব্যাসিলাস সেরেয়াস নামক ব্যাক্টেরিয়াটি শরীরে প্রবেশ করার পর ওই ব্যক্তির গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইন ট্র্যাকের ভিতর বাসা বাঁধে। সেখানে বিষক্রিয়া শুরু করে। ফলে অন্ত্রেও সংক্রমণ শুরু হয়। একাধিক বার জলের মতো মলত্যাগ করেন রোগী।
৩) পেটব্যথা
অতিরিক্ত বমি এবং মলত্যাগের কারণে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যেতে থাকে। জলের অভাবে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। পেটের পেশির দ্রুত সঙ্কোচন-প্রসারণের ফলে যন্ত্রণা হতে শুরু করে। সঙ্গে কারও কারও সারা শরীরেও ব্যথা লক্ষ করা যায়।
এই ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায় কী?
১) বেঁচে যাওয়া খাবার বেশি ক্ষণ বাইরে ফেলে রাখা যাবে না। বিশেষ করে ভ্যাপসা আবহাওয়া এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়া উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে তাদের বিষক্রিয়ার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২) দুপুরবেলা ভাত খেয়ে বেঁচে যাওয়া ভাতটুকু রাইসবোলের মধ্যে তুলে রেখে দিলেন। পাত্রটি মাইক্রোওয়েভ প্রুফ হলে সেই সমেত গরমও করে নেন অনেকে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, খাবার সুরক্ষিত রাখতে হলে কাচের, বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করাই ভাল। রান্না করা ভাত ফ্রিজে তোলার আগে দেখে নেওয়া জরুরি যে তা পুরোপুরি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এসেছে কি না।
৩) বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করা থেকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখা— সবই করেছেন। তার পরেও যদি মনের কোথাও সন্দেহ থাকে, সে ক্ষেত্রে খাবারের প্রতি মায়া না রেখে চোখ বন্ধ করে তা ফেলে দিন।