Bird

Bird Watchers: কংক্রিটের জঙ্গলের মাঝেও পাখির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন এঁরা, দল বেঁধে যান কোথায়

গরমকালে পাখি দেখতে না বেরোলে ‘প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার’, ‘এশিয়ান কোয়েল’, কম্ব ডাক অদেখাই থেকে যাবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৪২
Share:

পাখিপ্রেমী মানুষেরাও ভিড় করেন পরিযায়ী পক্ষীদের ছুটির উদ্‌যাপন দেখতে।  গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ

অনেকেরই জীবনে বিভিন্ন শখ থাকে। কেউ ছবি আঁকতে ভালবাসেন। কেউ বা পাহাড়ে চড়তে। আবার কারও নেশা দেশ বিদেশের পাখি দেখা। তেমন মানুষেরা তাই সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন শীতকালের জন্য। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি— মূলত এই তিন-চারমাস বঙ্গে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা বাড়ে। ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া থেকে উড়ে আসে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দল। প্রতি বছর শীতের ছুটি কাটাতে তাঁরা একই জায়গায় আসে। শীত শেষে আবার ফিরে যায় নিজের দেশে। এই সময়ে স্থানীয় পাখিদেরও গতিবিধি বেড়ে যায়। পাখিপ্রেমী মানুষেরাও ভিড় করেন পরিযায়ী পক্ষীদের ছুটির উদ্‌যাপন দেখতে।

Advertisement

শহরে বেশ কিছু ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’আছে। তাদের কাজ হল পাখি এবং প্রকৃতি নিয়ে উৎসাহী মানুষকে পাখি দেখানো এবং চেনানো। প্রকৃতি নিয়ে যাঁরা নিয়মিত চর্চা করেন ‘প্রকৃতি সংসদ’তেমনই একটি সংস্থা। ১৯৭৮ সালে প্রথম এটি তৈরি হয়। প্রথমে পরিযায়ী পাখিদের গণনা করার কাজ দিয়ে এর পথচলা শুরু। তারপর ধীরে ধীরে মানুষকে পাখি দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকৃতি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলাই ছিল মূলত এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য। শুরুর দিকে বছরে একটি করে পাখি দেখানোর ক্যাম্প হলেও পাখি দেখতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে বছরে একটি ক্যাম্পের বদলে ‘সফর’ নামে মাসে একটি করে ক্যাম্প শুরু হল। কলকাতা এবং তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে পাখি দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে উপকূলীয় পাখি দেখাতে ফ্রেজারগঞ্জ, বকখালিও হয়ে ওঠে গন্তব্য। কোভিডের কারণে প্রায় দু’বছর ‘সফর’বন্ধ ছিল। অতিমারি-আতঙ্ক কাটিয়ে ফের তা শুরু হওয়ার পথে।

গোটা একটি দিন শুধু পাখি দেখে কাটিয়ে দেওয়ার মধ্যে প্রকৃতির প্রতি অসীম ভালবাসা লুকিয়ে থাকে। পাখি তো প্রকৃতিরই অংশ। তবে কোন বয়সের মানুষেরা মূলত পাখি দেখতে আসেন? এ প্রসঙ্গে ‘প্রকৃতি সংসদ’-এর এক অন্যতম সদস্য অপূর্ব চক্রবর্তী জানালেন,‘‘মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি নিয়ে আগ্রহ গড়ে তোলাটাই আমাদের উদ্দেশ্য। বিশেষ করে আমরা চাই বাচ্চারা এতে অংশগ্রহণ করুক। পাখি দেখুক। চিনতে শিখুক। কিন্তু আজকাল অল্প বয়সিরা পড়াশোনা এবং আরও অন্য কাজকর্ম নিয়ে সারাক্ষণই ভীষণ ব্যস্ত থাকে। ফলে আলাদা করে পাখি দেখতে যাওয়ার ফুরসত নেই তাঁদের। আমাদের কাছে যাঁরা আসেন তাঁদের কারও বয়স চল্লিশের উপরে। কেউ বা ষাটোর্ধ্ব। কর্মজগৎ থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রকৃতির মাঝেই সময় কাটাতে চান। বছর তিরিশের আশেপাশেও আছে। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম।’

Advertisement

অনেকেই মনে করেন, শীতকালই পাখি দেখার আদর্শ সময়। ছবি: সংগৃহীত

পাখি দেখারও আলাদা একটি পদ্ধতি আছে। পাখি দেখার আগে পাখি চিনতে শিখতে হবে। তবেই পাখি দেখা সফল হবে। কেমন এই পাখি চেনার পদ্ধতি? অপূর্ব বললেন, ‘‘প্রথমেই আমরা বলে দিই যে পাখির কোন বিষয়গুলি লক্ষ্য করতে হবে। যেমন পাখির দৈর্ঘ্য। দৈর্ঘ্য অনুযায়ী চার রকম পাখি বেছে নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে ছোট চড়াই(১৫ সেমি), তার চেয়ে বড় বুলবুলি(২০সেমি), তার উপরে শালিখ (২৫ সেমি) এবং তারপর ঘুঘু পাখি (৩০ সেমি)। এ বার কেউ যদি এসে বলেন চড়াই পাখির চেয়ে ছোট কোনও পাখি দেখেছি, তাহলে ধরে নিতে হয় ১৫ সেমির নীচের কোনও পাখি হবে। ভারতবর্ষে প্রায় ১৪,০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। আকৃতি জানা থাকলে সেই ১৪,০০ পাখির মধ্যে কোন পাখি দেখেছে সেটা বোঝাটা সহজ হয়ে যাবে। এ ছাড়াও পাখির ঠোঁট, পায়ের গঠন, লেজের দৈর্ঘ্য দিয়েও পাখি চেনানো হয়।’’

অনেকেই মনে করেন, শীতকালই পাখি দেখার আদর্শ সময়। এটা ঠিক যে শীতেই মূলত পরিযায়ী পাখিরা হাজির হয় এ রাজ্যে। স্থানীয় পাখি ছাড়াও নিউটাউন, হাওড়া, বারুইপুরের বিভিন্নজলাশয়েবাইরের অনেক পাখি আসে। তবে শুধু শীতকাল নয়, সারা বছরই পাখি দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি, বর্ষাকালেও। ব্ল্যাক বিটার্ন, সিনামন বিটার্ন, জ্যাকোবিন কুক্কু এই পাখিগুলি মূলত বর্ষার সময়েই দেখতে পাওয়া যায়। আবার গরমকালে পাখি দেখতে না বেরোলে ‘ এশিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার’ বা দুধরাজ, ‘এশিয়ান কোয়েল’(কোকিল), কমন হক কুক্কু (পাপিয়া), ‘ইন্ডিয়ান পিট্টা’-এর মতো পাখি অদেখাই থেকে যাবে।

পাখি ভালবাসেন এমন সমমনস্ক মানুষদের মিলিত একাধিক গ্রুপ রয়েছে ফেসবুকে। তেমনই একটি দলের অন্যতম সদস্য শুভঙ্কর পাত্র। প্রতি রবিবার ওই দলেরউৎসাহী মানুষদের নিয়ে পাখি দেখতে যান। বাড়ি থেকে ১-২ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যাবে, আবার সন্ধের মধ্যে ফিরেও আসা যাবে এমন কোনও জায়গা বেছে নেন। তিনি জানালেন, ‘‘দক্ষিণ দিনাজপুরে কুলিক পাখিরালয়ে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শামুকখোল দেখতে পাওয়া যায়। ইংরেজিতে এর নাম ‘এশিয়ান ওপেনবিল’। সাঁতরাগাছির ঝিলে গেলেই দেখতে পাওয়া যায় ছোট সরাল যা ‘লেসার হুইসলিং ডাক’ নামেও পরিচিত। বছরের যে সময়ই হোক, বাইরের দেশ থেকে পরিযায়ী পাখি এ রাজ্যের কোনও জলাশয়ে উড়ে আসার অর্থ পরিবেশ এখনও পাখি বসবাসের যোগ্য আছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় পাখির স্বাস্থ্যই বলে দেয় পরিবেশে দূষণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে না হ্রাস পেয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement