চিকিৎসার গাফিলতিতে বধূর মৃত্যুর অভিযোগের মামলায় দুই চিকিৎসক এবং এক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করল জলপাইগুড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। ২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ওই মামলা করেন সদর ব্লকের ঘুঘুডাঙা এলাকার বাসিন্দা মৃত বধূর স্বামী পেশায় মাছ বিক্রেতা প্রদীপ দাস। গত বৃহস্পতিবার ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের তিন জনের বেঞ্চ ৭ লক্ষ ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেয়। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত বধূর নাম চিরন দাস (৩০)। পেটে অপারেশনের পরে ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে মারা যান। মৃতের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী বিপুলরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “পরীক্ষা ছাড়া বধূর পেটে দু’বার অপারেশন করা হয়। এটা বড় মাপের অপরাধ। আদালত এক মাসের মধ্যে জরিমানার টাকা বধূর পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেটা না হলে ৮ শতাংশ হারে সুদ দিয়ে জরিমানার টাকা দিতে হবে।” অভিযুক্তরা মুখ খোলেননি। তাঁদের আইনজীবী মৃগাঙ্কশেখর ভদ্র এবং সুমিত কুমার জানান, নিম্ন আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে তাঁরা রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে আপিল করবেন। সুমিত কুমার বলেন, “চিকিৎসায় গাফিলতির কথা বলা হয়েছে কিন্তু কি গাফিলতি হয়েছে সেটা স্পষ্ট ভাবে বলা হয়নি। শুধু তাই নয়। বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়নি। চিকিৎসক এবং নার্সিং হোম কতৃপক্ষ যে নির্দোষ সেটা উচ্চ আদালতে প্রমাণ হবে।” মৃত বধূর স্বামী প্রদীপবাবু জানান, ২০১৩ সালের ৫ অগস্ট হঠাৎ পেটে ব্যাথা অনুভব করায় তিনি স্ত্রীকে জলপাইগুড়ি শহরের এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ওই চিকিৎসক চিরন দেবীকে শহরের এক নার্সিং হোমের শল্য চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে দেন। অভিযোগ, শল্য চিকিৎসক পরীক্ষা না করেই রোগীকে নার্সিং হোমে ভর্তি করে ১৫ অগস্ট তাঁর অ্যাপেনন্ডিক্স অপারেশন করেন। দু’দিন পরে মলদ্বার দিয়ে রক্ত ক্ষরণ শুরু হলে রোগীকে তড়িঘড়ি শিলিগুড়ির একটি নার্সিং হোমে পাঠানো হয়। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, কোনও পরীক্ষা ছাড়া সেখানে শল্য চিকিৎসক রোগীর পেটে ক্যানসার হয়েছে বলে অন্য একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে বলেন। প্রদীপবাবু বলেন, “অন্য নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে ফের অপারেশন করায় স্ত্রীর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়। চিকিৎসক এবং নার্সিংহোমের গাফিলতিতে স্ত্রী মারা যান।” প্রদীপবাবুর আইনজীবী বিপুলরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত দুই চিকিৎসক এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ঘটনার জন্য দায়ী করে জরিমানা করে।