গর্ভাবস্থায় কোন-কোন পরীক্ষা করানো জরুরি ও কেন, জেনে নিন বিশদে
Pregnancy Tips

মা হওয়ার আগের পরীক্ষা

ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার অর্থাৎ গর্ভাবস্থার একদম শুরুর দিকে কয়েকটি জরুরি পরীক্ষা প্রথমেই করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। তার মধ্যে প্রধান হল বিভিন্ন ধরনের রক্তপরীক্ষা।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:২৬
Share:

মায়ের সুস্থতাও নিশ্চিত করা জরুরি।

মা হওয়ার আগে সন্তানের সুস্থ জন্মদান সুনিশ্চিত করতে জরুরি কিছু পরীক্ষার। শুধু সন্তানই নয়, যে মা তাকে গর্ভে ধারণ করছেন, সেই মায়ের সুস্থতাও নিশ্চিত করা জরুরি। নির্বিঘ্ন প্রেগন্যান্সি তবেই সম্ভব।

Advertisement

প্রাথমিক পরীক্ষা ও প্ল্যানিং

ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার অর্থাৎ গর্ভাবস্থার একদম শুরুর দিকে কয়েকটি জরুরি পরীক্ষা প্রথমেই করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। তার মধ্যে প্রধান হল বিভিন্ন ধরনের রক্তপরীক্ষা। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট পরীক্ষার মাধ্যমে ব্লাড সেল, প্লেটলেট কাউন্ট ইত্যাদি নির্ণয় করা হয়। গর্ভধারণ করার সময়ে মায়ের অ্যানিমিয়া হচ্ছে কি না তা জানা জরুরি। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, আয়রনের মাত্রা ইত্যাদি নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। এসজিপিটি-র মাত্রা কত, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়। এ ছাড়া মায়ের সুগার লেভেল, প্রেশার লেভেল নিয়মিত পরীক্ষা করানো দরকার। কারণ, অন্য সময়ে প্রেশার বা সুগার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও গর্ভাবস্থায় তা ওঠানামা করে অনেকেরই। অনেকের এ সময়ে থাইরক্সিন হরমোনের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। সুগারের মাত্রা বেড়ে জ়েস্টেশনাল ডায়াবিটিসের শিকারও হয়ে থাকেন অনেক মহিলাই। গ্লুকোজ় চ্যালেঞ্জ টেস্ট করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে থাইরয়েড, সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার।

Advertisement

শুধু গর্ভধারণের পরেই নয়, এর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা দরকার সন্তান গর্ভে আসার আগে থেকেই। রুবেলা ভ্যাকসিন-সহ আরও বেশ কিছু সাবধানতা নেওয়া দরকার কনসিভ করার আগে। এইচআইভি স্ক্রিনিং, সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজ়িজ় ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি সময় থাকতেই। গর্ভে সন্তান আসার পরেও তাকে সুস্থ ভাবে ধারণ করতে আপনার শরীর প্রস্তুত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। গাইনিকোলজিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘অ্যান্টিনেটাল টেস্ট প্রেগন্যান্সির খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গর্ভাবস্থার পুরো সময়টা ধরে মা ও গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা বজায় রাখতে এই পরীক্ষাগুলি খুবই জরুরি। নানা ধরনের ইউরিন টেস্ট, ব্লাড টেস্ট, আল্ট্রাসাউন্ড টেস্টের মাধ্যমেই আমরা অনেক বিষয়ে আগে থেকে নিশ্চিত হতে পারি।’’

সন্তানের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করুন

আপনার গর্ভে থাকা ভ্রূণ যখন একটু একটু করে বেড়ে উঠছে, সে সম্পূর্ণ সুস্থ কি না বা তার কোনও জটিলতা তৈরি হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। চিকিৎসকরা এ জন্য একাধিক আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্রিনিংয়ের সাহায্য নিয়ে থাকেন। শিশুর ক্রোমোজ়োমাল ডিফেক্ট বা ডাউন সিনড্রোমের সম্ভাবনা আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হয় ডাবল মার্কার টেস্টের মাধ্যমে। গর্ভাবস্থা আরও পরিণতির দিকে এগোলে সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারে ফেটাল ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি করে দেখা হয় শিশুর হৃদ‌্‌যন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছে কি না। এটিও এক ধরনের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা। প্রতি ট্রাইমেস্টারেই একাধিক ইউএসজি করে গর্ভস্থ শিশুর গতিবিধি ও বেড়ে ওঠা পর্যবেক্ষণ করা হয়। গর্ভাবস্থা পাঁচ মাস পেরোলে (২০ সপ্তাহের পরে) একটি ডিটেলড অ্যানোমালি স্ক্যান করা হয়। এতে বেড়ে ওঠা ভ্রূণের আয়তন, ওজন, মস্তিষ্কের বৃদ্ধি, স্পাইনাল কর্ড ও অন্যান্য হাড়ের গঠন, হৃদ্‌স্পন্দন-সহ আরও বেশ কিছু অ্যানাটমিক্যাল বৈশিষ্ট্য বিশদে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। কোনও জটিলতা তৈরি হলে সেটিও এই আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানে ধরা পড়ে ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। শুধু শিশুই নয়, মায়ের পেলভিক এরিয়া, প্লাসেন্টা, অ্যামনিয়োটিক ফ্লুয়িড ইত্যাদির বিশদ চিত্রও দেখা সম্ভব এই পরীক্ষায়। এই অ্যানোমালি স্ক্যানটি তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভ্যাকসিনেশন ও সুরক্ষা

প্রেগন্যান্সি প্ল্যানিংয়ের আগে এবং গর্ভাবস্থা চলাকালীন একাধিক ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে। ফ্লু এবং টিটেনাসের মতো পরিচিত ভ্যাকসিন তো বটেই, ডিপথেরিয়া, চিকেন পক্স, হুপিং কাশির মতো অসুখের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে আরও কিছু ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই নিজের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সেই সব ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত, নির্দিষ্ট সময়ে।

চূড়ান্ত পর্যায়ে

গর্ভাবস্থা যখন প্রায় পরিণত, পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে, সেই তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের আল্ট্রাসাউন্ডের ব্যবধান কমে আসে। সপ্তাহ দু’-তিনেক অন্তরই ডাক্তাররা চেক করে দেখেন, শিশুর গ্রোথ এবং রক্ত সঞ্চালন কী রকম ও সেই অনুযায়ী ডেলিভারির প্ল্যানিং করে থাকেন (সি-সেকশনের ক্ষেত্রে)। তাই এই সময়ের ডপলার আল্ট্রাসাউন্ডগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সন্তান আসার খবর পাওয়া মাত্রই নানা সাবধানতা, বিধিনিষেধ ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মায়েদের। তবে এ সবই করা হয় ঝুঁকির সম্ভাবনা এড়াতে। নিয়ম মেনেও যথাসম্ভব স্বাভাবিক হাসিখুশি জীবনযাপন ও নিজেকে সচল রাখাও জরুরি এ সময়ে। তবেই মসৃণ হবে মাতৃত্বের যাত্রাপথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement