বমি, পেটে ব্যথা নিয়ে মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সাত জন। রাতে মৃত্যু হল এক বালিকার। খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরেই দুর্গাপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেনাচিতির প্রান্তিকা লাগোয়া তালতলা বস্তির বাসিন্দা জেসমিন খাতুনের (৯) মৃত্যু হয়েছে বলে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। রেস্তোঁরা থেকে ফেলে দেওয়া বিরিয়ানি এনে খাওয়ার পরেই সাত জন অসুস্থ হন বলে মৃতের পরিবার সূত্রে খবর। পরিবারের তরফে কোথাও কোনও লিখিত অভিযোগ না করা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বেনাচিতির এক রেস্তোঁরা থেকে ফেলে দেওয়া বিরিয়ানি সংগ্রহ করে এনেছিল তাজ মহম্মদ নামে এক বালক। সেই খাবার খাওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই বমি শুরু করে সবার। শুরু হয় পেটব্যথা। আট মাসের এক শিশু-সহ সাত জনকে প্রথমে দুর্গাপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সন্ধ্যায় দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পথেই মারা যায় তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া জেসমিন। বাকিরা ওই হাসপাতালে ভর্তি। তাজ মহম্মদ জানায়, সে প্রতি দিন সকালে ওই রেস্তোঁরা থেকে খাবার সংগ্রহ করে। তার কথায়, ‘‘সকাল ৫টা নাগাদ ওখান থেকে বিরিয়ানি আনি। কিন্তু এ দিন আমি খাইনি। বাকিরা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আগে কোনও দিন এমন হয়নি। এ বার কী হল জানি না।’’
মহকুমাশাসক জানান, এসিএমওএইচ এবং এক জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠিয়ে বিশদ রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বুধবার বিকেলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ধলেশ্বরী কোড়া এবং এসিএমওএইচ শকুন্তলা সরকার ওই রেস্তোঁরায় তদন্তে যান। পরে এসিএমওইচ বলেন, ‘‘তদন্ত একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কিছু বলার সময় আসেনি।’’ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জানান, ওই বস্তিতেও তদন্তে যাবেন তাঁরা।
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য অসুস্থদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের তরফে তাঁদের ডিএসপি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।’’ ওই রেস্তোঁরার কর্ণধার নাসিম খান বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। তবে আমাদের কোনও ক্রেতা খাবার নিয়ে এ দিন কোনও অভিযোগ জানাননি। আমরা প্রশাসনের তদন্তে সহযোগিতা করছি।’’
মহকুমাশাসক কস্তুরীদেবী জানান, প্রশাসনের তরফে ওই পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হবে। স্থানীয় কাউন্সিলর মৃগেন পালের আশ্বাস, ‘‘পুরসভার পক্ষ থেকেও ওই পরিবারকে কী ভাবে সহযোগিতা করা যায় দেখা হচ্ছে।’’