এক সময়ে গ্রামাঞ্চলের জন্য এনআরএইচএম (ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন) প্রকল্প চালু হয়েছিল। পরে শহরাঞ্চলের জন্য এনইউএইচএম (ন্যাশনাল আর্বান হেলথ্ মিশন) প্রকল্প চালু হয়। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরে সেই প্রকল্পের কাজ শুরু হতে চলেছে। আর তা শুরু হবে মেদিনীপুর দিয়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “মেদিনীপুর শহরে এনইউএইচএম প্রকল্প চালু হবে। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো থাকবে।” শহরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “এই প্রকল্পে শহরে তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি হবে। ইতিমধ্যে জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে।”
আগের থেকে মেদিনীপুর শহরের চেহারা বদলে গিয়েছে অনেক। জনসংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় পৌনে দু’লক্ষ। পুর-এলাকায় যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো রয়েছে তা চাহিদার তুলনায় সামান্যই। শহরেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে পরিকাঠামো থাকা উচিত, যে রকম পরিষেবা মেলা উচিত, তা এখানে নেই বলেই শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ। অনেক সময়ই সিনিয়র ডাক্তাররা থাকেন না। দায়িত্ব সামলান জুনিয়র ডাক্তাররাই। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এনআরএইচএম প্রকল্পে যে ভাবে কাজ হয়, এনইউএইচএম প্রকল্পেও সে ভাবে কাজ হবে। গোড়ার দিকে থাকবেন আশার মতো স্বাস্থ্য কর্মীরা। এলাকায় এলাকায় মহিলা আরোগ্য সমিতিও থাকবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মেদিনীপুরের পর ঝাড়গ্রাম শহরে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এরপর রয়েছে খড়্গপুর, ঘাটাল শহর। মেদিনীপুর শহরে সব মিলিয়ে ১২৬টি মহিলা আরোগ্য সমিতি তৈরি হওয়ার কথা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “৫০-১০০টি বাড়ি পিছু একটি করে মহিলা আরোগ্য সমিতি থাকবে। ১০ হাজার জন বাসিন্দা পিছু একটি করে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকবে।” প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিকাঠামো ঠিক কেমন হবে? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এক-একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৫-১৭ জন থাকবেন। এর মধ্যে ২ জন এমও (মেডিক্যাল অফিসার), ৩ জন সিস্টার, ১ জন করে ফার্মাসিস্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, ক্লার্ক, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সাপোর্ট স্টাফ, ২ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ৩-৫ জন এএনএম। বহির্বিভাগ খোলা থাকবে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রকল্প চালু নিয়ে পুরসভার সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের আলোচনাও হয়েছে।
নতুন তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র শহরের ঠিক কোন এলাকায় গড়ে উঠবে? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ জন্য কয়েকটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। কর্ণেলগোলা, মানিকপুর এবং ডাক বাংলো রোড। এই তিনটি এলাকার আশপাশে বেশ কয়েকটি বস্তি রয়েছে। যেখানে কয়েকশো গরিব মানুষের বসবাস। পরে নতুন ভবন তৈরি হবে। আপাতত ভাড়া বাড়িতেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “দরিদ্র মানুষরা অনেক সময় অসুখ লুকিয়ে রাখেন। হাতের কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া অনেক সুবিধাজনক হবে।” স্বাস্থ্য দফতরের ওই কর্তা জানাচ্ছেন, শহরে এনএএইচএম প্রকল্প চালু হলে রোগ প্রতিরোধ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার আরও বাড়বে। কোনও রোগের প্রধান লক্ষণগুলো কী কী, রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান উপায়গুলোই বা কী কী, এ সব আরও বেশি করে মানুষ জানতে পারলে সুবিধা হবে। প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট নোডাল অফিসার তথা জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, “শহরে যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু হবে, সেখান থেকে বেশ কিছু পরিষেবাই মিলবে।” শহরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসও বলেন, “এই প্রকল্প চালু হলে শহরাঞ্চলের বহু গরিব মানুষ উপকৃত হবেন।”