Allergy

Allergy: অ্যালার্জির সঙ্গে আপস নয়

ত্বকের উপরিভাগের মতো অভ্যন্তরীণ অঙ্গেও অ্যালার্জি হতে পারে। সময়মতো সজাগ না হলে অ্যালার্জি থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:২৯
Share:

ত্বকের উপরে অ্যালার্জি হলে তা চিনে নেওয়া সহজ।

বিষয়টির সঙ্গে কম-বেশি সকলেই পরিচিত। তবে যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁরা জানেন, কতটা মারাত্মক হতে পারে অ্যালার্জি! এটি একটি রোগ, আবার অন্য রোগের উপসর্গও বটে। ত্বকের উপরে অ্যালার্জি হলে তা চিনে নেওয়া সহজ। কিন্তু খাদ্যনালি, শ্বাসনালি বা চোখের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় হলে, তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অ্যালার্জির উৎস খুঁজে বার করা চিকিৎসকদের কাছে একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন অনুসন্ধানের পরেও নিশ্চিত হওয়া যায় না, কী থেকে রোগীর অ্যালার্জি হচ্ছে। অ্যালার্জির উৎস নির্ণয় করা গেলেই পরবর্তী চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।

Advertisement

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধরের মতে, ‘‘ত্বকের উপরিভাগে যে অ্যালার্জি হয়, তার শতকরা ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এগ্‌জ়িমা বা শুষ্ক ত্বকের সমস্যা। ২০ শতাংশ আর্টিকেরিয়া অ্যালার্জি বা আমবাত, ১০ শতাংশ হল কনট্যাক্ট অ্যালার্জি বা কোনও কিছুর সংস্পর্শে আসার কারণে অ্যালার্জি।’’

এগ্‌জিমা বা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস

Advertisement

কারও এগ্্জ়িমা হয়েছে মানেই বুঝতে হবে, তার ত্বক খুব বেশি পরিমাণে শুষ্ক। ডা. ধরের মতে, ‘‘ষাট শতাংশ এগ্‌জিমা হয় দু’বছরের কমবয়সি শিশুদের। আশি শতাংশ পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের। বাকি কুড়ি শতাংশের মধ্যে দশ শতাংশ কুড়ি বছরের কমবয়সিদের। এবং অন্য দশ শতাংশ ৩০-৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে। তাই চল্লিশ বছর বয়সি কোনও ব্যক্তি প্রথম বার এগ্‌জিমার উপসর্গ নিয়ে আসছেন, এটা বিরল ঘটনা।’’

উপসর্গ: শুষ্ক ত্বকে চুলকানি থাকবে। শীতকালে সমস্যা বাড়বে। চুলকাতে চুলকাতে চামড়া ফুলে যাবে। তা থেকে রস নির্গত বা সিক্রেশন হতে পারে। মাথায় খুশকি থাকে। আসলে এটি ডিফিউজ়ড স্কেলিং অব দ্য স্ক্যাল্প। হাঁচি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকবে। একটু হাওয়া লাগলে বা তাপমাত্রার পরিবর্তন হলেই নাগাড়ে পনেরো-সতেরোটি হাঁচি হওয়াকে বলা হয় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস।

অ্যাটোপিক ট্রায়াড: এগ্‌জ়িমা, অ্যাজ়মা এবং অ্যালার্জিক রাইনাইটিস—এই ত্রিশঙ্কুকে বলা হয় অ্যাটোপিক ট্রায়াড।

মিথ: অনেক ক্ষেত্রে এমন ধারণা রয়েছে যে, এগ্‌জ়িমা নির্মূল হলে অ্যাজ়মার সমস্যা বাড়বে। আদতে এটি ভুল। এগজ়িমা এবং অ্যাজ়মা একই মুদ্রার দু’টি পিঠ। যে কোনও একটি অ্যালার্জি যে কোনও সময়ে উদ্দীপিত হতে পারে। সে কারণেই দেখা যায়, এগ্্জ়িমা সেরে ওঠার পরে হয়তো অ্যাজ়মার সমস্যা বাড়ছে।

অ্যাটোপিক মার্চ: এই তিনটি রোগ ক্রমান্বয়ে দেখা দেয়। ডা. ধরের কথায়, ‘‘সাধারণত একেবারে কম বয়সে হয় এগ্‌জ়িমা। সাত-বারো বছরের মধ্যে দেখা দেয় ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজ়মা। সেটি বড় বয়সে থাকলে তখন ফুসফুস বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে। আর অ্যালার্জিক রাইনাইটিস সাধারণত ১৮-২০ বছরের মধ্যে হয়।’’

আর্টিকেরিয়া অ্যালার্জি বা আমবাত

চুলকে চুলকে ফুলে ওঠার অ্যালার্জিকে সাধারণ ভাবে আমবাত বলা হয়। এর সঙ্গে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একে বলা হয় অ্যাঞ্জিয়ো ইডিমা। ল্যারিংক্সে ইডিমা হলে তাকে বলা হয় ল্যারেঞ্জিয়াল ইডিমা। খেতে গিয়ে গলায় খাবার আটকে যায়। শ্বাসকষ্ট এত সাংঘাতিক আকার ধারণ করে যে, রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করাতে হয়। এটি অবশ্য আপৎকালীন একটি অবস্থা।

