Heat Stroke

Heat Stroke: হিট স্ট্রোক হলে জল খাওয়ানো নয়, বলছেন ডাক্তারেরা

কয়েক দিন ধরেই চল্লিশ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই গরমে কার্যত পুড়ে খাক গোটা শহর। বৈশাখের এই দহন-জ্বালা থেকে মুক্তি কী ভাবে ও কবে, তা এখনও অজানা।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৫০
Share:

আরাম: মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে স্বস্তির খোঁজে এক ট্যাক্সিচালক। বুধবার, ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কয়েক দিন ধরেই চল্লিশ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই গরমে কার্যত পুড়ে খাক গোটা শহর। বৈশাখের এই দহন-জ্বালা থেকে মুক্তি কী ভাবে ও কবে, তা এখনও অজানা। কিন্তু পেশার তাগিদে বহু মানুষকে ভরদুপুরের গনগনে রোদেও বাইরেই থাকতে হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে মারাত্মক প্রাণঘাতী সমস্যা— ‘হিট স্ট্রোক’।

Advertisement

অনেক সময়েই দেখা যায়, পথেই অসুস্থ বোধ করায় কেউ বসে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। কেউ আবার পুরোপুরি জ্ঞান না হারালেও, শরীর অসম্ভব দুর্বল মনে হওয়ায় উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পান না। শরীরে অসম্ভব অস্থিরতা শুরু হয়, কারও শুরু হয় বমি, খিঁচুনি। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, সে সময়ে তাঁর কী হয়েছে, কী করতে হবে— সে নিয়ে চর্চা এবং বিষয়টি লক্ষ্য করতে করতেই বেশ কিছুটা মূল্যবান সময় কেটে যায়। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও হয়তো দেখা যায়, ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু ঘটেছে। আসলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্তকে অবিলম্বে প্রাথমিক কী শুশ্রূষা দেওয়া প্রয়োজন— তা অনেকের কাছেই অজানা।

এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সঠিক চিকিৎসা না পেলে ২৫-৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু এড়ানো যায় না। কিন্তু প্রাথমিক যে চিকিৎসাটুকু দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিলে কাউকে বাঁচানো সম্ভব, সেটা জানা প্রয়োজন। কারণ কিছু ক্ষেত্রে ভুল পদক্ষেপ বড় বিপদ ডেকে আনে।’’ যেমন, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে অনেক সময়েই তাঁকে জল খাওয়ানো হয় বা সেই চেষ্টা করা হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি ভুল পদ্ধতি। কারণ রোগীর তখন ভাল ভাবে জ্ঞান থাকে না, ফলে শ্বাসনালিতে জল ঢুকে দম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

Advertisement

মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে যে থার্মোস্ট্যাট রয়েছে, তার মাধ্যমেই দেহের তাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। দেহতাপ স্বাভাবিক ভাবে ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। গরম এবং ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা কতটা কমবে বা বাড়বে, তা নিয়ন্ত্রণ করে হাইপোথ্যালামাস। যেমন, প্রচণ্ড ঠান্ডায় শরীরের ত্বক কুঁচকে যায়, রক্তনালির সঙ্কোচন হয়, লোম খাড়া হয়ে যায়। ফলে শরীরের ভিতরের তাপ বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া হ্রাস পায়। আবার প্রচণ্ড গরমে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয়ে যায়, তাতে ঘাম বেরিয়ে শরীরের ভিতরের তাপকে বেরোতে সাহায্য করে। কিন্তু হিট স্ট্রোকে বাইরের অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে প্রথমেই বিকল হয় হাইপোথ্যালামাস। তাতে দেহতাপ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়ে ঘাম নিঃসরণও বন্ধ হয়ে যায়।

তা হলে জ্বরের সময়ে শরীরের তাপমাত্রা অনেক বাড়লেও সমস্যা হয় না কেন? চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘জ্বরে থার্মোস্ট্যাট ঠিক থাকায় সে শরীরকে বার্তা দেয়, কী করতে হবে। তাই প্রচন্ড জ্বর উঠলেও এক সময়ে হাত-পায়ে ঘাম দিয়ে শরীর ঠান্ডা
হয়।’’ আর হিট স্ট্রোকে ঘাম নিঃসরণ বন্ধ হয়ে দেহতাপ হু-হু করে বাড়তে থাকে। তাই আক্রান্তকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই কয়েকটি প্রাথমিক শুশ্রূষা দেওয়া প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্যের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি বলছেন, ‘‘হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলি ভাল করে বুঝতে হবে। সর্বোপরি আক্রান্তের শরীর প্রচণ্ড তেতে থাকলেও কোনও ঘাম থাকবে না। সকলেই অজ্ঞান হবেন, এমন নয়। শরীরে মারাত্মক অস্থিরতা, খিঁচুনি হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই ঠান্ডা জল দিয়ে শরীরের বাইরের অংশকে দ্রুত শীতল করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।’’

মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, দেহতাপ বেড়ে গেলে প্রোটিন নষ্ট হয়ে শরীরে ক্ষতিকারক পদার্থ তার প্রভাব দেখাতে শুরু করে। তাতে হার্ট, কিডনি ও মস্তিষ্ক কাজ করতে না পেরে বিকল হয়। তিনি বলেন, ‘‘ত্বকের রক্ত সঞ্চালনকে ঠিক রাখতে হার্টকে মিনিটে ৮ লিটার জল বার করতে হয়। কারণ ধমনীগুলি ফুলে না উঠলে তাপও বেরবে না। কিন্তু মিনিটে এত লিটার জল বার করার চেষ্টা চালাতে গিয়ে এক সময়ে হার্ট বিকল হয়। মস্তিষ্ক ও কিডনি সর্বত্রই রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়।’’

আরও একটি সমস্যা হল ‘হিট এগ্‌জ়শন’। অরিন্দম বলেন, ‘‘এর প্রধান লক্ষণ হল তীব্র ঘাম। সেই সঙ্গে মাথা ঘুরতে থাকা, গা-বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, অসম্ভব ক্লান্তি। সেক্ষেত্রে ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে গিয়ে বগলে, কুঁচকিতে বরফ দিলে সব থেকে ভাল। তবে এতে মৃত্যু হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement