বাড়তি ওজন ডেকে আনে নানা অসুখকে। ছবি:শাটারস্টক
এই রোগ থাকলে বাকি রোগও চেপে বসতে পারে শরীরে, শুধু করোনাই নয়। অসুখের নামটা কি জানেন? অসুখের নাম ওবেসিটি অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ওজন বা স্থূলত্ব। আমাদের দেশের ১৩৫ মিলিয়ন মানুষ ওবিস অর্থাৎ অল্পস্বল্প নয় বেশ মোটামুটি রকমের বাড়তি ওজন বয়ে চলেছেন।
পৃথিবীতে ওবেস মানুষের সংখ্যা প্রায় ১.৯ বিলিয়ন। এঁদের মধ্যে ওবিস হলেন ৬৫০ মিলিয়ন। না এখানেই শেষ নয়, বরং গল্পের শুরু বলা যায়। শুধুমাত্র ওবেসিটির কারণে প্রতি বছরে মারা যান ২.৮ মিলিয়ন মানুষ।
সেন্ট্রাল ওবেসিটি অর্থাৎ পেটে চর্বি জমলে একে একে লাইফস্টাইল ডিজিজ এসে কাবু করে ফেলে, বললেন মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সরকার। ইদানিং বাড়তি ওজন ঝরানোর ব্যপারে সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। তবে অনেকেই চটজলদি ওজন কমাতে গিয়ে স্বল্প সময়ে শর্ট কাট পদ্ধতির সাহায্য নেন। এর ফলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, বললেন ইন্টারন্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল।
আরও পড়ুন: এই ফলের বীজেই কেল্লাফতে, ভুলেও ফেলে দেবেন না কিন্তু
ওজন কমানোর একমাত্র বিজ্ঞানসম্মতভাব পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন ১ ঘণ্টা করে শরীরচর্চা ও হাঁটাহাঁটি করা, বললেন দীপঙ্কর বাবু। তবে গা ঘামিয়ে ব্যায়াম বা মর্নিং ওয়াকের বদলে অনেকে স্লিমিং সেন্টারে গিয়ে চটজলদি ওজন ঝরানোর চেষ্টা করেন। এর ফলে সাময়িক কিছুটা ওজন কমলেও আবার যে কে সেই।
বেঢপ চেহারা দেখে মোটা ভাবলেও আসলে অর্ধেকটা দেখতে পাওয়া যায়। বেশি খাবার খেয়ে ও অলস জীবন যাপন করার জন্যে যখন শরীরের বাইরে মেদ জমে একই সঙ্গে শরীরের ভেতরের নানা অঙ্গে চর্বির প্রলেপ পড়ে, বললেন দীপঙ্কর সরকার। রক্তবাহী শিরা ধমনিতে চর্বির প্রলেপ জমে যাওয়ায় হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি সহ প্রায় সব কটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচল কমে যায়। ফলে হার্ট তো বটেই অন্যান্য অঙ্গগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সঙ্গে অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্ষমতাও কমে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?
অগ্ন্যাশয় দুর্বল হয়ে গেলে ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়ে। ডায়াবিটিসে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করলে হৃদযন্ত্রের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই শৃঙ্খলের মতো, জানালেন দীপঙ্কর সরকার। এই কারণেই ছোট থেকেই শরীর চর্চা ও সঠিক ডায়েট করে ওজন স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
আরও পড়ুন: দিনরাত ল্যাপটপ-ফোনে কাজ, চাপ পড়ছে চোখে, কী করবেন কী করবেন না
বাড়তি ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই খাওয়া বন্ধ করে শুধুমাত্র প্রোটিন শেক আর শসা খেয়ে দিন কাটান। এই ব্যাপারটা ঠিক নয়। প্রথমেই রক্তচাপ, হার্টের অবস্থা ও রক্তে চিনির মাত্রা জেনে নিয়ে তবেই ওজন কমানোর জন্যে শরীরচর্চা ও হাঁটাহাঁটি শুরু করতে হবে। অনেক সময় ওজন কমাতে গিয়ে হাঁটা চলা শুরু করলে বুক ধড়ফড় করে ও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ট্রেড মিল টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত, পরামর্শ পুষ্পিতা মণ্ডলের।
ওজন কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কিছুটা কমাতে হবে।
শরীরচর্চা আর নিয়ম করে ৪০ মিনিট দ্রুত পায়ে হাঁটাই হল ওজন কমানোর বিজ্ঞান সম্মত ও সহজ উপায়। যারা বাড়তি ওজনের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই ধারণা, ওজন কমানোর সহজ উপায় না খেয়ে বা শুধুমাত্র শসা আর লাউ খেয়ে থাকা। ডায়েট মানে বয়স, কাজের ধরন আর ওজন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে।
সুষম খাবার না খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে অসুখের ঝুঁকি বাড়বে, বললেন নিউট্রিশনিস্ট ইন্দ্রাণী ঘোষ। ওজন কমাতে গেলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কিছুটা কমাতে হবে। ভাত রুটি খাওয়া বন্ধ করার দরকার নেই। বরং তেল, চিনি ও মিষ্টি খাওয়া একেবারে কমিয়ে ফেলা দরকার।
প্রত্যেকদিন ছোট ছোট করে চার পাঁচটা মিল খেতে হবে। ভাত ও রুটির পরিমাণ কমিয়ে ফল ও সবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাঁর সঙ্গে চাই পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস। টাটকা ফল সবজিতে ভিটামিন ও মিনারেলস আছে। মাছ, চিকেন, ডাল খাওয়া দরকার নিয়ম করে,পরামর্শ ইন্দ্রাণী দেবীর।
ওজন কমাতে অনেকেই ভুলভাল ওষুধ কিনে খান। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। রোগা হওয়ার ওষুধ থেকে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া এই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে হজম ক্ষমতা কমে যায়, অবসাদ বেড়ে যায়। তাই কোনও চটজলদি সহজ উপায় নয়, শরীরচর্চা করে ঘাম ঝরিয়ে ওজন কমান, এখন থেকে শুরু করলে পুজোয় পেয়ে যাবেন ঝরঝরে চেহারা।