বাঁ দিক থেকে, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, জয়ন্ত বসু এবং অলকানন্দা রায়। — নিজস্ব চিত্র।
সবুজায়নের কথা তো অনেকেই বলেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কত জন উদ্যোগী হয়ে সবুজ বাঁচানোর লক্ষ্যে কাজ করতে নামেন? ইমারতের জঙ্গলে যখন ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে সবুজ তখন বন-জঙ্গল বাঁচানোর কথা বলতে এল এক ইমারত নির্মাণকারী সংস্থা। ইট-কাঠ-পাথর নিয়েই যাদের কাজ!
সম্প্রতি বন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে একটি ‘টক শো’-এর আয়োজন করেছিল সিদ্ধা গ্রুপ। সংস্থার ডিরেক্টর আয়ুষ্মান জৈন জানালেন, তাঁরা নির্মাণের কাজে জড়িত থাকলেও সবুজ রক্ষার ব্যপারে সব সময় আগ্রহী। সেই উপলক্ষেই এই টক শো। যার বিষয়বস্তু ছিল, বনজঙ্গল কমে যাওয়া এবং তার ফলে বন্যপ্রাণীর বিপন্নতা, শহুরে মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘাত।
এ-বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানালেন কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত দুই আইএফএস অফিসার সুনীল লিমায়ে এবং প্রদীপ ব্যাস। দু’জনেই বিভিন্ন সময়ে সরকারি বনদফতরে প্রধান মুখ্য বনপালের দায়িত্ব সামলেছেন। মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সরকারের সঙ্গেও। বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে চলে আসার বহু ঘটনা সামলেছেন তাঁরা। মহারাষ্ট্রে বাঘিনী অবনীর মৃত্যুর ঘটনা যখন ঘটেছিল, তখন মহারাষ্ট্রের বন বিভাগের পদাধিকারী ছিলেন সুনীল নিজেই। দু’জনেই জানালেন, বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে দু’টি কারণে। প্রথমত, লোকালয়ে শিকার ধরা সহজ। দ্বিতীয়ত, বন কেটে লোকালয় তৈরি হওয়ায় শিকার করার সম্ভাবনা কমছে। কমছে বন্যপ্রাণীদের থাকার জায়গাও। তাই বন সংরক্ষণ সবার আগে জরুরি।
ছোটদের প্রমোদ ভ্রমণে অ্যামিউজ়মেন্ট পার্কে না নিয়ে গিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক বনে জঙ্গলে। বললেন অলকানন্দা রায়। — নিজস্ব চিত্র।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৃত্যশিল্পী এবং সমাজকর্মী অলকানন্দা রায়। বন সংরক্ষণের কথা বললেন তিনিও। তবে অলকানন্দার পরামর্শ, ‘‘বন কেটে নতুন গাছ লাগনো নয়, যে বন জঙ্গল রয়েছে, তাকেই বাঁচান। আর তার জন্য মানুষকে শিক্ষিত করা জরুরি। সেই শিক্ষা এবং সবুজের পাঠ দেওয়া হোক কাঁচা বয়স থেকেই। স্কুলে যাওয়া শিশুদেরই শেখানো হোক গাছ এবং পরিবেশের গুরুত্বের কথা।’’ অলকানন্দার মতে, যে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বা পরিবেশ বিজ্ঞান ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে পড়ানো হয় উঁচু ক্লাসে, তা আবশ্যিক বিষয় হিসাবে পড়ানো হোক অল্প বয়সেই। ছোটদের প্রমোদ ভ্রমণে অ্যামিউজ়মেন্ট পার্কে না নিয়ে গিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক বনে জঙ্গলে। তাতে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের একাত্মবোধ বাড়বে। প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতাও বাড়বে।
সবুজ বাঁচানোর গল্প সিনেমার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে মানুষের কাছে। মত ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের। — নিজস্ব চিত্র।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন টলিউডের দুই অভিনেতা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। ঋতুপর্ণা বললেন, সবুজ বাঁচানোর জন্য সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত। ইন্দ্রনীল বললেন, ‘‘বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করা এবং প্রকৃতিকে বাঁচানোর কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের এমন অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে, যার কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছোনো দরকার। সিনেমা সেই সব গল্প মানুষকে জানানোর কাজ করতে পারে।’’
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান এবং সাংবাদিকতা বিভাগের সদস্য তথা পরিবেশবিদ জয়ন্ত বসু।