ছবি: প্রতীকী
সকলের অলক্ষ্যে থাকা শক্ত হাতদুটো কোনও দিন বুঝতে দেয় না, কত ঝড় বয়ে যায় তাঁদের উপর দিয়ে। ‘বাবাদের’ চোখে জল আসতে দেখা যায় না কখনও। মুখ ফুটে মনের কথা বলতে পারেন না তাঁরা। চিরকাল সকলের ভার নিজেদের কাঁধে নিয়ে, অন্যের মুখে হাসি ফুটিয়ে থাকেন বাবারাই। কিন্তু দাম্পত্যে ইতি টানার পর কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে তার প্রভাব সন্তানের উপর এসে পড়া স্বাভাবিক। বাবাকে ছাড়া মায়ের কাছে বড় হওয়া সন্তানের মনে ‘বাবা’র অবস্থানও বদলে যেতে পারে। মুখে বলতে না পারলেও সন্তানের কাছে ভাল বাবা হয়ে ওঠার তাগিদ কিন্তু থেকেই যায়। আন্তর্জাতিক পিতৃদিবস গিয়েছে সম্প্রতি। তাই এমন পরিস্থিতিতে ‘বাবা’দের ভূমিকা নিয়ে সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক লাইভ এবং ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘ভাল বাবা হতে চাই’।
প্রতি পর্বের আগে অনুত্তমার কাছে প্রশ্ন পাঠানো যায়। চিঠি পাঠিয়েছেন, আশুতোষ মল্লিক। তিনি বলছেন, “স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। তবে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব রয়ে গিয়েছে। অন্য শহরে থাকা স্ত্রীর পক্ষে একা সন্তানকে বড় করে তোলা সম্ভব ছিল না। তাই আমাদের যৌথ সিদ্ধান্তে আমাদের ছেলে আমার কাছে রয়েছে। আমার স্ত্রী পড়ান, গবেষণা করেন। পড়াশোনায় তিনি আমার চেয়ে অনেকটাই উচ্চ আসনে রয়েছেন। আমার এবং আমার স্ত্রীর যোগ্যতা আমাদের সম্পর্কের অন্তরায় হত। সেই নিয়ে আমার মনে দ্বন্দ্ব ছিল। আমার আর্থিক জোর থাকলেও মেধার দিক থেকে এগিয়ে ছিলেন আমার স্ত্রী। ইদানীং ছেলের পড়াশোনার মান বেশ খারাপ হচ্ছে। তাই বার বার নিজের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমি কি ছেলেকে মানুষ করতে পারছি না?”
অনুত্তমার উত্তর, “আপনার এবং আপনার স্ত্রীর শিক্ষাগত যে ফারাক, সম্ভবত সেই কারণেই আপনার মধ্যে গভীর এক হীনম্মন্যতা কাজ করছে। আপনার মনে হচ্ছে, এই মার্গের পড়াশোনা করলে তবেই হয়তো সন্তানকে প্রকৃত মানুষ করা সম্ভব। মাত্র বছর পাঁচেকের সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে এখনই ভাবার কি সত্যিই কোনও কারণ রয়েছে? বরং যে পরিবেশে আপনার সন্তান বড় হচ্ছে, আলাদা থাকলেও মায়ের সঙ্গে সন্তানের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এই যৌথতায় অভিভাবকত্বের অর্ধেক পথ পেরিয়ে যাওয়া যায়। আপনার এবং আপনার স্ত্রীর এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক, আপনাদের এই যৌথ অভিভাবকত্ব কিন্তু খুব বিরল। যা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। তবে মা-বাবার বিচ্ছেদ হওয়া মাত্রই যে সন্তানের পড়াশোনা খারাপ হয়ে যায়, এমনটা ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই।”