অভিযোগ মানলেন চিকিৎসক

পাতে পচা খাবার, রোগীরা সামিল বয়কট-বিক্ষোভে

শিকেয় স্বাস্থ্যবিধি। বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতালের রোগীদের পাতে দুর্গন্ধযুক্ত খাবার দেওয়ার অভিযোগ উঠল। খোদ হাসপাতালের চিকিৎসকই লিখিত ভাবে রোগীদের দুর্গন্ধযুক্ত ডাল ও ভাত পরিবেশন করার কথা স্বীকারও করে নিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিনপুর শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫২
Share:

দুর্গন্ধযুক্ত খাবার দেখাচ্ছেন রোগীরা (ইনসেটে) বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতাল। — নিজস্ব চিত্র।

শিকেয় স্বাস্থ্যবিধি।

Advertisement

বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতালের রোগীদের পাতে দুর্গন্ধযুক্ত খাবার দেওয়ার অভিযোগ উঠল। খোদ হাসপাতালের চিকিৎসকই লিখিত ভাবে রোগীদের দুর্গন্ধযুক্ত ডাল ও ভাত পরিবেশন করার কথা স্বীকারও করে নিলেন। রবিবার রাতে বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতালের ওই ঘটনায় জঙ্গলমহলে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার মান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। রবিবার রাতের খাবারে রোগীদের দেওয়া হয়েছিল ভাত, ডাল ও তরকারি। খাবার মুখে দিয়েই ফেলে দেন রোগীরা। অভিযোগ, রাতের খাবারে পচা ভাত ও ডাল দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিজনেরা। বিনপুরের স্থানীয় ‘নয়াগ্রাম ইয়ুথ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠনের লোকজন হাসপাতালে হাজির হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। কর্তব্যরত চিকিত্‌সক কবিতা সিংহ ঘোষকে লিখিত অভিযোগ দেন তাঁরা। খাবার পরীক্ষা করে অভিযোগের প্রাপ্তিস্বীকার পত্রে কবিতাদেবী লিখে দেন, ‘সার্টিফায়েড দ্যাট ভাত ও ডাল গন্ধযুক্ত’।

রোগীর পরিজন ও এলাবাসীর অভিযোগ, এটা এক দিনের ঘটনা নয়। এমনিতেই খাবারের মান ভাল নয়। তার উপর বেশ কিছুদিন ধরে রাতে বাসি খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেই খাবার খেয়ে রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রবিবার রাতের খাবার পরিবেশনের পরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। পচা খাবার পরিবেশনের অভিযোগে খাবার বয়কট করেন রোগীরা। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে পাঁউরুটি ও মিষ্টি এনে রোগীদের ক্ষোভ সামাল দেন। সোমবারও হাসপাতালের খাবার খেতে রাজি হন নি রোগীরা। পরে ঠিকাদারের লোকেরা ঝাড়গ্রাম থেকে খাবার এনে পরিবেশন করেন।

Advertisement

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দিনের পর দিন এই পরিস্থিতি চললেও কেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চুপ করে রয়েছেন? ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিকদের কাছে ইতিপূর্বে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন এলাকাবাসী। কয়েক মাস আগে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ ওঠায় ঠিকাদারের পরিবর্তে স্থানীয় স্ব সহায়ক দলের মাধ্যমে হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করার দাবি জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। তখন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, খাবারের মান নিয়ে আর কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু তার পরও পরিস্থিতি এতটুকুও বদলায়নি।

বিনপুর-১ ব্লকের ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ রাজকুমার মণ্ডল বলেন, “রবিবার রাতের খাবারে গন্ধ ছিল বলে রোগীরা অভিযোগ করেছিলেন। ঝাড়গ্রামের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। এ দিন রোগীদের জন্য ঝাড়গ্রাম থেকে খাবার আনা হয়েছিল। আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা মিটে গিয়েছে।” খাবার দেওয়ার বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সুভাষ দাস ফোনে বলেন, “আমি এক আত্মীয়ার চিকিত্‌সার জন্য ভেলোরে এসেছি। অভিযোগ শুনেই সমস্যা মেটানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। এ দিন আমার কর্মীরা ঝাড়গ্রাম থেকে খাবার নিয়ে গিয়ে সরবরাহ করেছেন।”

বিনপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নয়াগ্রাম ইয়ুথ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি’-এর সম্পাদক শেখ শানদার আলি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও ভ্রূক্ষেপ করছেন না। উল্টে খাবারের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে আড়াল করা হচ্ছে। রবিবার পচা খাবার দেওয়ার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের হয়ে সাফাই গাইছেন। এর থেকেই স্পষ্ট যে, বিশেষ কোনও বোঝাপড়ার কারণেই সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষা করা হচ্ছে।”

৩০ শয্যা বিশিষ্ট বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতালে সব দিনই রোগীর চাপ থাকে। বাড়তি রোগীদের ঠাঁই হয় ওয়ার্ডের মেঝেয়। খাবারের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারের কর্মীরা দায়সারা ভাবে রান্না করেন বলে অভিযোগ। কখনও সকালের বাড়তি ভাত-ডাল পচে গেলেও রাতে সেগুলি পরিবেশন করা হয়। হাসপাতালের শৌচাগারগুলির নরককুণ্ড অবস্থা। পরিষ্কার না করায় শৌচাগারগুলি ব্যবহারের অযোগ্য। চিকিত্‌সাধীন পূর্ণিমা সরেন, সেক শাহাজাহান, সেক আজিজুল ইসলাম, গণেশ মুর্মুদের আক্ষেপ, “ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলা হয়েও তো স্বাস্থ্য পরিষেবা হাল ফিরল না।”

ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “সকালের পচে যাওয়া ডাল-রাত রাতে রোগীদের দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কম শয্যা বিশিষ্ট গ্রামীণ হাসপাতালে স্ব সহায়ক দলকে রান্নার দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা আছে। বিনপুরে স্ব সহায়ক দলের মাধ্যমে রান্নার বন্দোবস্ত করার জন্য পদক্ষেপ করা হবে। হাসপাতালে সার্বিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নজরদারি চালানো হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement