ব্রেডের রকমফের

বাঙালির খাবারের অনেকটা অংশ সিদ্ধ আর আতপ চালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এক এক জন বেছে নেন এক এক ধরনের চাল। কারও সুগন্ধ ভাল লাগে, কারও বা লম্বা দানা। ঠিক যেমন চালের নানা ধরন, তেমনই ব্রেডেরও আছে রকমারি বাহার। কিন্তু কোনটা কী? স্বাদই বা কেমন? 

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৫
Share:

শরীরের খেয়াল নিতে তাই অনেকেই বর্জন করছেন হোয়াইট ব্রেড

তিতির অফিস থেকে ফেরার পথে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বাজার সারে। কিন্তু ব্রেড সেকশনে গিয়ে বাহারি সব নামের জালে জড়িয়ে নাস্তানাবুদ তিতির। বুঝে উঠতে পারে না, কোন পাউরুটি নেওয়া উচিত।

Advertisement

বাঙালির খাবারের অনেকটা অংশ সিদ্ধ আর আতপ চালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এক এক জন বেছে নেন এক এক ধরনের চাল। কারও সুগন্ধ ভাল লাগে, কারও বা লম্বা দানা। ঠিক যেমন চালের নানা ধরন, তেমনই ব্রেডেরও আছে রকমারি বাহার। কিন্তু কোনটা কী? স্বাদই বা কেমন?

ব্রেডের নানা দিক

Advertisement

সকালে মাখন লাগানো দু’পিস ব্রেড। সঙ্গে ফল, ডিম সিদ্ধ। এর চেয়ে চটজলদি প্রাতরাশ খুব কমই আছে। আবার বাচ্চাকে টিফিনে স্যান্ডউইচ, টোস্ট দিলে সুবিধেই হয়। পেট ভরা থাকে, স্বাস্থ্যও রক্ষা হয়। ব্রেডের নানা ধরনের মধ্যে হোয়াইট ব্রেড প্রচলিত হলেও ইদানীং বাড়ছে অন্যান্য ব্রেডের চাহিদাও। তার প্রধান কারণ স্বাস্থ্য। শরীরের খেয়াল নিতে তাই অনেকেই বর্জন করছেন হোয়াইট ব্রেড। এই পাউরুটিতে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা অনেক বেশি। কিন্তু তা বাদ দিলে পরিবর্তে কী ধরনের ব্রেড খেতে পারেন? এখানেই আসছে হোলগ্রেন, মাল্টিগ্রেন, হোলমিল, সাওয়ারডো ইত্যাদি নানা পাউরুটির বিকল্প।

ঠিক যেমন চালের নানা ধরন, তেমনই ব্রেডেরও আছে রকমারি বাহার।

হোলগ্রেন ব্রেড

সাধারণত দানাশস্যের বেশ কয়েকটি ভাগ থাকে— ব্র্যান বা বাইরের স্তর, এন্ডোস্পার্ম বা ভিতরের স্টার্চ স্তর এবং জার্ম অর্থাৎ দানার ভিতরের মূল অংশ। হোলগ্রেন ব্রেডের ক্ষেত্রে যে কোনও দানাশস্যের সব অংশই ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ছেঁটে বাদ যায় না কোনও কিছুই।

হোলগ্রেন ব্রেডে কার্বোহাইড্রেট থাকলেও রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল। তাই যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁরা যেমন হোলগ্রেন ব্রেড খেতে পারেন, তেমনই ডায়াবিটিক রোগীরাও খেতে পারেন এটি। যাঁরা লো কার্ব ডায়েট মেনে চলতে চান, তাঁরাও স্বচ্ছন্দে খেতে পারেন হোলগ্রেন ব্রেড। এই পাউরুটিতে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা শরীরের জন্য ভাল। এ ছাড়াও তিন ধরনের ফাইবার থাকায় হজম, পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। হোলগ্রেন ব্রেড তৈরি হতে পারে গম, বার্লি, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, কিনোয়া, রাই, ওট্‌স... সব দিয়েই।

হোলমিল ব্রেড

হোলমিল ও হোলগ্রেন ব্যাপারটা একই। শুধু একটি পার্থক্য রয়েছে। হোলগ্রেন ফ্লাওয়ার সাধারণত আধভাঙা হয়। কিন্তু সেই তুলনায় হোলমিল অনেক মিহি হয়। বাদামি রঙের হোলমিল ফ্লাওয়ারে স্বাভাবিক ভাবেই সাদা ময়দার চাইতে অনেক বেশি ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। শরীরের জন্যও ভাল হোলমিল ব্রেড। রোজকার খাবারে তাই হোলগ্রেন ব্রেড বা হোলমিল ব্রেড... বেছে নেওয়া যায় যে কোনও কিছু। শুরু থেকেই বাচ্চাদের হোলগ্রেন বা হোলমিল ব্রেড খাওয়ানোর অভ্যেস করালে হজমের সমস্যা সাধারণত হয় না। হোলগ্রেনের চাইতে হোলমিল ব্রেড বাচ্চারা হজম করতে পারে সহজে। এই ব্রেড খেয়ে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

মাল্টিগ্রেন ব্রেড

মাল্টিগ্রেন শব্দটা থেকেই আন্দাজ করা যায় এর অর্থ। সাদা ময়দার সঙ্গে অন্যান্য দানাশস্য মিলিয়ে তৈরি হয় মাল্টিগ্রেন ফ্লাওয়ার। নানা শস্য থাকায় মাল্টিগ্রেন ব্রেডের ফাইবারের পরিমাণও অনেক বেশি। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন কিংবা ওজন কমানো বা ওজন ধরে রাখতে চান যাঁরা, তাঁরা স্বচ্ছন্দে খেতে পারেন মাল্টিগ্রেন ব্রেড।

রাই ব্রেড

রাই থেকে তৈরি পাউরুটির টেক্সচার অন্যান্য ব্রেডের তুলনায় ভারী হয়। ফলে ছোট টুকরোতেই পেট ভর্তি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হোলগ্রেন রাই ব্রেডে থাকে অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার। এটি এমনিতেই শরীরের জন্য ভাল। সাদা ময়দার পাউরুটি রিফাইন্ড বা ছাঁটা হয় বলে পুষ্টিগুণ বেরিয়ে যায়।

সাওয়ারডো, গ্লুটেনফ্রি ও ফডম্যাপ

সাওয়ারডো ব্রেড তৈরি হয় মণ্ডকে ফারমেন্ট করে। স্টার্টারের সাহায্য নিয়ে তৈরি করা এই জাতীয় ব্রেডে অ্যাসিডিক অংশ বেশি। ফলে যাঁরা হজমের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের সহ্য না-ও হতে পারে সাওয়ারডো। তবে সাওয়ারডো ব্রেডের কদর কিন্তু পাউরুটির ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ বেশি।

এ ছাড়াও অনেকেই পাউরুটি খেলেই হজমের সমস্যা, পেটখারাপে ভোগেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ব্রেডে থাকা গ্লুটেনই এই সমস্যার কারণ। কিন্তু তাঁরাও যাতে ব্রেডের স্বাদ নিতে পারেন, তার জন্য ইদানীং তৈরি করা হয় গ্লুটেনফ্রি ব্রেড। তাই পেটখারাপের সমস্যা থাকলে স্বচ্ছন্দে খেতে পারেন গ্লুটেনফ্রি। এমনকি আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের সমস্যায় ভুগতে থাকা মানুষদের জন্যও তৈরি হয়েছে অন্য ধরনের ফডম্যাপ ব্রেড। ময়দা, গ্লুটেন ছাড়া তৈরি এই ব্রেড তাঁরা খেতেই পারেন।

প্রসঙ্গ জিআই

জিআই বা গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এক ধরনের একক। পরিমাপ করা হয় শূন্য থেকে ১০০-র মধ্যে। কোনও খাবার খাওয়ার মোটামুটি দু’ঘণ্টা পরে রক্তে শর্করার পরিমাণের হেরফের হয়। জিআই মাত্রা নির্ধারণ করে কোনও খাবারে কী ধরনের আর কত পরিমাণে শর্করা রয়েছে। যেমন হোলগ্রেন ব্রেড, সাওয়ারডো ব্রেড, সয় ব্রেডে জিআই মাত্রা কম। হোলমিল ব্রেডে এর মাত্রা মাঝারি। সবচেয়ে বেশি জিআই থাকে সাদা ব্রেডে।

তা হলে সহজে অনুমেয় যে, সাদা ব্রেডের তুলনায় হোলগ্রেন, হোলমিল, মাল্টিগ্রেন ব্রেড এমনিতেই বেশি ভাল। এগুলি বেশ সুস্বাদুও। তবে যে ধরনের ব্রেডই খাদ্যতালিকায় রাখুন, কেনার আগে অবশ্যই দেখে নিন তার উপকরণ, কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ও এক্সপায়ারি ডেট। তা হলে যেমন স্বাস্থ্যরক্ষা হবে, তেমনই রসনাও হবে তৃপ্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement