নামীদামি
কলম দিয়ে সই করা বা স্রেফ নিজের বুকপকেটে সাজিয়ে রাখা— এমন অভ্যেস আমাদের অনেকের
রয়েছে। কিন্তু আঁকা? শিশু-কিশোরদের জন্য এমন বিভিন্ন কলম এখন
পাওয়া যায়, যা দিয়ে খুব সুন্দর রং করা যায়। যেমন:
-
ফ্লোটিং ইঙ্ক মার্কার: রংবেরঙের ছবি, তা-ও আবার
ভাসমান! শিশুদের জন্য খুবই কাজের এই ফ্লোটিং ইঙ্ক মার্কার পেন। এতে এমন এক
ধরনের কালি থাকে, যা
জলের সঙ্গে মিশে যায় না। ফলে শিশুদের ইচ্ছেমতো বানানো আঁকাগুলি সহজেই জলে
ভেসে থাকে।
এমন ছবি
বানাতে, প্রথমে একটি পাত্রে জল নিতে হবে। এর পর, একটি চামচের (সেরামিকের হলে সবচেয়ে ভাল) উল্টো দিকে কিছু এঁকে নিন। কয়েক
সেকেন্ড অপেক্ষা করে উল্টো অবস্থাতেই চামচটা জলের পাত্রে ডুবিয়ে দিন। আপনার বানানো
ছবিটি চামচ থেকে উঠে বেরিয়ে আসবে জলের উপরে। এই পেনের সাহায্যে খুদেদের অক্ষর
পরিচয়ও সহজ ভাবে করা যায়। শেখার পদ্ধতিতে অভিনবত্ব থাকায় শিশুরা তা উপভোগ করে বেশ।
-
ব্লো/স্প্রে পেন: এয়ারব্রাশ পদ্ধতি
ব্যবহারে এই কলমের জুড়ি মেলা ভার। ব্লো পেন দিয়ে রং করতে কাগজ থেকে অন্তত ৮
সেন্টিমিটার দূরে রেখে ফুঁ দিতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি কাগজের উপরে স্টেনসিল
বা কোনও ছাপ রেখে ফুঁ দেওয়া হয়। তা হলে ইচ্ছেমতো ডিজ়াইনটি ফুটে উঠবে।
গ্লিটার রং বা ‘কালার চেঞ্জিং’ কালিও ব্যবহার করা যায়। ব্লো পেন ব্যবহারের
সময়ে অনেক ক্ষেত্রে গায়ে বা জামায় রং লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাই অ্যাপ্রন পরা
যেতে পারে।
-
মার্কার: স্কেচ পেন, মার্কার ব্যবহারে
অনেকেই সঙ্কোচ বোধ করেন। রং কেমন হবে, কাগজে ছোপ ফেলবে কি না, এমন নানা চিন্তা
ঘুরপাক খায় মনের মধ্যে। বিশেষত, খুদের ক্লাসের প্রজেক্টে বা আঁকার
প্রতিযোগিতায় মার্কার পেন ব্যবহার করতে দিতে চান না বহু অভিভাবক। তবে এমন
অনেক মার্কার পেন পাওয়া যায়, যা সহজেই ব্যবহার করা সম্ভব। যেমন ডুয়াল
টিপ, ব্রাশ
টিপ, চিজ়েল
টিপ, ফাইন
টিপ, বুলেট
টিপ মার্কার ইত্যাদি। কালিতেও, ‘অ্যালকোহল বেসড’ বা ‘ওয়াটার বেসড’
মার্কারের মধ্যে বেছে নেওয়া যায়।
-
ব্রাশ পেন: এক স্ট্রোকেই
বাজিমাত করতে চাইলে ব্রাশ পেনের ব্যবহার করতেই হয়। পেনগুলির টিপ অনেকটা সরু
রং তুলির মতো হয়। তাই তা দিয়ে সহজেই স্কেচ, ক্যালিগ্রাফি, কমিক আর্ট বানানো
সম্ভব। আঁকার সময়ে অবশ্য খেয়াল রাখা জরুরি, এই কলমের উপরে যত চাপ পড়বে, কাগজে ততই কালি
পড়বে। মার্কার পেপার, ওয়াটারকালার
পেপার বা ব্রিসটোল বোর্ডের উপরে এই ধরনের পেন সবচেয়ে ভাল কাজ করে।
-
ফাইন লাইনার পেন: একটু সূক্ষ্ম
স্কেচ বা টেকনিক্যাল ছবি। এমন কাজের জন্য লাগে সরু টিপ-যুক্ত কলম। ফাইন
লাইনার কলম এ ক্ষেত্রে উপযোগী। শিল্পীদের মতে, ০.৫ মিলিমিটার টিপের কলম সবচেয়ে কাজের।
তবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে পছন্দ মতো টিপ বেছে নেওয়াই যায়। জল লাগলেও এই পেনের
কালি ঘেঁটে যায় না।
-
গ্লাস ডিপ পেন: কাচের তৈরি এই
কলমের ভিতরে কোনও রিফিলের জায়গা নেই। বরং রয়েছে কাচের সরু ডাঁটির মাথায় একটি
খাঁজকাটা সরু নিব। এর বৈশিষ্ট্য হল যে, কালিতে ডুবিয়ে দিলে নিবের খাঁজে বেশ
কিছু পরিমাণ কালি থেকে যায়। তা ব্যবহারেই লেখা-আঁকা বানানো যায়।
এই কলম
ব্যবহারে মনে রাখবেন, গ্লাস পেনের নিবগুলি ব্যবহারের সঙ্গে ধার
হারাতে থাকে। তখন কালি পরিষ্কার করে নিয়ে নিবটি স্যান্ড পেপারে ঘষে নেওয়া যায়।
কিন্তু কোনও ভাবেই যেন বেশি চাপ না পড়ে এই কলমের উপরে। তা হলে নিব ভেঙে যেতে
পারে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)