Food Habits

উৎসবে সতর্ক হন খাদ্যপ্রেমিক বাঙালি

পুজোর দিনগুলোয় পরিমিত খান, সুস্থ থাকুন।

Advertisement

কোয়েনা দাশগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৬
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পুজোর দিনগুলোয় আমরা ঠিক কী কী খাব, তার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই সারা থাকে। সপ্তমীতে রোল-চাউমিন, অষ্টমীতে বিরিয়ানি, নবমীতে লুচি-মাংস আর দশমীতে হরেক মিষ্টি। কিন্তু সারা বছর পেটের নানা অসুস্থতায় ভুগছেন যাঁরা, তাঁরা কী করবেন? চোখের সামনে চারিদিকে হরেক রকম খাবারের হাতছানি। কিন্তু উৎসবের দিনে অসুস্থতার কারণে কি বঞ্চিত হবেন তাঁরা? জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “ডায়েট, অসুস্থতা, গ্যাস-অম্বলের চোখরাঙানি ভুলে এই ক’দিন মন ভরে খান সবাই। শুধু মেনে চলুন নিয়ম, করে ফেলুন আগাম পরিকল্পনা।”

Advertisement
  • পুজোর সকালে উপোস করেন অনেকেই। অঞ্জলি দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে লুচি, খিচুড়ি, তরকারি একেবারেই নয়। বরং মিষ্টি, ফল, খেজুর, ডাবের জল এ সব খান।
  • পুজো মানেই মিষ্টি। তাই প্যান্ডেল হপিংয়ে ঘেমেনেয়ে গেলে জলের সঙ্গে খান মিষ্টি। এনার্জি বাড়বে।
  • পুজোর সময় খাবারের অনিয়ম হয়েই থাকে। তাই অ্যালকোহল, তামাকজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলুন। খাবারের সঙ্গে অ্যালকোহলে অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা থাকে।

যাঁদের সমস্যা রয়েছে

Advertisement
  • অ্যালার্জিক যাঁরা: কোনও ব্যক্তি একটি বা কয়েকটি নির্দিষ্ট খাবারেই অ্যালার্জিক হতে পারেন। পুজোর সময় সে ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা ভাল। পাশাপাশি মাশরুম বা কাঁকড়ার মতো বেশ কিছু খাবার অনেকেই পুজোর সময়ে শখ করে খান। উৎসবের সময়ে এ সব না খাওয়াই ভাল। অনেক সময়েই কিছু খাবারে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা না থাকলেও, ভাল মতো ধোয়া বা রান্না না হওয়ার কারণে তা হয়ে যায়। ঠিক সময়ে অ্যালার্জির চিকিৎসা না হলে, প্রাণসংশয় পর্যন্ত হতে পারে। তাই অ্যালার্জিক খাবার যেমন চিংড়ি, মাশরুম ইত্যাদি এ সময়ে নতুন করে না খাওয়াই ভাল।
  • পেটের সমস্যা থাকলে: অনেকেরই নিয়মিত পেটের সমস্যা লেগে থাকে। প্যান্ডেল ঘুরে ঠাকুর দেখতে চাইলে পুজোর এই ক’টা দিন সচেতন থাকুন। বাইরের খাবার খাওয়ার আগে হাইজিন নিয়ে সতর্ক হন। হাত ধুয়ে খান। চেষ্টা করুন ডিস্পোজ়েবল থালা-বাটি, চামচে খেতে। রাস্তাঘাটে মিনারেল ওয়াটার খান।
  • প্যানক্রিয়াসের সমস্যা: এ ধরনের সমস্যায় অনেকেই কেবল আলু সিদ্ধ, ভাত খেয়ে কাটান। তা ঠিক না। এতে প্যানক্রিয়াসের সমস্যা আরও বাড়ে। বরং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার ছেড়ে তাঁরা বেছে নিন প্রোটিন, গ্লুকোজ় ইত্যাদি খাবার। প্রোটিন হজমে সাহায্য করে পাকস্থলী। ফলে প্যানক্রিয়াসের উপরে চাপ কম পড়বে।
  • ডায়াবেটিক রোগীরা: উপোস করার আগে সাবধান। পুজোর আনন্দে দেদার মিষ্টি খাওয়া এবং সুগারের ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া দুই-ই যেন না ঘটে। লোভ সামলাতে না পারলে, কেবল এক-আধটা রসগোল্লা খেতে পারেন, তবে তা দুপুরের খাওয়ার পর খেলেই ভাল।
  • ছোট বাচ্চাদের জন্য: শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, অনেকেই বাড়ির ছোট্ট সদস্যটিকে বাইরের খাবার খাওয়ান না। কিন্তু, পুজোর ক’দিন বড়দের পাশপাশি ওদেরও এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা ঠিক না। তবে বাচ্চাদের বাইরে খাওয়ানোর আগে দোকানের খাবারের গুণগত মান, হাইজিন নিয়ে সতর্ক হন অভিভাবকরা। বাচ্চা বায়না করলেও ক্যান্ডি ফ্লস, আইস গোলা, কাঠি আইসক্রিমের মতো রংবেরঙের খাবার একেবারেই দেবেন না। রাস্তার ধারের দোকানের খাবার, ফুচকা-আলুকাবলি, কাটা ফল এ সব থেকেও দূরে রাখুন। ডা. রায়চৌধুরীর মতে, বাড়িতে তেলমশলা যুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যেস থাকলে, নিশ্চিন্তে বাচ্চাকে বাইরেও চাইনিজ়, ইন্ডিয়ান, মোগলাই সব ধরনের খাবার দিতে পারেন। মোটামুটি সময় মেনে খাওয়াতে পারলে ভাল, না হলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে চকলেট, আইসক্রিমও দিতে পারেন।
  • গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে: যাঁরা সন্তানসম্ভবা, তাঁদের অবশ্যই নিয়ম মেনে চলতে হবে। ঘরোয়া খাবার খেলেও, উৎসবের সময় বলে নানা খাবার নৈব নৈব চ। আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্কস, বাইরের সংক্রমিত খাবার খেয়ে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে, গ্যাস-অম্বল-ডায়রিয়ায় ভুগলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

