ছবি : সংগৃহীত।
বাঙালিরা প্রকৃতিগত ভাবে খাদ্যরসিক। সারা বছরই রসে-রসনায় ডুবে থাকতে ভালবাসে। সে কর্পোরেট সংস্থার রাশভারী আধিকারিক হোন বা সরকারি অফিসের বাবু। খাবারে বাঙালির না নেই। বরং তাদের কাছে যে কোনও উৎসব খাওয়াদাওয়ারই উৎসব। শুধু তা-ই নয়, যে উৎসব যেমন ঠিক তার ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়াদাওয়া করা জরুরি। বাঙালির দুর্গাপুজোর মেনু আর পয়লা জানুয়ারির মেনু কখনওই এক হবে না। দুর্গাপুজোয় ঠিক এক দিন ভোগের খিচুড়ি আর লাবড়াটি দরকার। আবার ইংরেজি নববর্ষে দরকার কিছুটা বিদেশি খানাপিনা। সেই ঐতিহ্য মেনেই বাংলা নববর্ষে বঙ্গজেরা চান বাঙালি খাবার খেতে। কিছু না হোক খাবারে বাঙালি ছোঁয়া রাখতে। সেই ভাবনা আর বাঙালির খাদ্যপ্রেমের কথা মাথায় রেখেই শহরের বহু রেস্তরাঁ এবং ফুড জয়েন্ট নববর্ষে সাজিয়েছে তাদের বৈশাখী মেনু। কোনও রেস্তরাঁয় নববর্ষের আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে খাওয়াদাওয়া। কোনওটিতে আবার নববর্ষের দিনেই হবে এলাহি আয়োজন। নববর্ষ থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল জুড়ে খানাপিনার বন্দোবস্তও থাকছে কিছু রেস্তরাঁয়। নববর্ষে বাইরে খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে এই তালিকায় এক বার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
সপ্তপদী
সপ্তপদী রেস্তরাঁ যেমন আনছে ‘পয়লা বৈশাখ থালি’। আবার পয়লা বৈশাখের ব্যুফেও। খাঁটি বাঙালি শরবত দিয়ে শুরু হয়ে মিষ্টান্নে শেষ। তবে অবশ্যই থালির থেকে ব্যুফের সম্ভার বড়। সেখানে থাকবে পান্তা ভাতের লাইভ কাউন্টারও। বাকি সমস্ত বাঙালি খাবার তো থাকছেই।
কবে: ১৫ এপ্রিল দিনভর।
আইবিআইএস কলকাতা
রাজারহাটের এই রেস্তরাঁও আনছে পয়লা বৈশাখের বিশেষ থালি। লুচি-মাংস থেকে শুরু করে আলু পোস্ত, ভেটকি ফ্রাই, ভেজিটেবিল চপ— সবই সাজানো থাকবে সেই থালায়। তবে খাবারের সঙ্গে চাখনা হিসাবে কাঁচালঙ্কায় কামড় দিতে ভালবাসা বাঙালির জন্য সেই থালার বিশেষ আকর্ষণ হতে পারে চিকেন লঙ্কাবাটা!
কবে: ৯-১৫ এপ্রিল
ফাইভ অ্যান্ড ডাইম
সেক্টর ফাইভের জিপি ব্লকের ফাইভ অ্যান্ড ডাইম শুধু পয়লা বৈশাখের জন্য আনছে বিশেষ ব্যুফে। সেখানে ফুচকা দিয়ে শুরু করে কুমড়ো ফুলের বড়া, এঁচোড়ের দইবড়া, কাঁচালঙ্কার চিকেন পাতুরি চেখে দেখে ঢুকে পড়ুন মেন কোর্সে। সেখানে অপেক্ষা করবে ছানা কড়াইশুটির লাউঘন্ট, মটন ডাকবাংলো, শিলেবাটা চিংড়ি-সহ অনেক কিছু।
কবে: ১৫ এপ্রিল
ফ্লেভার্স অফ আফ্রিকা
কোথায় বাংলা, কোথায় আফ্রিকা! বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় চাঁদের পাহাড়ে মিলিয়েছিলেন। বাইপাসের ধারের রেস্তরাঁ ফ্লেভার্স অফ আফ্রিকাও মেলাল। সেখানে বাংলার থালা থেকে খাবার নিয়ে তাকে রাঁধা হচ্ছে আফ্রিকান পদ্ধতিতে। ফলে কষা মাংস হয়েছে কাঙ্গা এমবুজি, বাসন্তি পোলাও এমচেলে ওয়া এনজানো। নববর্ষে এমন অনেক চমক থাকবে তাদের পয়লা বৈশাখের আমিষ এবং নিরামিষ থালিতে।
কবে: ১৫-২৫ এপ্রিল
ড্রাঙ্কেন টেডি
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এলগিনের এই রেস্তরাঁ এনেছে বৈশাখী ভূরিভোজ মেনু। খুব বেশি ফিউশনের মধ্যে দিয়ে না গিয়ে রেস্তরাঁটি মন দিয়েছে বাংলার চেনা খাবারকেই ভাল ভাবে পেশ করার দিকে। ঢিমে আঁচে রাঁধা কষা মাংসের পাশাপাশি থাকবে মুচমুচে রাধাবল্লভীর সঙ্গে বাঙালি মশলার আলুরদম-সহ অনেক কিছু।
কবে: ১৫ এপ্রিল
ওয়্যারহাউস ক্যাফে
সাউথ সিটি মলের পাঁচ তলার এই ক্যাফে ঠিক করেছে, নববর্ষে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবারকেই আধুনিক মোড়কে পরিবেশন করবে। ফলে মেনুতে রয়েছে গন্ধরাজ মালাই ফিশ টিক্কা, ভেটকির কবিরাজি, ভুনা মটন স্প্রিং রোল। মিষ্টির পাতে আম আর নারকেলের ট্রেসলেসেস। এমনকি, গলা ভেজানোর ককটেলেও থাকবে ফিউশন।
কবে: ১৪-১৫ এপ্রিল
দ্যাট প্লেস
শেক্সপিয়র সরণীর বোলিং বার ‘দ্যাট প্লেস’-এ নববর্ষ মানে চিরন্তন ঘরোয়া বাঙালি খাওয়াদাওয়া। ফলে লুচি-আলুরদম-ছোলার ডালের পাশাপাশি থাকছে কচি পাঁঠার ঝোল, ভেটকি মাছের তেল ঝোল, কাজু-কিশমিশ দেওয়া বাসন্তী পোলাও গন্ধরাজ ফিশফ্রাই, মোচার চপ! যা শুনলেই বাঙালির মন গরমে ঠান্ডা হয়ে যায়।
কবে: ১৫ এপ্রিল
ওলতেরা
পার্ক স্ট্রিটের ওলতেরায় নববর্ষ আসছে আরবি ঢঙে। নানা রেস্তরাঁ যখন নববর্ষের থালি সাজাতে ব্যস্ত ওলতেরা সাজালো কলকাতা স্পেশ্যাল মান্ডি। ভাতের সঙ্গে নানা ভেষজের গন্ধে ঢিমে আঁচে রান্না করা মাংস পরিবেশন করা হবে নিখুঁত এগ পোচ দিয়ে। তা ছাড়াও থাকবে ওয়ানাবি পর্দা বিরিয়ানি, মোচার শামি কাবাব, আরবি ককটেল, সবই ছাদে বসে বৈশাখী হাওয়া গায়ে লাগিয়ে উপভোগ করা যাবে।
কবে: ১৪-২১ এপ্রিল
ভেনেতো
যাঁরা বিদেশি খাবারে বৈশাখ বরণ করবেন ভেবেছেন, তাঁরা ঢুঁ মারতে পারেন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ভেনেতোয়। সেখানে পয়লা বৈশাখ পরিবেশন করা হবে খাঁটি ইতালীয় পাস্তা, পিৎজ়া বুরাতা।
কবে: ১৫-২২ এপ্রিল
পার্ক স্ট্রিট সোশ্যাল
পার্ক স্ট্রিটের এই রেস্তরাঁ বাংলা নববর্ষকে বাঙালি খাবারে বরণ না করলেও বাংলার খাবারে বরণ করছে। বঙ্গে যে খাবার জনপ্রিয় যেমন কলকাতা বিরিয়ানি, ভেটকি ফিশ ফ্রাই, চেলো কাবাব, চিকেন আলা কিভ, এমনকি, বাঙালির প্রিয় ব্রেকফাস্ট ট্রে— তথাকথিত বাঙালি না হয়েও তো বাঙলারই। পার্ক স্ট্রিট সোশ্যালের কলকাতা এডিটে থাকছে তারই সম্ভার।
কবে: ১৪-১৫ এপ্রিল
করিডর বার অ্যান্ড কিচেন
নববর্ষে বাঙালির সাহেবিয়ানার ব্যবস্থা থাকবে রাসেল স্ট্রিটের এই বার কাম রেস্তরাঁয়। এক হাতে পানীয়ের গ্লাস নিয়ে অন্য হাতে তুলে নিন কাঁকড়া দিয়ে তৈরি ক্র্যাব ফিঙ্গার কিংবা বাঙালির সর্ষে মাছের আদলে সর্ষোওয়ালি মাহি টিক্কা। থাকবে মেল্টিং মাশরুম, শ্রিম্প গার্লিক স্কিউয়ার, শেষ পাতে লোটাস বিসকফ চিজ়কেকও।
কবে: ১৪-১৫ এপ্রিল।
মিরাবেল
বাঙালি মাছ খেতে ভালবাসে, তাই খাবারের প্লেটে সাজানো মাছের থেকে বড় বাঙালিয়ানা কিই বা হতে পারে! হিন্দুস্তান পার্ক চত্বরের এই রেস্তরাঁ তাই সিফুডের মেলা বসিয়েছে বৈশাখী উদযাপনে। থাকবে টেমপ্যুরা ফ্রিটে গ্যামবেরেটো, যা কি না পারমেসান সসে ডোবানো ভাজা চিংড়ি অথবা খেয়ে দেখতে পারেন পেসে আলা গ্রিগলিয়া যা আসলে কলকাতা ভেটকি। লেমন বাটার কেপার সসে মাখোমাখো।
কবে: ১৪-১৫ এপ্রিল।
ইয়েলো স্ট্র
বাংলার গ্রীষ্মে পদার্পণ আম ছাড়া সম্ভব নয়। শহরের সমস্ত ইয়েলো স্ট্রয়ের আউটলেটে তাই বৈশাখী মেনু সেজেছে আমের রকমারি আইসক্রিম, শেক, শরবত, স্মুদি, সানডেতে। পার্ক স্ট্রিট, গড়িয়াহাট, সল্টলেক, সর্বত্রই পাওয়া যাবে ইয়েলো স্ট্রয়ের আমের সম্ভার।
কবে: ১৪-৩০ এপ্রিল
ক্যাফে অফবিট
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে নিজেদের বিশেষ বাঙালি মেনু সাজিয়েছে বাইপাসের ধারের রেস্তরাঁ ক্যাফে অফবিট। যে স্বাদ আর গন্ধে বাঙালির জিভে জল আসে, সেই গন্ধরাজ চিকেন, সর্ষেবাটা মাছ, কষা মাংস, নলেন গুড়ের রসগোল্লাম সবই থাকছে খাবারের মেনুতে। পানীয় হিসাবে থাকছে আমপোড়া শরবত এবং গন্ধরাজ ঘোল।
কবে: ১৫ এপ্রিল
ফোর কয়েন্স ক্যাফে
ঠিক বৈশাখী মেনু না হলেও নিউ বালিগঞ্জ রোডের ফোর কয়েন্স ক্যাফে গ্রীষ্মের সম্ভার সাজিয়েছে বোবা টি দিয়ে। তাইওয়ানের এই পানীয় এখন শহরের পছন্দের তালিকার উপরের দিকে বিরাজমান। বোবা টি নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। ফোর কয়েন্স ক্যাফেতে থাকবে নানা ধরনের বোবা পানীয়। সঙ্গে চপলি কাবাব, চিজ় বার্স্ট ফিশের মতো খাবারও থাকবে।
কবে: গোটা গ্রীষ্ম কাল জুড়ে।
ক্যাফে ড্রিফটার
লেক রোডের ক্যাফেতে পয়লা বৈশাখের খাওয়াদাওয়ার আয়োজনে চিরকালীন বাঙালি স্বাদ যেমন লুচি-ছোলার ডাল, সাদা ভাত-চিংড়ির মালাইকারি-মটন কষা থাকছে। তবে তার পাশাপাশি থাকছে মশলা চিজ় বল উইথ পোস্ত অ্যান্ড হালেপেনো বা কাসুন্দি চিকেন টিক্কার মতো অন্যরকম ফিউশন খাবারও।
কবে: ১৪-৩০ এপ্রিল
হোটেল হলিডে ইন কলকাতা এয়ারপোর্ট
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বাঙালি খাবারের ব্যুফে সাজিয়েছে হলিডে ইন কলকাতা এয়ারপোর্ট। মেনুর প্রতিটি রান্নাতেই ভাবনার ছাপ চোখে পড়বে। থাকবে মোরগ পোলাও, পোস্ত চিংড়ি বাটা, সর্ষে ভাপে পাবদা, শিলে বাটা লাল মাংসের ঝোল, পেঁয়াজ পোস্তর বড়া-সহ নিরামিষেরও হরেক রকম। সঙ্গে নববর্ষের অতিথিদের জন্য থাকবে বাউল গানের বন্দোবস্ত।
কবে: ১৫ এপ্রিল
কেসিসি ক্যাফে
বাইপাসের এই ক্যাফেতেও পয়লা বৈশাখের দুপুর ১২টা থেকে ৪টে পর্যন্ত চলবে বৈশাখী খাওয়াদাওয়া। গন্ধরাজ ঘোল দিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানাবে তারা। তার পরে প্লেটে আসতে পারে আম আদার চপ বা তিলের বেগুনি, পটলের দোলমা বা ঘি ভাত। শেষ পাতে রাজভোগ আর মিষ্টি দই।
কবে: ১৫ এপ্রিল
ঝড়ে জলে জঙ্গলে
সুন্দরবনের ঝাড়খালির একটি রিসর্ট ঝড়ে জলে জঙ্গলে। সেখানেও পয়লা বৈশাখের উদযাপনে থাকছে নববর্ষ থালি। মাটির থালা-বাটি-গ্লাসে পরিবেশন করা হবে বাঁশকাঠি চালের ভাত, পাঁচ রকমের ভাজা, মাছের মাথা দিয়ে সোনামুগ ডাল, বামুন বাড়ির শুক্তো, পটলের দোলমা, গোবিন্দভোগ চালের পোলাও, দই মুরগি, কচি পাঁঠার ঝোল, নলেন গুড়ের পায়েস-সহ অনেক কিছু। সঙ্গে থাকবে বাউল গানও।
কবে: ১৪-১৫ এপ্রিল
ক্যাল অন
ছাদে বৈশাখী হাওয়া গায়ে মেখে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করার ইচ্ছে হলে আসতে পারেন ক্যাল অনে। বালিগঞ্জে হায়াত সেন্ট্রিকের মাথায় প্রায় ৫০০০ বর্গফুট জুড়ে বিস্তৃত এই রেস্তরাঁয় বৈশাখ আসছে বিশ্বায়নের প্লেটে। ব্লু চিজ় কুলচার পাশে সাজানো হবে কাসুন্দি বাটার সঙ্গে পাঁচফোড়নের গন্ধে ভরা প্রন টেম্পুরা বা কলমি এন প্যাশিয়ো। কোনটি খাবেন সেটি আপনার ব্যাপার তবে এলে দৃশ্যসুখ মিলবেই।
কবে: ১৫ এপ্রিল