Indian Railways

ফিশ ফ্রাইয়ে স্বাদ নেই, বেসরকারিকরণে মান কমছে রেলের

ভারতীয় রেলের বিবিধ ট্রেন তাদের রসনার স্বাদ নিয়ে এখনও যাত্রী-স্মৃতিতে অটুট। তালিকাটি দীর্ঘ, পুরনো রেল-যাত্রীরা এখনও পুডিং-চিকেন পকোড়া-ফিশ ফ্রাই কিংবা রাবড়ি দিয়ে মনে রেখেছেন সেই সব দূরপাল্লার ট্রেন-যাত্রা।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৪ ০৭:৪৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

সাবেক রাজধানী এক্সপ্রেসে একদা তুমুল জনপ্রিয় ছিল ফিশ ফ্রাই আর পুডিং। রেলের ক্যাটারিং পরিষেবা বেসরকারিকরণের পরে সেই স্বাদ এখন অতীত হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

শুধু রাজধানী নয়, ভারতীয় রেলের বিবিধ ট্রেন তাদের রসনার স্বাদ নিয়ে এখনও যাত্রী-স্মৃতিতে অটুট। তালিকাটি দীর্ঘ, পুরনো রেল-যাত্রীরা এখনও পুডিং-চিকেন পকোড়া-ফিশ ফ্রাই কিংবা রাবড়ি দিয়ে মনে রেখেছেন সেই সব দূরপাল্লার ট্রেন-যাত্রা।

রেলের আধিকারিকদের একাংশের মতে, বেসরকারি বরাতের ধাক্কায় হারিয়ে গিয়েছে সেই সব সুস্বাদু পাত। এক রেল কর্তার দাবি, দূরপাল্লার ট্রেনে খাবার সরবরাহের বরাত পেতে মোটা অঙ্কের টাকা লাইসেন্স ফি দেওয়া এখন দস্তুর। ফলে, যে টাকা যাত্রী পিছু খাবারের জন্য বরাদ্দ থাকে তাতে অন্য খরচ সামলে খাবারের মান ধরে রাখা প্রায় দুঃসাধ্য। তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ক্যাটারিং ছাড়াও, ট্রেন এবং স্টেশন পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ, এমনকি রেল-রক্ষণাবেক্ষণের একাধিক দায়িত্বও এখন ধীরে ধীরে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি সেই সব ঠিকাদার সংস্থার তত্ত্বাবধানে অনেক ক্ষেত্রেই তাই পরিষেবার মান আর বাড়েনি। আর তাই ধাপে ধাপে বেড়েছে যাত্রীদের অভিযোগ। তা কখনও সাধারণ স্লিপার এবং বাতানুকূল কামরায় সার্বিক পরিচ্ছন্নতা ঘিরে কখনও বা রেলের সরবরাহ করা খাবার নিয়ে।

Advertisement

রেলের কর্মী ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের প্রায়ই খুব কম বেতনে কাজ করতে হয়। ঠিকা কর্মীদের সিংহ ভাগই প্রাপ্য সুবিধা পান না। বরাত পাওয়া বেসরকারি সংস্থাও বাজারের ওঠাপড়া সামলে নিজেদের লাভের হার বজায় রাখতে চায়। এই টানাপড়েনে জোড়াতালি দিয়ে কাজের প্রবণতা বেড়েছে। লাগামছাড়া এই বেসরকারিকরণকেই তাই দুষছেন কর্মী সংগঠনের নেতারা। ইস্টার্ন রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার ঘোষের অভিযোগ, ‘‘বেসরকারিকরণের মাধ্যমে পরিচালন ব্যবস্থায় যে দক্ষতা আমদানির চেষ্টা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’’

তাঁর মতে, কর্মীদের কাজের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে পরিষেবার মান ফিরবে কী করে! একই ভাবে রেলেও মোটরম্যান এবং গার্ডদের ক্ষেত্রে অন্তত ২০ শতাংশ শূন্য পদ পূরণের কোনও চেষ্টাই রেল মন্ত্রক করেনি। ভারতীয় রেলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতি বছর অন্তত ২ শতাংশ পদে ছাঁটাই অব্যাহত। ইস্টার্ন রেলওয়ে মেন্স কংগ্রেসের সভাপতি বিনোদ শর্মার কথায়, ‘‘সম্প্রতি শিপ্রা এক্সপ্রেসে যাত্রী হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। পরিষেবা নিয়ে প্রতিবাদ করে যাত্রী হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ নিয়ে প্রতিবাদপত্র দিয়েছি। বেপরোয়া এই বেসরকারিকরণ করতে গিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণই কমে গিয়েছে।’’

রেলের শীর্ষ কর্তারা এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁদের দাবি, বোর্ডের নির্দেশ মেনে পরিষেবার উন্নতি ঘটাতেই বেসরকারিকরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু ফল মিলছে কি? তাঁদের সংক্ষিপ্ত জবাব— বিভিন্ন অ্যাপ-এর মাধ্যমে কড়া নজরদারি তো চলছে, সুরাহার উপায় তো সেখানেই রয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement