— ফাইল চিত্র।
“আমার পোষ্যটি সন্তানসম”— আদৌ কি তাই? পোষ্যকে নিয়ে থাকার সময়ে কি এমন আবেগ যথাযথ কার্যকর হয়? তাই যদি হত, তা হলে চার দিকে পোষ্যকে ছেড়ে দেওয়ার এত ঘটনা কেন?
প্রায়ই দেখা যায়, গাড়ি করে পোষ্যকে এনে রাস্তার ধারে বেঁধে রেখে মালিককে চলে যেতে। কিংবা বস্তাবন্দি করে তাকে ছেড়ে রেখে আসা হয়েছে দূরে। পোষ্যের বয়স বাড়লে দত্তক নেওয়ার অনুরোধে ভরে যায় পশুদের নিয়ে কাজ করা পশু সংক্রান্ত সমাজমাধ্যমের গ্রুপগুলি।
একটি পোষ্যকে বাড়িতে আনার আগে যদি কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়া যায়, তা হলেই হয়তো এমন ঘটনা কমবে।
কী সচেতনতা?
১) শিশু অবস্থায় তার হাবভাব, ভঙ্গি এতটাই আদুরে থাকে যে বাড়ির মানুষের কাছে সে মনোরঞ্জনের কারণ হয়ে ওঠে। মনে রাখবেন, যখন সে বড় হবে, তখন তার ভাবভঙ্গির পরিবর্তন হবে। আপনার সন্তান যখন শৈশবে থাকে, তখন তার আদুরে কথা, অবুঝ কাজকর্ম চলতেই থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশ করতেই বদলে যায় আচরণ। সে তখন সবেতেই বিদ্রোহ করতে চায়, অবাধ্য হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তখন কী করেন আপনি? তাকে কি রেখে আসেন রাস্তার ধারে বা অন্য আশ্রয়ে?
পোষ্য আপনার সন্তানসম হলে, তার জীবনের ছোট্ট পরিসরে যখন সেই পরিবর্তনের ছায়া পড়ে, সে ক্ষেত্রে এমন আচরণ কেন? আসলে বুঝেই ওঠা হয়নি যে, পোষ্যটি আপনার সন্তানসম কোনও দিন ছিল না।
২) পোষ্য রাখার কিছু নিয়ম আছে। সন্তানের যেমন ঠিক সময়ে টিকাকরণ, বাড়িতে সহবত শেখানো, স্কুলে ভর্তি করা এবং তার শিক্ষার খরচ সামলানো ইত্যাদির নিঃশর্ত দায়িত্ব আমাদের থাকে, ঠিক তেমনই দায়িত্ব পোষ্যটির প্রতিও রাখতে হবে। তারও এগুলো প্রয়োজন। আপনি যদিসন্তানকে নিজে খাওয়া, যথাযথ জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করা, কথা বলার আদবকায়দা না শেখান, সে নিজে নিজে শিখবে না। পোষ্যটিরও বেড়ে ওঠার সময়ে এ সব কিছুতে নজর রাখতে হয়। সহাবস্থানের নিয়ম তাকে তার মতো করে বোঝাতে হয়। তা না করে যদি আপনি ভাবেন, পোষ্যটি আপনার মনের মতো হবে, সেটা কখনওই সম্ভব না। সন্তানের মতো দেখলে পোষ্যের জন্যও সময় এবং ধৈর্য দিতে হবে।
৩) মনে রাখবেন, পোষ্য এবং আপনি দু’টি আলাদা প্রজাতি। আপনার মনুষ্য সন্তানের ক্ষেত্রে প্রজাতিগত পার্থক্য থাকে না, তাই তার আচরণ বিষয়ে স্বভাবতই অবগত থাকেন। তা সত্ত্বেও কিন্তু মা-বাবারা সন্তান আসার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া, বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে থাকেন। পোষ্যকে পরিবারে আনার আগেও এতটা সময় দিতে হবে। জানতে হবে তার বৈশিষ্ট্য, আচরণ, প্রাথমিক চাহিদা ইত্যাদি।
একটি কুকুরকে পোষ্য হিসেবে এনে অনেকেই তাকে নিয়ে হাঁটতে বেরোন না। কারণ হিসেবে উঠে আসে— বাড়ির লোকের সময় নেই, অসম্ভব দুষ্টুমি করে, অন্য কুকুরের সঙ্গে মারামারি করতে চায় বা অন্য কুকুরের থেকে রোগ পোষ্যের শরীরে ঢুকে যেতে পারে। আপনার সন্তানটিকে কি এর একটি কারণেও স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেবেন? না কি, তাকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পাঠ দেবেন?
পোষ্যকে প্রশ্রয় দিয়ে বখিয়ে দেওয়া বা সারা ক্ষণ শাসনে রেখে তাকে উত্ত্যক্ত করে তোলা মোটেও সন্তানস্নেহ নয়। তাকে সুন্দর জীবন দিতে গেলে তার মতো করে আপনাকে শিক্ষিত হতে হবে। যেমন ভেবেচিন্তে পৃথিবীতে নিজের সন্তানকে আনেন, তেমনই পোষ্যকে আনার আগে ভাবুন। আজীবন নিজের কাছে রাখার জায়গা বাড়িতে এবং আপনার বুকের খাঁচায় আছে তো? না হলে থাক।