বয়স ৩০ পেরিয়েছে, অথচ জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস এখনও পাল্টাননি, এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। আধুনিক জীবনযাপনকর্মব্যস্ততার। আর এই ব্যস্ততার সিঁড়ি বেয়েই শরীরে উঠে আসছে নানা অসুখ। চিকিৎসকদের মতে, আমাদের দৈনিক কিছু অভ্যাসের কারণেই জন্ম নেয় বড়সড় অসুখ। বয়স ত্রিশ ছুঁলেই বিপদ এড়াতে কী কী স্বভাব বদলে ফেলতেই হবে, জানেন?
প্রতি দিনের রুটিনে শরীরচর্চা করার সময় রেখেছেন কি আদৌ? অফিস, পরিবার, নিজস্ব কাজ— সে সবের চাপ সামলে প্রায় কোনও সময়ই হাতে থাকছে না? কর্মব্যস্ততা ও ক্লান্তি থেকে বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু শরীরচর্চায় সময় দিতে পারেন না। এই অভ্যাস আপনারও থাকলে আজ থেকেই সচেতন হন। অন্তত এর জন্য দিনে কুড়ি মিনিট বরাদ্দ রাখুন।
বয়স অনুপাতে বিপাকক্রিয়ারও তারতম্য ঘটে। কোন বয়সের জন্য ঠিক কতটা বিপাকক্রিয়া নির্দিষ্ট, সে সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষেরই কোনও ধারণা নেই। অনেকেই ভাবেন, নিয়ম মেনে খাওয়া বা কঠোর ডায়েটই সুস্থ রাখবে। এ ধারণা আজই বদলান। চিকিৎসকের থেকে জেনে নিন আপনার বিপাক হার কী হওয়া উচিত। ঠিক কেমন ডায়েট করলে তা ভারসাম্য রক্ষা করবে।
সারা দিনে কত ক্ষণ বসে থাকেন সে হিসাব করেছেন কখনও? অনেককেই কাজের জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে কাজ করতে হয়। এমন রুটিন রোজ হলে সাবধান! উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি তো বটেই, এ ছাড়াও হাড় ও স্নায়ুর নানা সমস্যাও হানা দিতে পারে এই কারণে। তাই মাঝে মাঝে উঠুন। পায়চারি করে আসুন কিছুটা।
সহজে ওজন কমানোর ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন নাকি? অল্প দিনে অনেকটা ওজন কমানোর মতো অবৈজ্ঞানিক ডায়েটে নিজেকে বেঁধে ফেলে নিজের অনেক বড় ক্ষতি করছেন অজান্তেই। এতে ওজন কমলেও শরীরের বিপাকক্রিয়াকে নষ্ট করে ডেকে আনবে অনেক বড় অসুখ। তাই অল্প সময়ে অনেকটা ওজন কমানোর ভুল পদ্ধতিতে না গিযে নিয়ম মেনে ধীরে ধীরেই কমান ওজন।
কর্মব্যস্ততার জেরে বাড়িতে রান্নার পাট চুকিয়ে দেন অনেকেই। অনেক বাড়িতেই অন্তত একবেলার খাবার বাইরে থেকে আসে। সে হোম ডেলিভারিই হোক বা রেস্তরাঁ। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ গৌতম বরাটের মতে, ‘‘সিদ্ধ ভাত বা হালকা স্যালাড বানানোর সময় পান? তা হলে সেটাই করুন। বাইরের তেল-মশলায় অভ্যস্ত হলে লিভারের অসুখ কেউ ঠেকাতে পারবে না।’’
সারা দিন কাজের ফাঁকে জল খাওয়ার ঘাটতি হয়। অনেকেই সে ঘাটতি পূরণ করেন চা কফি ও কোল্ড ড্রিঙ্ক খেয়ে। এ স্বভাব আজই তাড়ান। ঘন ঘন চা-কফি-কোল্ড ড্রিঙ্ক শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ওবেসিটি, লিভারের অসুখ তো বটেই, এমনকি ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল ডেকে আনতেও এর জুড়ি নেই। জলের ঘাটতি মেটাতে বরং ডাবের জল, ডাল ইত্যাদি খান।
বাড়িতে শিশু থাকলে মায়েদের একটা প্রবণতাই থাকে বাচ্চার পাতে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট খেয়ে পেট ভরিয়ে নেওয়ার। এ অভ্যাস আপনারও থাকলে তা বদলান। একে তো কারও উচ্ছিষ্ট খাওয়াকেই চিকিৎসাবিজ্ঞান সমর্থন করে না। তার উপর এই অভ্যাসের জেরে নিজের জন্য পর্যাপ্ত খাবার আর আলাদা করে বানান না মায়েরা। এতে গ্যাস্ট্রিক-সহ নানা অসুখ বাড়ে।
কর্মব্যস্ততা ও নিজেকে অবহেলার জেরে ছোটখাটো নানা অসুবিধাকে প্রথম অবস্থায় পাত্তা দেন না অনেকেই। পরে তা সহ্যের অতীত হলে চিকিৎসকের কাছে দৌড়ন। তত দিনে অসুখ জাঁকিয়ে বসে। বরং প্রথম অবস্থাতেই যোগাযোগ করুন চিকিৎসকের সঙ্গে। এতে অসুখ রুখতে সুবিধা হয়।
অফিসের কাজ বাড়িতে আনা, সারা দিন অফিসের পরেও সারা ক্ষণ সে কাজেই মাথাকে ব্যস্ত রাখা, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার, সোশ্যাল সাইটে অতিরিক্ত উপস্থিতি ও মানসিক চাপে অনিদ্রা— এ সবই মধ্যবয়সীদের সাধারণ সমস্যা। সুস্থ থাকতে এ সব অভ্যাসে রাশ টানুন। বরং জীবনশৈলীর পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হন। ছবি: শাটারস্টক ও পিক্সঅ্যাবে।