অনেকের ক্ষেত্রে কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর্যন্ত আমবাত থাকতে পারে। তখন এটিকে বলা হয় ক্রনিক আর্টিকেরিয়া অ্যালার্জি। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, এর নেপথ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবারের ভূমিকা রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রেস্তরাঁর খাবার বা বাইরের কেনা খাবারে অনেক বেশি পরিমাণে প্রিজ়ার্ভেটিভ, কালারিং এজেন্ট থাকে, যা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।

ওরাল ফুড চ্যালেঞ্জ: কোনও বিশেষ খাবার থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে কি না, তা বোঝার জন্য প্রথমেই রক্তপরীক্ষা বা অন্য কোনও পরীক্ষা করাতে বারণ করছেন চিকিৎসকেরা। কারণ সেই পরীক্ষার ফল পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। তার পরিবর্তে ওরাল ফুড চ্যালেঞ্জ করে দেখতে পারেন। কোনও খাবার খেয়ে যদি অ্যালার্জি হয়, তবে দিনকয়েকের বিরতি নিন। আবার সেই খাবার খেয়ে দেখুন। বারতিনেক এমন করার পরে, যদি প্রতি বারই অ্যালার্জি হয়, তখন টেস্ট করান।

চিকিৎসা: এই ধরনের অ্যালার্জির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-হিস্টামিন দেওয়া হয়। বাড়াবাড়ি হলে স্টেরয়েড দেওয়া হয়।

কনট্যাক্ট অ্যালার্জি

কয়েকটি বিশেষ ধরনের মেটাল, হাতঘড়ির ব্যান্ড, নেলপলিশ, আইলাইনার, সিগারেটের ছাই, কোনও বিশেষ ফুলের রেণু—ইত্যাদি থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে। সাধারণত গরমকালে ঘাম বেশি হয়। ঘামের সোডিয়াম ক্লোরাইডের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে গরমকালে এই ধরনের অ্যালার্জি বেশি দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে অ্যালার্জির কারণ খুঁজে বার করাই এর চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

উপরে আলোচিত সব ধরনের অ্যালার্জি ত্বকের উপরিভাগে হয়, যা দৃশ্যমান। এর বাইরেও কিছু অ্যালার্জি রয়েছে।

অন্য অ্যালার্জি

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণাংশু তালুকদারের মতে, ‘‘বেশ কিছু ইমিউনোলজিক্যাল ডিজ়িজ়ের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে অ্যালার্জি দেখা যায়। আরও পরীক্ষা করার পরে প্রকৃত রোগের সন্ধান পাওয়া যায়।’’ ভারতের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশে ফাঙ্গাস এবং কৃমির কারণে অ্যালার্জি খুব বেশি পরিমাণে দেখা যায়।

বোলতা, মৌমাছি, সামুদ্রিক মাছের কামড়ে শ্বাসনালির ভিতরে এমন ভাবে ফুলে যায়, যে চিকিৎসার আগেই মৃত্যু পর্যন্ত হয়। চোখের কনজাংটিভাইটিস এক ধরনের অ্যালার্জি। ডা. তালুকদারের কথায়, ‘‘অভ্যন্তরীণ অঙ্গে অ্যালার্জির চেয়ে ত্বকের উপরে অ্যালার্জি কম ক্ষতিকর। কারণ এতে জীবনহানির সম্ভাবনা কম।’’

ছোট শিশুদের কলিক পেনের নেপথ্যে রয়েছে এক ধরনের অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া। ‘‘প্রথম যখন শিশুকে কোনও খাবার (ভাত, প্রাণিজ প্রোটিন) খাওয়ানো হয়, তখন তার শরীরে এক ধরনের প্রতিরোধ দেখা যায়। কারণ তার শরীর ওই খাদ্যের সঙ্গে অভ্যস্ত নয়। ধীরে ধীরে শরীর ওই খাবারের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়,’’ বললেন ডা. তালুকদার।

চোখ, মুখের ভিতর, শ্বাসনালির ভিতরে অ্যালার্জি হলে সেইমতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরিখে ভারতে অ্যালার্জির হার এগারো শতাংশ। ডা. ধরের মতে, ‘‘অ্যালার্জি সংক্রান্ত গবেষণা এখনও অবধি সবচেয়ে বেশি করেছেন জার্মানরা। তাঁদের অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে প্রকৃতির সান্নিধ্যে যারা বেশি থেকেছে, তাদের মধ্যে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে। এটিকে বলা হয় হাইজিন হাইপোথিসিস।’’

অ্যালার্জি অবহেলা করার নয়। অ্যালার্জির কারণ চিহ্নিত করা গেলে, তা থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement