পুলিশের ‘অজ্ঞতা’য় হল না মৃতের চক্ষুদান

বছর কয়েক আগেই মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের লোকেরাও ওই অঙ্গীকারকে মর্যাদা দিতে তাঁর চোখ দু’টি দান করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ, যেহেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বিপিন ভকারিয়ার (৭২), তাই ময়না-তদন্তের আগে তাঁর চোখ দান করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয় পুলিশ। অথচ সরকারি নিয়মেই রয়েছে, ময়না-তদন্তের সময়ে যদি চোখের আলাদা ভূমিকা না থাকে, তা হলে ওই তদন্তের আগে চোখ সংগ্রহ করতে কোনও বাধা নেই।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০২:২৮
Share:

বছর কয়েক আগেই মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের লোকেরাও ওই অঙ্গীকারকে মর্যাদা দিতে তাঁর চোখ দু’টি দান করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ, যেহেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বিপিন ভকারিয়ার (৭২), তাই ময়না-তদন্তের আগে তাঁর চোখ দান করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয় পুলিশ। অথচ সরকারি নিয়মেই রয়েছে, ময়না-তদন্তের সময়ে যদি চোখের আলাদা ভূমিকা না থাকে, তা হলে ওই তদন্তের আগে চোখ সংগ্রহ করতে কোনও বাধা নেই।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে পুলিশের সমন্বয়ের অভাবে বহু ক্ষেত্রেই চক্ষুদান আন্দোলন এ ভাবে ধাক্কা খাচ্ছে বলে অভিযোগ এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের। পুলিশের তরফে এ ব্যাপারে থানাগুলিতে নির্দিষ্ট নির্দেশ না থাকার জন্য মাঝেমধ্যেই এমন সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। গোটা বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ বিপিনবাবুর পরিবার। তাঁদের বক্তব্য, দু’টি দফতরের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবের জেরে এক বৃদ্ধের শেষ ইচ্ছেটুকু অপূর্ণই থেকে গেল।

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ময়না-তদন্তের আগে পরিবারের সম্মতিক্রমে মৃতের চোখ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে কোনও আইনি বাধা নেই। কিন্তু এই বিষয়ে রাজ্যের থানাগুলিতে কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই। গত এক বছরে স্বাস্থ্য দফতরে এমন প্রায় ২৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে।

Advertisement

স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, অন্য বহু শহরেই পুলিশকর্তারা এই বিষয়ে থানাগুলিকে লিখিত নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন। ফলে সেখানে এই ধরনের জটিলতা অনেক কম। উদাহরণ হিসেবে মুম্বই ও জয়পুরের দু’টি নির্দেশের উল্লেখ করেছেন তাঁরা। সেখানে ‘ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন অব হিউম্যান অর্গ্যানস অ্যাক্ট, ১৯৯৪’ উদ্ধৃত করে বলা রয়েছে, মৃত্যুর ছ’ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হয়। কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে যদি ময়না-তদন্তের সময়ে চোখের আলাদা ভূমিকা না থাকে, তা হলে ওই তদন্তের আগে চোখ সংগ্রহ করতে কোনও বাধা নেই।

এ দিন দুপুরে ব্রাবোর্ন রোডে এক দুর্ঘটনায় আহত হন বিপিনবাবু। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। যেহেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু, তাই ময়না-তদন্ত বাধ্যতামূলক। ময়না-তদন্তে দেহটি পাঠানোর আগে মেডিক্যাল কলেজে চোখ দান নিয়ে কাজ করে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, তাদের তরফে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরিবারের লোকেরা জানান, বিপিনবাবু বছর কয়েক আগেই অঙ্গীকার পত্রে সই করেছিলেন। তাই তাঁরাও চোখ দু’টি দান করতে ইচ্ছুক। অভিযোগ, এই সময়েই বাদ সাধে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। তারা জানিয়ে দেয়, ময়না-তদন্তের আগে চোখ সংগ্রহ করা যাবে না। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে ভাস্কর সিংহ বলেন, “আমরা বারবার বলেছিলাম, চার ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরে চোখ সংগ্রহ করলে তা আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। কিন্তু হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ আমাদের কোনও কথাই শুনতে চায়নি। এ ভাবে বারবার সমন্বয়ের অভাব ঘটতে থাকলে চক্ষুদান আন্দোলন বড়সড় ধাক্কা খাবে।”

হেয়ার স্ট্রিট থানা অবশ্য দাবি করেছে, কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিপিনবাবুর পরিবার তাঁর দেহদানে উদ্যোগী হয়েছে ভেবেই তারা ময়না-তদন্তের আগে তা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল। যদিও হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা জানিয়েছেন, ভুল বোঝাবুঝির কোনও অবকাশই নেই। তাঁরা স্পষ্ট ভাবেই চোখ দানের কথা জানিয়েছিলেন।

‘ভুল বোঝাবুঝি’ না হলে কি তাঁরা কোনও আপত্তি তুলতেন না? এ প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি পুলিশের কাছে।

স্বাস্থ্য দফতরের চক্ষু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সহকারি স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “মেডিকো-লিগ্যাল জটিলতা এড়িয়ে কী ভাবে এই প্রক্রিয়াটা আরও সরল করা যায়, সে নিয়ে আমাদের ভাবনাচিন্তা চলছে। যত মৃত্যু হয়, তার মধ্যে এক শতাংশ মানুষও যদি চোখ দান করেন, তা হলে আমাদের চাহিদা মিটতে পারে। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। তাই যে কোনও দান বাধা পেলেই তা আমাদের কাছে বড় ক্ষতি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement