আর কয়েক দিন পরেই দুর্গা পুজো।
আর কয়েক দিন পরেই দুর্গা পুজো। সিঁদুর খেলা নিয়ে বাঙালির আবেগে ভাসার লেই লময়ের ঠিক আগে সিঁদুর নিয়ে আশঙ্কার কথা শোনালেন গবেষকরা। নিউ জার্সির পিসকাটাওয়ের রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রিত অধিকাংশ সিঁদুরেই মাত্রাতিরিক্ত লেডের পরিমাণ ডেকে আনতে পারে নানা শারীরিক সমস্যা।
বিবাহিত হিন্দু মহিলারা নিয়মিত ভাবে ব্যবহার করেন সিঁদুর। সিঁথি ছাড়াও কপালে সিঁদুরের টিপও পরেন বয়স্ক মহিলারা। যে কোনও পুজোর সময় সিঁদুরের টিকা দেওয়ার রেওয়াজও অন্যতম। তাই সিঁদুরকে আরও আকর্ষণীয় লাল রং দিতে লেড টেট্রক্সাইড ব্যবহার করে অনেক সিঁদুর প্রস্তুতকারক সংস্থা।
এই গবেষণায় ব্যবহৃত ১১৮টি সিঁদুরের নমুনার মধ্যে ৯৫টিই এসেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির বিভিন্ন দক্ষিণ এশীয় দোকান থেকে। ২৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল মুম্বই, দিল্লি-সহ ভারতের বিভিন্ন শহরের দোকানগুলো থেকে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ সিঁদুরেই লেডের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। যার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ সিঁদুরে লেডের পরিমাণ ইউ ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নিরাপদ মাত্রার থেকে অনেকটাই বেশি।
আরও পড়ুন: নেল পলিশের রাসায়নিক মারাত্মক ক্ষতি করছে শরীরের!
এই গবেষণার মুখ্য গবেষক ডেরেক শেন্ডেল বলেন, সিসাযুক্ত বিষাক্ত কোনও প্রডাক্ট যে শুধু ব্যবহারকারীর একার ক্ষতি করে তাই নয়, শ্বাসের সঙ্গে সিসা শরীরে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত নমুনার ৮৩ শতাংশ ও ভারত থেকে সংগৃহীত নমুনার ৭৮ শতাংশের মধ্যেই প্রতি ১ গ্রাম সিঁদুরে ১ মাইক্রোগ্রাম সিসা পাওয়া গিয়েছে। লেডের মধ্যে ক্ষতিকারক পদার্থের কোনও সুরক্ষা মাত্রা হয় না। এই পদার্থ কোনও ভাবেই আমাদের শরীরের সংস্পর্শে আসা উচিত নয়। বিশেষ করে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সিসা খুবই ক্ষতিকারক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুযায়ী, সিসা খুব কম মাত্রা শরীরে পৌঁছলেও তা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সিসা থেকে হওয়া ক্ষতি কোনও ভাবেই সারানো সম্ভব নয়। তাই ক্ষতি হওয়ার আগেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: প্রেগন্যান্সিতে ওয়্যাক্সিং করাতে হলে সাবধান থাকুন
এইডিএ-র মাত্রা অনুযায়ী, প্রতি গ্রাম কসমেটিকসে ২০ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা থাকলে তা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত নমুনার ১৯ শতাংশ ও ভারত থেকে সংগৃহীত নমুনার ৪৩ শতাংশের মধ্যেই লেডের পরিমাণ এই মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এমনকী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত তিনটি ও ভারত থেকে সংগৃহীত দু’টি নমুনার মধ্যে দেখা গিয়েছে এক গ্রাম কসমেটিকসে ১০ হাজার মাইক্রোগ্রামের থেকেও বেশি সিসা রয়েছে।
২০০৭ সালে ইলিনয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের একটি গবেষণার রিপোর্টের পর লেডের মাত্রা বেশি থাকার জন্য সিঁদুর নিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল এফডিএ। বেশ কিছু ব্র্যান্ডের কাজলের মধ্যেও মাত্রাতিরিক্ত লেডের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আমেরিকান জার্নাল অব পাবলিক হেলথ-এও সিঁদুর নিয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।