ন্যাশনাল

রীতেশ-কাণ্ডের জেরে কড়া দাওয়াই পডুয়াদের

এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র রীতেশ জায়সবালের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ বার পড়ুয়াদেরও শৃঙ্খলায় বাঁধতে কঠোর হচ্ছেন তাঁরা। আগামী বছর থেকে পড়ুয়াদের বার্ষিক উৎসব ‘অ্যাগন’ আর চার দিন ধরে চলবে না। হবে দু’দিন। গভীর রাতের পরিবর্তে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে। তার পরেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে কলেজের অডিটোরিয়ামে।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৫১
Share:

রীতেশ জায়সবাল

এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র রীতেশ জায়সবালের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ বার পড়ুয়াদেরও শৃঙ্খলায় বাঁধতে কঠোর হচ্ছেন তাঁরা।
আগামী বছর থেকে পড়ুয়াদের বার্ষিক উৎসব ‘অ্যাগন’ আর চার দিন ধরে চলবে না। হবে দু’দিন। গভীর রাতের পরিবর্তে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে। তার পরেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে কলেজের অডিটোরিয়ামে। অনুষ্ঠান চলাকালীন কোনও ভাবে যাতে শৃঙ্খলা নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারেও চলবে নজরদারি। যে রাতে রীতেশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেই রাতে কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার মত্ত অবস্থায় ডিউটিতে ছিলেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল মে়ডিক্যালের কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে সেই বিষয়টিও সামনে এসেছে।
রীতেশের মৃত্যুর পরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল হাসপাতালের এক রেসিডেন্সিয়াল সার্জন এবং সার্জারি বিভাগের চার জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি)-র বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইতিমধ্যেই বরখাস্ত হয়েছেন রেসিডেনশিয়াল সার্জন সুমন দাস। দুই পি়জিটি-র বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ গিয়েছে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
রীতেশের মৃত্যুর পরে এ দিনই প্রথম কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক বসেছিল ন্যাশনালে। সেখানেই উঠে এসেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। কলেজ কাউন্সিলের এক সদস্য জানান, সেই রাতে ‘অ্যাগন’ চলছিল। বহু পড়ুয়াই মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একাধিক জন মত্ত অবস্থাতেই রাতে ডিউটিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার জেরে একাধিক ছোট-বড় সমস্যার কথা তাঁদের কানে এসেছে। ওই সদস্য বলেন, ‘‘রীতেশের মৃত্যু গোটা বিষয়টিকে বড় বেশি বেআব্রু করে দিল। এখনই সামলানো না হলে এমন সর্বনাশ ভবিষ্যতেও হতে পারে।’’
বছর কয়েক আগে ওষুধ সংস্থার টাকায় হাসপাতালের পরিষেবা লাটে তুলে বেড়াতে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এই উৎসবের সময়েই। সে নিয়েও স্বাস্থ্য ভবন থেকে কর্তৃপক্ষের কৈফিয়ত তলব করা হয়েছিল। এ বার ফের সেই উৎসবকে ঘিরে এত বড় সমস্যা ঘটায় স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে ন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ।
এ দিনের বৈঠকে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের আরও বেশি করে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অধ্যক্ষা। কোনও মেডিক্যাল পড়ুয়ার সামান্য বেচাল দেখলেই তা জানাতে বলা হয়েছে। ওই দুই পিজিটি ছিলেন সার্জারি বিভাগের অধীনে। তাই তাঁদের শাস্তির পাশাপাশি সার্জারির বিভাগীয় প্রধান কাজী রহমানকেও তাঁর পদ থেকে সরানোর দাবি উঠেছিল। তিনি আপাতত ছুটিতে। এ দিন যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।

Advertisement

ন্যাশনালের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, ‘‘সকলকেই সতর্ক হতে হবে। কারণ এই দায়িত্ব আমাদের সকলেরই। দিন কয়েকের মধ্যে নোটিস জারি করছি। বিভাগীয় প্রধানদেরও যা বলার ইতিমধ্যে বলে দেওয়া হবে।’’

গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে বেকবাগান এলাকায় মোটরবাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন রীতেশ। তাঁর সঙ্গীরাই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সঙ্গীদের অভিযোগ ছিল, সার্জারি বিভাগে ভর্তির পরেও প্রায় আট ঘণ্টা বেঁচে ছিলেন রীতেশ। তাঁর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হচ্ছিল। কিন্তু কোনও সিনিয়র চিকিৎসককে তখন হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। সার্জারি বিভাগে সেই রাতে সুমনবাবুর পাশাপাশি ডিউটিতে ছিলেন পিজিটি সৌরভ চক্রবর্তী ও বিকাশ কুমার। অভিযোগ, তাঁরা রীতেশকে ওই অবস্থায় দেখেও সিটি স্ক্যান, এক্স-রে বা রক্তপরীক্ষার মতো প্রাথমিক চিকিৎসাও করেননি। ১৪ তারিখ সকালে রীতেশের মৃত্যু হয়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে আরও কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল কলেজ হস্টেলে ঢোকা ও বেরোনোর নিয়মকানুন। রাত আটটার পরে হস্টেল থেকে বেরোনোর উপরে নিষেধাজ্ঞা বসছে। যদি বিশেষ কোনও কারণে বেরোতেই হয়, তা হলে হস্টেল কমিটিকে জানিয়ে আলাদা খাতায় সই করে যেতে হবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বেশ কিছু রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজেই ভর্তির সময়ে পৃথক একটি ফর্মে সই করানো হয়। তাতে কয়েকটি বিষয়ে শৃঙ্খলা মানার জন্য মুচলেকা দিতে হয় পড়ুয়াদের। সেই ফর্মের একটি প্রতিলিপি পাঠিয়ে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের অভিভাবকের কাছেও। বিষয়গুলি না মানলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করার অধিকার থাকে কর্তৃপক্ষ‌ের। ন্যাশনালেও সেই নিয়ম চালু করার কথা ভাবা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement