দোল খেলুন খাঁটি ভেষজ রঙে, বানিয়ে নিতে পারেন বাড়িতেই। ফাইল চিত্র।
এসে গেল রঙের উৎসব। লাল-নীল-হলুদ-সবুজ নানা রঙে রঙিন হয়ে ওঠার পরব। দোল উৎসবকে ঘিরে আনন্দে মাতোয়ারা ছোটরা। প্রকৃতিও যেন সেজে উঠেছে শিমুল, পলাশ-রঙে। বাজারে এখন থেকেই নানা রং ও আবিরের ছড়াছড়ি। বসন্তোৎসব যে হেতু রঙিন হয়ে ওঠার দিন, তাই রং নিয়ে সাবধান তো থাকতেই হবে। রাসায়নিকে ঠাসা লাল-কালো-নীল বাঁদুরে রঙে শরীরের ক্ষতি। তাই প্রকৃতির রং দিয়ে দোল খেলতে বলছেন পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে চিকিৎসক সকলেই। সাধারণ রঙের চেয়ে ভেষজ রঙের দাম অনেকটাই বেশি। তাই সকলেই যে ভেষজ আবির কিনছেন তা নয়। আর দোকানে যে বিভিন্ন সংস্থার ভেষজ আবির বিক্রি হচ্ছে, তার সব ক’টিই যে খাঁটি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি তা না-ও হতে পারে।
ভেষজ রং কী?
প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি রং। এই সব রঙের মূল উপাদান বিভিন্ন গাছের পাতা, ফুলের পাপড়ি, ফলের রস বা সব্জি বাটা। ভেষজ রঙের জন্যে হলুদ, বিট, কালো আঙুর আমলকি, জবা গাছের কচি পাতা ও ফুল, পুদিনাপাতা, পালংশাক, লাল চন্দন কাঠ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ময়দার সঙ্গে এই সব ভেষজ রং মিশিয়ে দোলের রং তৈরি করা হয়। এই রং থেকে ত্বক বা চোখের ক্ষতি হয় না। ভেষজ আবির ছোটদের জন্যও নিরাপদ। সাধারণ রঙের রাসায়নিক অ্যালার্জির সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে, হাঁপানির ঝুঁকিও বাড়ায়। কিন্তু খাঁটি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ভেষজ আবিরে তেমনটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
কোথায় পাবেন ভেষজ রং?
গত কয়েক বছর ধরেই রঙের বাজারে চাহিদা বেড়েছে ভেষজ আবিরের। এখন অনলাইনেও পাওয়া যায় এমন রং ও আবির। তবে দাম একটু চড়াই। সাধারণ আবির যেখানে ১০০ গ্রাম ৫ থেকে ১০ টাকা, সেখানে ওই পরিমাণ ভেষজ আবিরের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি। তবে বাজারে এখন ভেষজ আবিরের বদলে ভেজাল আবিরও বিক্রি হচ্ছে। তাই কেনার আগে দেখে কিনতে হবে। তার চেয়ে ভেষজ রং বাড়িতে বানিয়ে নেওয়াই ভাল।
বাড়িতে কী ভাবে বানাবেন?
যত খুশি রং মাখুন, কিন্তু রঙের উৎসব সুরক্ষিতও হওয়া চাই। তাই রং বানিয়ে নিন বাড়িতেই। শিশু ও বয়স্কেরা থাকলে বাড়িতে তৈরি ভেষজ রঙে শরীরের কোনও ক্ষতি হবে না। কী ভাবে বানাবেন জেনে নিন।
হলুদ রং
১) নামী কোম্পানির হলুদগুঁড়োর সঙ্গে বেসন মিশিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন হলুদ আবির।
২) গাঁদা ফুলের পাপড়ি শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিলেও হলুদ রং পাওয়া যাবে।
৩) একটি বাটিতে এক কাপের মতো জল গরম করে তাতে ২ চা চামচ হলুদগুঁড়ো মিশিয়ে দিন। এ বার আধ কাপ ঠান্ডা জলে এক চামচ কর্নফ্লাওয়ার বা চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়ে সেটি হলুদ জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিন। ভাল করে নেড়ে মিশ্রণটি রোদে রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে দিব্যি হলুদ রং হয়ে যাবে। সুগন্ধের জন্য এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে দিতে পারেন।
সামান্য উপকরণেই বানানো যাবে ভেষজ রং। ছবি: ফ্রিপিক।
সবুজ রং
১) পালংশাক আর পুদিনাপাতা বেটে নিয়ে, ছেঁকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে সবুজ রং।
২) পালংশাক বেটে নিন। এ বার সেই মিশ্রণটি ভাল করে ছেঁকে নিয়ে গোলাপজলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। তরল মিশ্রণটি বড় ট্রে-তে রেখে এক কাপ কর্নফ্লাওয়ার ভাল করে মিশিয়ে নিন, যাতে কোনও মণ্ড না থাকে। এ বার মিশ্রণটি ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তার পর হাত দিয়ে গুঁড়ো করে নিলেই সুন্দর সবুজ রঙের আবির তৈরি হয়ে যাবে।
নীল রং
অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি সারা রাত গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন জলটা ছেঁকে নিলেই সুন্দর নীল রং তৈরি হয়ে যাবে।
গোলাপি রং
বিটের রস তৈরি করে ভাল করে ছেঁকে নিন। এক কাপ বিটের রস নিয়ে তাতে এক চামচ গোলাপজল মেশান। এ বার একটি বড় ট্রে-তে রেখে তাতে এক চা চামচ ভর্তি করে কর্নফ্লাওয়ার বা চালের গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। ভাল করে মেশাতে হবে। তার পর সেটি রোদে রেখে শুকিয়ে নিন। হাত দিয়ে গুঁড়ো করে নিলে গোলাপি আবির তৈরি হয়ে যাবে।
লাল রং
১) লাল চন্দনের গুঁড়োর সঙ্গে সম পরিমাণে ময়দা মিশিয়ে লাল আবির বানানো যেতে পারে।
২) জবাফুলের পাপড়ি শুকিয়ে নিতে হবে। এ বার তার সঙ্গে লাল চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। এই মিশ্রণের সঙ্গে সম পরিমাণে বেসন মিশিয়ে দিলেই ভেষজ লাল আবির তৈরি হয়ে যাবে।
বাদামি রং
মেহন্দি পাতা, আমলকি ও হলুদগুঁড়ো একসঙ্গে মেশালেই সুন্দর বাদামি রং তৈরি হয়ে যাবে।
কমলা রং
কমলালেবুর খোসা ভাল করে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এ বার তার সঙ্গে দু’চামচ কর্নফ্লাওয়ার বা চালের গুঁড়ো অথবা বেসন মিশিয়ে নিতে পারেন। এ বার সামান্য হলুদগুঁড়ো মেশালেই তৈরি হয়ে যাবে ভেষজ কমলা রং।