অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিচারকদের সঙ্গে পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার, জি ডি বিড়লা সভাগারে। নিজস্ব চিত্র।
এখনও তারা প্রাপ্তবয়স্ক নয়। তবে তাদের প্রাপ্তির ঝুলি ইতিমধ্যেই ফুলেফেঁপে উঠেছে। আর পাঁচজন সমবয়সির মতো শুধু খেলনা কিংবা বই নিয়েই তাদের জগৎ সীমাবদ্ধ নয়। খেলা থেকে শিল্পকলা, বিজ্ঞান থেকে ভাস্কর্য— বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে সম্মান অর্জন করেছে। কেউ স্কেটিং তো কেউ নাচ, কেউ টেবিল টেনিস তো কেউ গান— নানা ক্ষেত্রে নজর কেড়েছে ওরা।
স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা আকাশ ছোঁয়ার আশ্বাস দেবে, এতে আবার নতুন কী? অনেকের এমন মনে হতেই পারে। তবে এরা শুধু আভাস দেয়নি। ইতিমধ্যেই স্বপ্নপূরণের দৌড়ে কয়েক পা এগিয়ে গিয়েছে তারা। তবে দৌড় থামাতে রাজি নয়। আরও আরও সাফল্য যে অপেক্ষা করছে ওদের জন্য। এ সব প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের কীর্তিকে সম্মান জানাতে, তথা তাদের কাজকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে আয়োজন করা হয়েছিল ‘এইট্টিন আন্ডার এইট্টিন’ প্রতিযোগিতা, প্রেসেন্টেড বাই অমৃতা বিশ্ববিদ্যাপীঠম, কো-পাওয়ার্ড বাই পার্টনার বিবেকানন্দ মিশন স্কুল জোকা। দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনের এডুগ্রাফ তেমনই ১৮ জন স্কুলপড়ুয়াকে সম্মান জানাল। বৃহস্পতিবার জি ডি বিড়লা সভাগারের মঞ্চে। অনুষ্ঠানের এসে প্রধান অতিথি পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক বললেন, ‘‘স্বপ্নপূরণ করতে ইচ্ছেটাই আসল। অনেক বাঁধাবিপত্তি আসবে, তবে মন স্থির থাকলে আমার মতো তোমাদেরও স্বপ্নপূরণ হবে।’’
পূর্ব ভারতের ২৫০টি স্কুল থেকে ১,২০০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এই প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিল। প্রাথমিক বাছাই পর্বের পর উঠে আসে ৫০ জনের নাম। সেখান থেকেই সেরা আঠেরোকে বেছে নেন নয় বিচারক— গায়ক-লেখক অনুপম রায়, গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া, লেখক কুণাল বসু, অভিনেত্রী পাওলি দাম, অভিনেত্রী রমণজিৎ কৌর, ফিটনেস প্রশিক্ষক রণদীপ মৈত্র, নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়, ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত এবং ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট অম্বরীশ দাশগুপ্ত।
কারা এই কৃতী ১৮? কাদের দেখে মুগ্ধ হলেন বিচারকরা?
সেরা আঠেরোর তালিকায় উঠে এল পূর্ব ভারতের প্রায় সব রাজ্যের স্কুলপড়ুয়ার নাম। পাঠ্যক্রমের লেখাপড়ার বাইরেও তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে খেলা কিংবা কলা জগতে। কলকাতার ছেলে আদিত্য রায়ের স্বপ্ন জাতীয় ক্রিকেটে নিজের জায়গা করার। ইতিমধ্যেই সে বাংলার অনূর্ধ্ব ১৬ দলের অধিনায়ক। জামশেদপুরের মনদ্রিতা চট্টোপাধ্যায় একজন সমাজকর্মী। স্কুলে শৌচাগারের অভাবে গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা পড়াশোনা ছাড়ছে দেখে মন কেঁদেছিল মনদ্রিতার। নিজের জমানো ২৪ হাজার টাকা দিয়েই কেন্দ্রাদি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য তৈরি করেছিল একটি শৌচাগার। স্বপ্ন তার আকাশছোঁয়া। কলকাতার শ্রুতি মজুমদার এক জন জিমনাস্ট। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেক পুরস্কারই তার ঝুলিতে। তবে শ্রুতির স্বপ্ন অলিম্পিক জয়ের। ভুবনেশ্বরের সোহিনী সঞ্জয় মোহান্তি টেনিস খেলোয়াড়। বিশ্বের দরবারে ভারতের নাম উজ্জ্বল করার স্বপ্নই দেখে সে।
সেরা আঠেরোর তালিকায় রইল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের চর্চায় যুক্ত লহমা দাস তালুকদার, ভরতনাট্যম শিল্পী অগ্নিভ বিশ্বাস, অভিনেত্রী অন্তর্জিতা পালের নাম।
সেরা আঠেরোর পাশাপাশি পুরস্কার দেওয়া হল আরও কয়েক জন কৃতীকে। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হল খুদে কয়েক জন পড়ুয়ার কৃতিত্ব। দর্শকের পছন্দের পুরস্কারও পেল এক জন ছাত্রী।