দাঁত নিয়ে ভুগছেন এ দেশের বেশির ভাগই, কারণটা কী? ছবি: ফ্রিপিক।
দাঁত নিয়ে ভোগেননি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। ওই যে কথায় বলে না, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না। ঠিক তা-ই। শরীরে রোগ থাকুক বা না থাকুক, কমবেশি সকলেই নির্দিষ্ট দেখভালের মধ্যে থাকেন। চিকিৎসকের পরামর্শও মেনে চলেন। একমাত্র দাঁতে ব্যথা বা কোনও সমস্যা না হলে কেউ যেচে দাঁত দেখাতে কখনওই যান না। আর এখানেই সমস্যা। দাঁত বা মাড়িতে সংক্রমণ, দন্তক্ষয়, ক্যাভিটির সমস্যা ভোগায়। সমীক্ষা বলছে, গড়ে ৫৪ শতাংশ ভারতীয় ভুগছেন দাঁতের সমস্যায়। আর দাঁতের রোগ একা আসে না, আরও নানা রোগকে নিমন্ত্রণ করে আনে।
দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ'-এর জার্নাল 'পাব মেড'-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে অন্তত ৬২ শতাংশের দাঁতের রোগ রয়েছে, ৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় ভুগছে কম করেও ৫২ শতাংশ।
প্রধানত দাঁতে দুই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। দাঁতের ক্ষয়জনিত রোগ এবং মাড়ির সমস্যা। দাঁতের ক্ষয় মূলত মিষ্টি জাতীয় খাবার দাঁতে জমে থাকার ফলে হয়। তাতে ব্যাক্টেরিয়া জন্মে অ্যাসিড তৈরি করে এবং দাঁতের উপরের এনামেলের স্তর ক্ষয়ে যেতে থাকে। এনামেলে্র ক্ষতি হলে স্নায়ু উন্মুক্ত হয়ে যায়। দাঁত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। পরে সেটি ক্যাভিটি বা গর্তে পরিণত হয়। আর ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার না করলে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল পান না করলে মাড়ির সমস্যা দেখা দেয়।
এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অফ অ্যালঝাইমার্স ডিজ়িজ়’-এ। সেখানে গবেষকেরা লিখেছেন, দাঁতের রোগ থেকে পরবর্তীতে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। শুধু তা-ই নয়, দন্তক্ষয় থেকে ‘ব্রেন ডিজ়অর্ডার’-এর আশঙ্কাও থাকে। মাড়ি বা দাঁতের সংক্রমণের যদি চিকিৎসা ঠিক মতো না হয়, তা হলে এর থেকে অ্যালঝাইমার্স হওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
দাঁতের রোগ থেকে বাঁচতে কী করণীয়?
প্রতি ছ’মাসে এক বার দাঁত দেখিয়ে নেওয়া ভাল। সে ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে গোড়াতেই তার প্রতিকার করা যাবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতি ছ’মাসে এক বার করে স্কেলিং করিয়ে নিলে ভাল। স্কেলিং হল দাঁত পরিষ্কার করা। আগে হাতে করা হত। এখন মেশিনের সাহায্য করা হয়।
প্রতিদিন দু’বার দু’মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে এবং রাতে খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে।
শিশুর দাঁতের এনামেলের আবরণ পাতলা হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করাতে পারেন। ফ্লোরাইড দাঁতকে শক্ত ও মজবুত করে তোলে।
গুটখা, তামাক জাতীয় জিনিস দীর্ঘ দিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত খেলেও এনামেল ক্ষয়ে যেতে পারে। ঠান্ডা পানীয়, কেক-পেস্ট্রি, চকোলেট বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলেও দাঁতের সমস্যা বেশি হতে পারে।
ছোটদের ক্ষেত্রে নানা জিনিস মুখে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। তাদের দুধের দাঁত উঠলেই যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। বার বার কুলকুচি করাতে হবে।
দাঁত ভাল রাখতে অপ্রয়োজনে মেডিকেটেড টুথপেস্ট ব্যবহার না করাই শ্রেয়। ওই ধরনের টুথপেস্টেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।
দাঁতে ব্যথা হলেও যন্ত্রণা কমানোর ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। এতে ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হবে দাঁতে। দাঁতের জন্য কী ব্যবহার করবেন, কতটা করবেন, তা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করাই ভাল।