শুক্রবার সন্ধ্যায়, স্টারমার্কে প্রকাশ পেল সত্যজিৎ রায়ের ছোট গল্প অবলম্বনে বাংলার প্রথম ‘গ্রাফিক নভেল’। ছবি: সংগৃহীত।
সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প ‘খগম’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘সন্দেশ’ পত্রিকায়। সাধুর অভিশাপে এক ব্যক্তির সাপ হয়ে ওঠার কাহিনি। পড়ার বইয়ের আড়ালে রেখে কিংবা গ্রীষ্মের ছুটিতে গ্রোগ্রাসে অতি-প্রাকৃত এই গল্পটি অনেকেরই পড়া। গল্পের প্রতিটি লাইন পড়লেই কাঁটা দেয় গায়ে। জন্ম নেয় এক ধরনের ভয়। এ বার সেই গল্প হাজির হল নবকলেবরে। শুক্রবার সন্ধ্যায়, স্টারমার্কে প্রকাশ পেল সত্যজিৎ রায়ের ছোট গল্প অবলম্বনে বাংলার প্রথম ‘গ্রাফিক নভেল’। বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সন্দীপ রায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্টজনেরা।
বইটির ইলাস্ট্রেশনের দায়িত্বে ছিলেন শুভব্রত বসু। এই বই তৈরির সামগ্রিক ভাবনা এবং পরিকল্পনা শমীক চট্টোপাধ্যায় মস্তিষ্কপ্রসূত। বহু দিন ধরে বিজ্ঞাপন জগতে কাজ করছেন শমীক। বেশ কিছু জনপ্রিয় বাংলা ছবির পোস্টারও তিনিই নির্মাণ করেছেন। তবে প্রতিটি কাজই অন্যের জন্য করা। নিজেদের বলতে তো কিছুই থাকছে না। সেখান থেকেই গ্রাফিক নভেল তৈরির ভাবনার সফর শুরু। তবে শমীক একা নন, সঙ্গে পেয়েছেন বিজ্ঞাপন জগতের আরও তিন বন্ধুকে। অন্তরা চৌধুরী, শুভময় বসু এবং প্রসেনজিৎ ঘোষ— গ্রাফিক নভেল তৈরিতে এই তিন মূর্তির অবদান সমান। চার বন্ধু মিলে তৈরি করলেন ‘সিঙ্গল শট’ নামে প্রকাশনী সংস্থা। যার পথচলা শুরু হল এই নভেলের হাত ধরে।
বাঙালির অন্যতম আবেগের জায়গা সত্যজিৎ রায়। তাঁর সৃষ্টি নিয়ে করা যে কোনও কাজই অত্যন্ত সন্তর্পণে করতে হয়। এ দিক-ও দিক হলেই উঠবে সমালোচনার ঝড়। তা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে কেন বেছে নেওয়া হল সত্যজিতের গল্প? শমীকের কথায়, ‘‘সত্যজিতের গল্প নিয়ে কাজ করলে বোধ হয় বেশি সাফল্য পাওয়া যাবে বলেই এটা বেছেছি, তেমনটা হয়তো অনেকে মনে করতে পারেন। তবে আমি বিষয়টাকে খুব সহজ ভাবে দেখি। আমি সন্দীপ রায়ের সঙ্গে এর আগে অনেকগুলো কাজ করেছি। সন্দীপ দার সঙ্গে আমার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমাকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করেন। ভরসা রাখেন। আমাদের তো একটা গল্প লাগত। তাই আমরা সন্দীপ দাকে প্রস্তাব দিই। সন্দীপদা সঙ্গে সঙ্গে রাজিও হয়ে যান। তার পরেই আমরা কাজে হাত দিই। এখন তো কমিক্স পড়ার চল কিছুটা হলেও কমেছে। ছোটবেলায় আমি টিনটিনের বই উপহার পেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম।’’
২০১৮ সাল নাগাদ থেকে এই গ্রাফিক নভেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তবে এত দিন লাগার কথা ছিল না। প্রকাশিত হতে দেরি হওয়ার মূল কারণ, অন্যান্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে এই নভেল তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতেন চার জনে। তা ছাড়া অর্থ একটা বড় বিষয়। সেটার জন্য মাঝপথে আটকে যেতে হয়েছিল। তবে অবশেষে প্রকাশিত হল সিঙ্গল শটের প্রথম কাজ। এর পর সত্যজিতেই দশটি গল্প নিয়ে কাজ করবেন তাঁরা। পরবর্তী কাজটি সম্ভবত হতে চলেছে সত্যজিতের আরও একটি জনপ্রিয় ছোটগল্প ‘লখনউয়ের ডুয়েল’ নিয়ে। ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। বইমেলার নতুন সদস্য হতে চলেছে এই গ্রাফিক নভেলটি।