Baby Food

শুরুটা মোটেই শক্ত নয়

জন্মের পরে প্রথম ছ’মাস পেরিয়ে যেতেই বেশির ভাগ শিশু শক্ত খাবার খাওয়ার জন্য কমবেশি প্রস্তুত হয়ে যায়। দাঁত বেরোনোর সময় এগিয়ে আসায় এই সময় থেকেই তাকে চিবিয়ে খেতে শেখানো শুরু করা দরকার।

Advertisement

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫৬
Share:
A Photograph of a baby eating

ছ’মাসের পর থেকে ধীরে ধীরে শক্ত খাবার খাওয়ানো শেখানো উচিত শিশুকে প্রতীকী ছবি।

জন্মের পরে প্রথম ছ’মাস পেরিয়ে যেতেই বেশির ভাগ শিশু শক্ত খাবার খাওয়ার জন্য কমবেশি প্রস্তুত হয়ে যায়। দাঁত বেরোনোর সময় এগিয়ে আসায় এই সময় থেকেই তাকে চিবিয়ে খেতে শেখানো শুরু করা দরকার। এই বয়সে মায়ের বুকের দুধ কিংবা ফরমুলা মিল্ক একটি শিশুর প্রধান খাদ্য। তার পাশাপাশি দিনে তিন থেকে চার বার শক্ত খাবার তাকে দেওয়া দরকার। সলিড খাবার শুরু করার সময়ে প্রথমেই মনে রাখতে হবে, একসঙ্গে অনেক ধরনের খাবার দিয়ে শুরু করা চলবে না। এক-একটি খাবার বেশ কয়েক দিন খাইয়ে অভ্যস্ত করার পরেই পরেরটি দেওয়া উচিত। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষের কথায়, “একটি নতুন খাবার শুরু করার কমপক্ষে ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা পরে আর একটি নতুন খাবার দিতে হবে শিশুকে। ছ’মাস বয়সের পর থেকে একটু একটু করে সব ধরনের খাবারে, বিশেষ করে বাড়িতে যা রান্না হয়, তার সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচয় করাতে হবে শিশুকে।” প্রথম দিকে শিশুর বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়। এই সময়ে নতুন সব অভ্যেসের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতেও শেখে শিশু। তাই তার সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার সময়ও এটাই। ছ’মাস থেকে দু’বছর বয়স পর্যন্ত ছোটদের খাদ্যতালিকা তৈরির সময়ে কী কী মাথায় রাখবেন, জেনে নিন।

Advertisement

শুরুর সময়

একটি শিশুর গ্রোথ চার্ট ফলো করে তবেই ঠিক করা উচিত, কোন সময় থেকে সে শক্ত খাবার খেতে আরম্ভ করবে। অপূর্ব ঘোষ জানালেন, যদি কোনও বাচ্চার বৃদ্ধি আশানুরূপ না হয়, তা হলে অনেক সময়ে চার মাস বয়স থেকেও শুরু করে দেওয়া যেতে পারে সলিড খাবার। এ সময়ে মায়ের বুকের দুধ অথবা ফরমুলা এবং বাড়িতে তৈরি করা খাবারই হবে শিশুর খাদ্য। বাজারচলতি প্যাকেটজাত খাবার না দেওয়াই ভাল। অপূর্ব ঘোষ বললেন, ‘‘চাল-ডাল-আলু দিয়ে হালকা করে তৈরি খিচুড়ি সামান্য ঘি বা মাখন দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে শুরুতে। সুজি, দুধের সঙ্গে চালের গুঁড়ো সিদ্ধ করে মিশিয়ে, দুধের সঙ্গে রুটির পাতলা অংশ ভিজিয়েও খাওয়াতে পারেন। সাত-সাড়ে সাত মাস থেকে আমিষ শুরু করতে পারেন। জ্যান্ত চারা মাছ, ডিম, মুরগির মাংস সবই খেতে পারে একটি বাচ্চা। তবে সব একসঙ্গে শুরু করে দেবেন না। ডিম খাওয়ানো শুরু করার সময়ে কুসুম ও সাদা অংশ আলাদা করে শুরু করবেন। এক-একটি খাবার সইয়ে নিয়ে কয়েক দিন পরে নতুন আর একটি খাবার দিন।’’ সলিড খাবারের ফাঁকে ফাঁকে চাহিদা অনুযায়ী দুধ খাওয়ান শিশুকে।

Advertisement

অনেক শিশুই প্রথম ছ’মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বেড়ে ওঠে। জলও খায় না। তবে শক্ত খাবার শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তাকে জল খাওয়ানোও শুরু করতে হবে। ফরমুলা খেয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরা অবশ্য আগে থেকেই জল খেতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। জল ফুটিয়ে খাওয়ানোই ভাল।

খাবারের সুঅভ্যেস

মুসাম্বি লেবুর রস, আপেল সিদ্ধ বা কুরিয়ে, অ্যাভোকাডো পেস্ট করে, বেদানার রস, কাঁঠালি কলার মতো ফল দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে সব ধরনের মরসুমি ফল ও আনাজের সঙ্গেই পরিচয় করাতে হবে আপনার সন্তানকে। বাচ্চা একটু বড় হয়ে গেলে তার জন্য আলাদা করে রান্না করারও দরকার নেই। বাড়ির রান্না ডাল-ভাত-তরকারিই খেতে অভ্যস্ত হবে সে। শুধু তেল-মশলা-ঝাল বাদ দিয়ে। আর তরকারি বলতে শুধুই আলু নয়, তাতে যেন সবুজ আনাজ অবশ্যই থাকে। শিশু বসতে শিখলে বাড়ির বাকি সকলের সঙ্গে বসিয়ে তাকে খাওয়ান। বাড়ির বড়দের মতো তাকেও নিজে নিজে খেতে শেখানো, খাওয়ার সময়ে কোনও স্ক্রিন না দেখানো... এই বিষয়গুলিও একটি শিশুর ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আর খাওয়া শেষ হওয়ার অন্তত মিনিট পনেরো পরে জল খাওয়ান।

মায়েদের জন্য

কখনওই শিশুকে জোর করে খাওয়াবেন না। খাবার নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকাও ঠিক নয়। ৩০-৪৫ মিনিটের মধ্যে যতটা খাওয়ানোর খাইয়ে দিন। তার পরে আর নয়। খিদে পেলে সে আবার খেতে চাইবে।শিশুর ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পিছনে দরকার সম্যক ধারণা ও অনেকখানি ধৈর্য। তবেই শিশুর পুষ্টি হবে যথাযথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement