Blood

ওষুধ নয়, রক্তই জীবনদায়ী

মশার উপদ্রবে প্রাণ ওষ্ঠাগত। এ দিকে উড়ন্ত শত্রুর পিনপিন শুনলে অলক্ষ্যে কে যেন ডেঙ্গি ডেঙ্গি বলে হাঁক পাড়ে। ভয় পাবেন না, এই মারাত্মক জ্বরেরও একটা ভাল দিক আছে। আঁতকে উঠলেন নাকি! আসলে ডেঙ্গির চিকিৎসা প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষ প্রথম রক্তের উপাদান প্লেটলেটের কথা জেনেছেন। একজনের দান করা রক্তকে চারটি উপাদানে পৃথক করে চার চারজন মুমুর্ষ মানুষকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। বললেন, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমিউনোহেমাটোলজি ও ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের প্রধান অধ্যাপক ডা প্রসুন ভট্টাচার্য। মোগল সম্রাট বাবর তখন ৯ বছরের বালক। ১৪৯২ খৃষ্টাব্দ, দুর্ঘটনায় প্রচুর রক্তক্ষরণে ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অষ্টম পোপ ইনোসেন্ট। চিকিৎসক বিধান দিয়েছিলেন রক্তসঞ্চালন ছাড়া পোপকে বাঁচানো সম্ভব নয়।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ১২:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

মোগল সম্রাট বাবর তখন ৯ বছরের বালক। ১৪৯২ খৃষ্টাব্দ, দুর্ঘটনায় প্রচুর রক্তক্ষরণে ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অষ্টম পোপ ইনোসেন্ট। চিকিৎসক বিধান দিয়েছিলেন রক্তসঞ্চালন ছাড়া পোপকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তোড়জোড় করে তাই করা হল। কিন্তু বাঁচলেন না পোপ। এর ১৩৬ বছর পর ১৬২৮ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক উইলিয়াম হার্ভে রক্ত সংবহন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দেন। আলোড়ন পড়ে যায় চিকিৎসা বিজ্ঞানী মহলে। ১৭৯৫ সালে ফিলাডেলফিয়ায় আমেরিকান চিকিৎসক ফিলিপ স্যাং ফিসিক প্রথম মানুষের শরীরে সফল রক্ত সঞ্চালন করেন।

Advertisement

রক্ত কী ভাবে আমাদের ভাল রাখে

একজন পূর্নবয়স্ক মানুষের শরীরের মোট ওজনের ৭ থেকে ৮ শতাংশ ওজন রক্তের। রক্ত আমাদের শরীরের এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোষকলা যা শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে কোষকে বাঁচিয়ে রাখে। রক্তের হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন বহন করে কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। এ ছাড়া বেঁচে থাকার অন্যান্য উপাদান গ্লুকোজ, বিভিন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদিও রক্তের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। একই সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন বর্জ্য যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, ইউরিয়া, ল্যাকটিক অ্যাসিড সহ আরও নানান ক্ষতিকর পদার্থ শরীরের বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। আবার রক্তের শ্বেত কনিকা বিভিন্ন অসুখ বিসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। এ ছাড়া বিভিন্ন হরমোন সংবহন, পিএইচ ব্যালেন্স স্বাভাবিক রাখা, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা ইত্যদি অনেক কাজই রক্ত ছাড়া অচল।

Advertisement

আরও পড়ুন: মাইগ্রেনের ব্যথা হলেই এগুলো করুন, আরাম পাবেন

কখন রক্ত দেওয়ার দরকার হয়

দুর্ঘটনায় প্রচন্ড রক্তক্ষরণ, সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে স্ত্রীরোগ, অ্যানিমিয়া, সেপ্টিসিমিয়া, ডেঙ্গি অথবা অন্যান্য অসুখ বিসুখ বা ক্যানসারের কারণে শরীরে রক্তের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেলে শারীরিক কাজকর্ম ব্যহত হয়। এ ক্ষেত্রে ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে, প্রাণ সংশয় হতে পারে। আর এই কারণেই রক্তকে বলা হয় ফার্ষ্ট লাইন অফ ড্রাগ। রক্তের বিভিন্ন উপাদানকে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পৃথক করে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯৪০ সালের ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট অনুযায়ী রক্তের ওষধি গুণের মাপকাঠি নির্ধারণ করা আছে। এই আইন অনুযায়ী রক্তের গুণগত মান বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে রক্তের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট সঠিক পদ্ধতিতে আলাদা করে নিয়ে রোগীকে দেওয়া উচিত। অর্থাৎ, রক্তের যে কম্পোনেন্টের জন্য মানুষটি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেই কম্পোনেন্টটি দিলে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। যেমন ডেঙ্গি হলে যে প্লেটলেট দিতে হয় সে কথা কারও অজানা নয়। এ ক্ষেত্রে হোল ব্লাড বা পুরো রক্ত দেওয়া হলে বাকি কম্পোনেন্টগুলি অপচয় হবে।

আরও পড়ুন: কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে খেতে পারেন এই ৭ জুস

অপচয় বন্ধ করতে সচেতন হন

ডেঙ্গির মহামারির একটি ভাল দিক হল রক্তের উপাদান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হওয়া। ডেঙ্গি আক্রান্তের পরিজনেরা কখনওই রোগীর জন্য হোল ব্লাডের খোঁজ করেন না। তারা প্লেটলেটই চান। রক্তের বিভিন্ন উপাদান পৃথক করে তার সুনির্দিষ্ট ব্যবহার করার বিষয়টি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে ওয়াকিবহাল একজন ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ। মেডিক্যাল সায়েন্সের এই নতুন শাখাটি অন্য দেশ তথা আমাদের দেশের কয়েকটি রাজ্যে যথেষ্ট গুরুত্ব পেলেও পশ্চিমবঙ্গ এখনও পিছিয়ে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিতসকদেরও সচেতন হতে হবে। তাহলেই রক্তের হাহাকার অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে। একজনের দেওয়া রক্ত থেকে কমপক্ষে চারজন মুমুর্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। ১৮ বছর থেকে ৬৫ বছর বয়সী যে কোনও সুস্থ মানুষ রক্ত দান করতে পারেন। দাতার শরীর থেকে ৩৫০ সিসি থেকে ৪৫০ সিসি রক্ত নেওয়া হয়। জেনে রাখুন রক্ত দিলে কখনওই শরীর খারাপ হয় না। কিছু দিনের মধ্যেই রক্ত পূরণ হয়ে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement