Self Care

জীবনের ভার লাঘবে জরুরি নিজস্ব-যাপন, নজরে থাক সারা বছরই

এমন ভাবেই যাবতীয় দায়িত্বের ফাঁকে নিজের জন্য অবসর খুঁজে নেওয়া, নিজেকে ভাল রাখার জন্য কিছু করার পোশাকি নামই ‘সেল্ফ কেয়ার’। নিয়মিত নিজের জন্য সময় যে জরুরি, সে কথা বলছেন মনোবিদেরা।

Advertisement

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৬:৫০
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

চাকরি, অসুস্থ বাবার দেখাশোনা, বাড়ির কাজ— যাবতীয় দায়ভার একার হাতে সামলাতে সামলাতে হাঁপিয়ে উঠতেন পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই সহেলি। বিশ্রাম বা শারীরচর্চার সময়, এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার অবসরটুকুও যেন দুষ্পাপ্র্য ছিল। সব ভার নিতে গিয়ে নিজের দিকে তাকানো হচ্ছে না, তা বুঝতে পেরে এক দিন ঠিক করেন, একা বেড়াতে যাবেন। সেই মতো বাবাকে দেখাশোনার ব্যবস্থা করে তিনি বেরিয়ে পড়েন পাহাড়ের বুকে কয়েকদিন কাটিয়ে আসার জন্য। তার পর থেকে দায়িত্বপালনের পাশাপাশি, নিজেকে ভাল রাখার দিকেও সমান গুরুত্ব দিতে ভুল হয় না সহেলির।

Advertisement

এমন ভাবেই যাবতীয় দায়িত্বের ফাঁকে নিজের জন্য অবসর খুঁজে নেওয়া, নিজেকে ভাল রাখার জন্য কিছু করার পোশাকি নামই ‘সেল্ফ কেয়ার’। নিয়মিত নিজের জন্য সময় যে জরুরি, সে কথা বলছেন মনোবিদেরা। কারণ, দায়িত্বের ভার নিতে নিতে ক্রমশ ন্যুব্জ হতে থাকে মন, প্রভাব পড়ে শরীরের উপরেও। অসুস্থ হয়ে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত, অন্যদের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন যাঁরা, তাঁরা কেমন আছেন, সেই প্রশ্ন করার কেউ থাকে না অনেক ক্ষেত্রেই। এ সব নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই ২৪ জুলাই দিনটিকে আন্তর্জাতিক সেল্ফ কেয়ার দিবস হিসাবে পালন করা হয়। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। সম্প্রতি সারা বছর ধরেই সেল্ফ কেয়ারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করে পোস্ট দিয়েছেন তিনি। প্রকৃতির সান্নিধ্য, বাগান করা, বই পড়া, গান শোনা, কোনও শখ, রূপচর্চা বা শারীরচর্চার মতো অনেক কিছুই হতে পারে সেল্ফ কেয়ার।

সেল্ফ কেয়ার যে এক বা কয়েক দিনের বিষয় নয়, তা জানাচ্ছেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নিজেকে এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে এবং নিজেকে ভাল রাখার জন্য কী কী করা দরকার, তা-ও গভীর ভাবে ভেবে ঠিক করতে হবে। সেই বোধ না থাকলে দীর্ঘমেয়াদে সেল্ফ কেয়ার সম্ভব নয় বলেও জানাচ্ছেন তিনি। সেল্ফ কেয়ার মানে নিজেকে ভুলিয়ে রাখাও নয়। কোনও পরিস্থিতিতে একটা আবেগ বার বার আঘাত করলে তাৎক্ষণিক সমাধানের বদলে দরকার নিজের সঙ্গে গভীর সংলাপ। দরকার মানসিক টানাপড়েন বোঝার সচেতনতা। সেই অনুভব থেকেই উঠে আসবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিশা।

Advertisement

অনুত্তমা আরও জানাচ্ছেন, নিজের যত্ন না নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই সময়ের অভাবকে কারণ হিসেবে তুলে ধরেন। সেই যুক্তি সব সময়ে উড়িয়ে দেওয়ার মতোও নয়। তবে খুব ব্যস্ত এক জন মানুষকেও বুঝতে হবে, বর্তমানে নিজের দেখাশোনা না করলে ভবিষ্যতে অন্যের সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। কারণ তিনি সুস্থ না থাকলে অন্যের পাশেও দাঁড়াতে পারবেন না।

ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই চাকরি, পরিবার, শিশুসন্তানের দায়িত্ব সামলেও নিয়মিত অবকাশ খুঁজে নেন মধ্য তিরিশের অরুণিমা দাস। প্রায়ই বেড়াতে যাওয়া, সিনেমা দেখতে যাওয়া ছিল তাঁর একান্ত নিজস্ব-যাপন। সন্তানকে পরিবারের কাছে রেখে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়াটা তাই বজায় রয়েছে। এমনকি, বন্ধ হয়নি বেড়ানোও। তাঁদের সঙ্গী হয় শিশুপুত্রও। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন কারও মা ঠিকই। তবে সন্তান সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেলেও আমার ব্যক্তিসত্ত্বার দিকটায় আপোষ করি না।’’ বছর চল্লিশের জিষ্ণু গুপ্তের কাছে আবার মোটরবাইকে লম্বা পথ পাড়ি দেওয়াই মনের আরাম। তাঁর কথায়, ‘‘দায়িত্বশীলতার অর্থ নিজের প্যাশন বিসর্জন দেওয়া নয়। তেমনটা করলে নিজের মনেই জমবে ক্ষোভ, বিরক্তি।’’

কিন্তু কটাক্ষ কি ধেয়ে আসে না কখনও? অরুণিমা, জিষ্ণু জানাচ্ছেন, নেতিবাচক মন্তব্যের মুখোমুখি হলেও সচেতন ভাবে এড়িয়ে চলেন সে সব। অনুত্তমা জানাচ্ছেন, নিজের জন্য কিছু করতে গিয়ে কারও কাছে অপ্রিয় হলেও বেশি নজর থাকুক সেল্ফ কেয়ারেই। কারণ সকলের মন জুগিয়ে চলা দীর্ঘমেয়াদে কখনও সম্ভব নয়। তবে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিচার করে ঠিক করে নিতে হবে, কখন কোন জিনিসকে কতটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন। বাড়িতে কোনও আপৎকালীন ঘটনায় যেমন সেই দিকে বেশি নজর দিতে হবে, তেমনই মনে রাখতে হবে সেল্ফ কেয়ার মানে স্বার্থপরতা নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement