মিত্রবিন্দা বেশ কয়েক মাস ধরেই হেভি ব্লিডিংয়ের সমস্যায় ভুগছিলেন। পরীক্ষানিরীক্ষার পরে ধরা পড়ে ফাইব্রয়েডের কারণে এমনটা হচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ফাইব্রয়েড অপারেশন হয় এবং মিরেনা ইনসার্ট করা হয় তাঁর ইউটেরাসে। তার পর অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি। কিন্তু মাস ছয়েক পর থেকে পিরিয়ডসও বন্ধ, অথচ তিনি সবে চল্লিশের গোড়ায়। চিন্তার ছায়া ঘনায়। সব কিছু ঠিক আছে তো? না, এতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অ্যাডভান্সড ল্যাপরোস্কোপিক সার্জন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি স্পেশ্যালিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে দিলেন।
মিরেনা আসলে কী
মিরেনা কয়েল আসলে প্লাস্টিকের একটি টি শেপের ডিভাইস (ইনট্রাইউটেরাইন সিস্টেম বা আইইউএস), যাতে রয়েছে প্রজেস্টেরন হরমোন লিভোনরজেস্ট্রল। এটি ব্যবহার করা হয় কনট্রাসেপশনের একটি পদ্ধতি হিসেবে, পিরিয়ডসের সময়ে অতিরিক্ত রক্তপাতের চিকিৎসায় এবং মেনোপজ়ের সময়ে ইউটেরাসের লাইনিংকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া বা সম্পূর্ণ অ্যানাস্থেশিয়ার মাধ্যমে মিরেনা প্রবেশ করানো হয় জরায়ুতে।
চিকিৎসা
অতিরিক্ত রক্তপাতে: মিরেনা গর্ভাশয়ের লাইনিংয়ের মাসিক বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে, যাতে প্রতি মাসে কম ব্লিডিং হয়। ফাইব্রয়েডের কারণে যে সব মহিলা অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যায় ভোগেন, মিরেনা ব্যবহারের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে তাঁদের মেনস্ট্রুয়াল ফ্লো অনেকটাই কমে গিয়েছে আবার কিছু মহিলার ক্ষেত্রে মিরেনা ইনসার্ট করানোর পর পিরিয়ডস পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। মিরেনা পরে থাকাকালীন গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা থাকে না, এটি স্বাভাবিক কনট্রাসেপটিভ হিসেবে কাজ করে। অধিকাংশ মহিলাই হিস্টেরেকটমি করাতে ইতস্তত বোধ করেন। সে ক্ষেত্রে মিরেনা অনেক সহজ সমাধান। এর ফলে পিরিয়ডসের ব্যথাও স্বাভাবিক ভাবেই অনেক কমে যায়। এটির কারণে প্রি মেনস্ট্রুয়াল উপসর্গও কমে যায়। ফাইব্রয়েডসও কমতে দেখা গিয়েছে।
কনট্রাসেপশন হিসেবে: ঋতুচক্র শুরু হওয়ার সাত দিনের মধ্যে মিরেনা কয়েল ইনসার্ট করা হলে, সঙ্গে সঙ্গে তা গর্ভধারণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এটি সার্ভিকাল মিউকাস-কে পুরু করে তোলে ফলে স্পার্মের এগ পর্যন্ত পৌঁছনো কঠিন হয়। এবং প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা থাকে না। আবার কোনও কোনও মহিলার ক্ষেত্রে ওভারি থেকে ডিম্বাণু নিষ্ক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি সন্তানকে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর সময়কালেও বহু মহিলা মিরেনার সাহায্য নেন। মিরেনার সবচেয়ে বড় সুবিধে হল, কোনও মহিলা যদি মা হতে চান, তা হলে মিরেনা বার করে নিলেই তিনি আবার মা হতে পারবেন।
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিতে: মিরেনা ইনসার্ট করা হলে মেনোপজ়ের সময়ে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোন শরীরে উৎপন্ন হয় না। এ ছাড়াও মিরেনা গর্ভাশয়ের লাইনিংয়ের অতিরিক্ত পুরু হয়ে যাওয়াকে রুখে দেয়। কোনও মহিলা যদি মেনোপজ়াল সিম্পটমসের মধ্য দিয়ে যান, তা হলে চিকিৎকেরা অনেক সময়ে ইস্ট্রোজেন (অন্য আর একটি হরমোন) নেওয়ার পরামর্শ দেন।
সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মিরেনা অনুপ্রবেশের প্রথম তিন সপ্তাহ থেকে ছ’মাস পর্যন্ত হঠাৎ হঠাৎ অল্পসল্প ব্লিডিং হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে মাস কয়েক হালকা স্পটিংও হতে পারে। কিন্তু তার পর পিরিয়ডস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে কারও কারও স্পটিং চলতে পারে। মিরেনা ইনসার্ট করার পরে প্রথম কয়েক মাসে ওজন বেড়ে যাওয়া, ঘুমঘুম ভাব, মাথা ব্যথা, অ্যাকনে হওয়া বেড়ে যাওয়া, মুড বদলানো ইত্যাদি কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন কেউ কেউ। প্রোজেস্টেরন হরমোন নির্ভর চিকিৎসায় এগুলো খুব সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। মিরেনা পরার পরও তা দেখা দিতে পারে, তবে ক্রমশ তার মাত্রা কমতে থাকে। তবে এই সাধারণ সাইড এফেক্ট ছাড়াও খুবই কম কিছু ক্ষেত্রে আরও কিছু জটিল সমস্যা দেখা গিয়েছে যেমন— ওভারিতে সিস্ট, তলপেটে ব্যথা, পা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়া, ডিপ্রেশন, অতিরিক্ত ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ। এ ধরনের কোনও সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে গাইনিকলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
কত দিন পর্যন্ত মিরেনা রাখা যেতে পারে?
আইইউএস পাঁচ বছর পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। মিরেনা কয়েল বার করে নিলে যদি আপনার পুরনো সমস্যা ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে কিংবা গর্ভনিরোধক হিসেবে এটি ব্যবহার করেন, তা হলে চিকিৎসকই যথাসময়ে আপনাকে জানিয়ে দেবেন কখন পুরনো কয়েলটি বদলে ফেলা প্রয়োজন। যদি কখনও অতিরিক্ত রক্তপাত শুরু হয়, তা হলে আগে দেখে নেবেন মিরেনা আদৌ ঠিক জায়গায় আছে কি না।