মোগল সম্রাটদের রাজত্বকালে ভারতে নানা ধরনের বাহারি পদের আবির্ভাব ঘটে। কবাব-বিরিয়ানি তো বটেই, এ ছাড়াও সে সময় থেকে জনপ্রিয় হয়েছিল মোগলাই পরোটা। এক সময় কলকাতার প্রতিটি পাড়ার দোকানেই এই পদটি পাওয়া গেলেও এখন অবশ্য হাতেগোনা দোকানেই এই পদের হদিস মেলে।
তুরস্কের খাবার ‘গোজ়েলমে’র সঙ্গে মোগলাই পরোটার বেশ মিল রয়েছে। শোনা যায়, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের প্রিয় রাঁধুনি আদিল হাফিজ় উসমান সম্রাটের জন্য প্রথম এই পদটি তৈরি করেন। এই রাঁধুনি কিন্তু ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের বাসিন্দা।
এককালে কিন্তু মোগলাই পরোটার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। তবে এখন স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই তেলে ভাজা মাংস-ডিমের পুর ভরা এই পরোটা খেতে নারাজ। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরোটা পাওয়া যায় তেমন দোকানের সংখ্যাও কমেছে।
অনেকেই আবার দাবি করেন, পছন্দ হলেও এখন ভাল মোগলাই পরোটা পাওয়া যায়, এমন দোকানের বড় অভাব। দোকানদারেরা বলেন, মোগলাই বানাতে পারেন, এমন কারিগর এখন আর পাওয়া যায় না। রইল এমন কয়েকটি দোকানের সন্ধান, যেখানকার মোগলাইয়ের স্বাদ ভোলার নয়।
অনাদি কেবিন: ধর্মতলার মোড়ে এই দোকানটি মোগলাই পরোটার জন্য বিখ্যাত। এই দোকান প্রায় ১০০ বছরের পুরনো। এক সময় কেবল হাঁসের ডিম দিয়েই এই দোকানে মোগলাই পরোটা বানানো হত। এখন অবশ্য মুরগির ডিম ঢুকে পড়েছে তাদের হেঁশেলে।
অনাদি কেবিনের মোগলাই পরোটার সঙ্গে আলুর তরকারি, স্যালাড, সস্ পাওয়া গেলেও এখানকার মটন কষার সঙ্গে মোগলাই পরোটা চেখে দেখতে পারেন। খেতে বেশ লাগে। তবে স্বাস্থ্য সচেতন হলে কিন্তু সাবধান! এখানকার মোগলাই পরোটার দাম শুরু হয় ৯০ টাকা থেকে।
আপনজন: মুখরোচক খাবারের জন্য দক্ষিণ কলকাতার এই দোকানটি বেশ জনপ্রিয়। আপনজনের ফিশ ফ্রাই, মটন শিঙাড়া, ডিমের ডেভিলের নামডাক সবচেয়ে হলেও এখানকার মোগলাই পরোটার স্বাদও কিন্তু বেশ ভাল।
আপনজনে মুরগি, মটন ও মাছের পুর ভরা মোগলাই পরোটা পাওয়া যায়। ভেটকি মাছের পুর দিয়ে তৈরি মোগলাই শহরে সহজলভ্য নয়। সাধারণ মোগলাইয়ের দাম ১৫০ টাকা হলেও মাছের মোগলাইয়ের দাম কিন্তু ১৭০ টাকা।
ধীরেন কেবিন: উত্তর কলকাতায় শোভাবাজার এলাকায় এই দোকানটি বেশ জনপ্রিয়। বিকেল থেকেই এই দোকানে ভিড় চোখে পড়ার মতো। ভাল মোগলাই খেতে হলে কিন্তু এই দোকানে ঢুঁ মারতেই পারেন।
ধীরেন কেবিন দোকানটিও কিন্তু বেশ পুরনো। ছোট এই দোকানের মোগলাই পরোটার সঙ্গে কষা মটন নেওয়া কিন্তু মাস্ট! তবে মোগলাই ছাড়াও এখানকার ফিশ পকোড়া, ফিশ কাটলেট খেতেও পছন্দ করেন মানুষ। এখানকার মোগলাই পরোটার দাম প্রায় ১০০ টাকার কাছাকাছি।
পূর্বাণী রেস্তরাঁ: গড়িয়াহাটের পূর্বাণী রেস্তরাঁ বেশ পুরনো একটি কেবিন। গড়িয়াহাটে কেনাকাটা করতে গেলে এক বার এই রেস্তরাঁ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এখানকার মোগলাই পরোটার স্বাদ বেশ ভাল।
আলুর শুকনো তরকারির সঙ্গে এখানে মোগলাই পরিবেশন করা হয়। এখানকার মোগলাই পরোটার মধ্যে থাকে মুরগির ডিম আর সব্জির পুর। দাম ১৬০ টাকা। তবে এখানকার মোগলাই খেতে এতটাই ভাল যে, মোগলাইয়ের সঙ্গে খাবার জন্য কোনও গ্রেভি পদের প্রয়োজন হয় না।
ওরিয়েন্টাল রেস্তরাঁ: চিৎপুরের নতুন বাজারের এই কেবিনের মোগলাইয়ের স্বাদ এক বার চেখে দেখতেই পারেন। এখানকার মটন কষার সঙ্গে মোগলাইয়ের যুগলবন্দির স্বাদ ভোলার নয়।
নরম তুলতুলে মাংসের সঙ্গে এখানকার মুচমুচে মোগলাই পরোটা খেতে অনেক দূর থেকে মানুষ এসে ভিড় করেন। মোগলাই খাবেন, অথচ পেটও ভার হবে না, তা হলে কিন্তু এক বার এই ঠিকানায় ঢুঁ মারতেই হবে।
মিত্র ক্যাফে: ১৯১০ সাল থেকে শোভাবাজারে এই দোকানের রমরমা। পরবর্তী কালে অবশ্য অনেক জায়গায় এই দোকানের শাখা খুলেছে। ভাল মোগলাই পরোটা খেতে হলে এই দোকান থেকে এক বার ঘুরে আসতেই পারেন।
ঝাল ঝাল আলুর দম, কাসুন্দি, স্যালাডের সঙ্গে এখানে এক প্লেট চিকেন মোগলাইয়ের দাম প্রায় ১২০ টাকা আর মটন মোগলাইয়ের দাম প্রায় ২০০ টাকা। কাটলেট, চপ, কবিরাজির পাশাপাশি এখানকার মোগলাইয়ের স্বাদও কিন্তু বেশ ভাল।
দাস কেবিন: গড়িয়াহাটে কেনাকাটা করতে গিয়ে হালকা খিদে পেলে ঢুঁ মারতে পারেন এই কেবিনে। এখানকার ফিশ ফ্রাই, কবিরাজি ছাড়াও মোগলাই পরোটার স্বাদ বেশ ভাল।
এখানকার মোগলাই পরোটাটির বাইরের দিকটি মুচমুচে আর ভিতরে থাকে পেঁয়াজ, লঙ্কা আর ডিমের পুর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এই কেবিনের বসার জায়গা খুব বেশি না হলেও এখানকার খাবারের স্বাদের জন্য দোকানের বাইরে লম্বা লাইন চোখে পড়ে সব সময়। মোগলাইয়ের পর এখানকার কুলফি-ফালুদার স্বাদ নিতে ভুলবেন না যেন।