সচেতনতা

ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “যা-ই খান, সঙ্গে বেশি করে জল পান করুন। পরিমাণ মতো জল পান নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। যাঁরা নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খান, তাঁরা সকালেই খালি পেটে খেয়ে নিন ওষুধটা। একান্তই যদি ডায়রিয়া হয়, ভয় পাবেন না। চট করে ওষুধও কিনে খেয়ে নেবেন না। ডায়রিয়া তখনই হয়, যখন শরীরে কোনও জীবাণু প্রবেশ করে। প্যান্ডেল হপিংয়ের নেশায়, ওষুধ খেয়ে তাতে বাধা দিলে ক্ষতি হবে শরীরেরই। বরং এ সময় চাইলে খেতে পারেন কিছু গাট-স্পেসিফিক অ্যান্টিবায়োটিক। এগুলো শরীরে না গিয়ে, খাদ্যনালিতে থাকে ও সেখানেই জীবাণুকে বিনাশ করে।”

এ বিষয়ে সহমত ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরীও। তিনি বললেন, খাবারের অনিয়মে বা ফুড পয়জ়নিংয়ের কারণে বাচ্চার বমি, ডায়রিয়া হলে প্রাথমিক ভাবে চিন্তার কারণ নেই। দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিকস না কিনে চিকিৎসকের পরামর্শে জ়িঙ্ক, প্রোবায়োটিক জাতীয় ওষুধ দিন। সঙ্গে ওআরএসের জল খাওয়ান। বমি, পায়খানা হলেও পেট খালি রাখবেন না। প্রয়োজনে অল্প ভাত দিন। এ সময় টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এ ইত্যাদিও হতে পারে। তাই বাচ্চা নেতিয়ে পড়লে, জল খেতে না চাইলে হাসপাতালে নিয়ে যান।

বাড়ির কোনও সদস্য গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো পরিবারের আনন্দ নষ্ট হবে। তাই বুঝে খান, সুস্থ থাকুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement