বাড়তি ওজন তাড়াতাড়ি কমাতে কেউ যান জিমে, কেউ বা বাড়িতেই ট্রেডমিল, এক্সারসাইজ় বাইক, ইলিপটিক্যাল ক্রস ট্রেনার, রোয়ার ইত্যাদি ওয়ার্কআউট মেশিন কিনে ফেলেন। এগুলোর মধ্যে ইলিপটিক্যাল ক্রস ট্রেনার মেশিন দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক।
ইলিপটিক্যাল ক্রস ট্রেনার মেশিন কি সকলের জন্য উপযুক্ত?
ওজন কমানোর জন্য ডায়েট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমন বয়স ও শরীরের গঠন অনুয়ায়ী ঠিক ব্যায়াম করা উচিত। এই প্রসঙ্গে ফিটনেস প্রশিক্ষক অরিজিৎ ঘোষাল বললেন, ‘‘কার্ডিয়ো সেশনের মধ্যে ইলিপটিক্যাল রাখা হয়। দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে ঠিকই, কিন্তু কখনওই শুধু ইলিপটিক্যাল বা ট্রেডমিল বা সাইক্লিং-এর মতো লো ইমপ্যাক্ট অ্যারোবিক এক্সারসাইজ় করার পরামর্শ দেব না। এতে মেদ ঝরে, পাশাপাশি শরীরের পেশি ক্ষয়ও হয়। ফলে দেখবেন যাঁরা ১০০ বা ১২০ কেজি থেকে দ্রুত ৮০ কেজিতে চলে আসেন তাঁদের পেট, হাত ইত্যাদি শরীরের একাধিক জায়গার চামড়া ঝুলে যায়। এগুলো আসলে লুজ় ফ্যাট। রোজ অনেকটা সময় ধরে লো ইমপ্যাক্ট অ্যারোবিক এক্সারসাইজ় করলে অ্যানেরোবিক গ্লাইকোল্যাকটিক বেরোয়। এতে সার্বিক ভাবে শরীরের ওজন কমে ঠিকই, কিন্তু পেশি মজবুত হয় না। ঝুলে যাওয়া লুজ় ফ্যাট আবার রি-শেপ করতে অনেক সময় লেগে যায়, প্রায় এক-দু’বছর।’’
তা হলে কি ইলিপটিক্যাল ক্রস ট্রেনার বাদ দিতে হবে?অরিজিৎ বললেন, ‘‘না, কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ়ের একটা পার্ট। ইলিপটিক্যাল করাই যায়, তবে তার আগে কয়েকটা ধাপ আছে। মনে রাখতে হবে, ওজন কমানোর অর্থ শরীরের মেদ ঝরানোর সঙ্গে মাংসপেশিও মজবুত করা। এই জন্য এক্সারসাইজ়ে প্রথমেই কার্ডিয়ো নয়। আগে স্ট্রেংথ, রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং, তার পরে কার্ডিয়ো অর্থাৎ ইলিপটিক্যাল, সাইক্লিং, ট্রেডমিল।’’
ধাপে ধাপে এগোতে হবে ইলিপটিক্যালের দিকে
স্ট্রেংথ ট্রেনিং, রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং-এ যেহেতু ওজন তুলতে হয়, তাই অনেকেই চোট পাওয়ার ভয় পান, বিশেষত যাঁরা নতুন জিমে যাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে অরিজিৎ বললেন, “তিন, পাঁচ, দশ, পনেরো এই ভাবে অল্প অল্প করে ওজন দেওয়া হয়। যে যতটা নিতে পারবে, তার শরীরের ক্ষমতা বুঝেই ওজন দেওয়া হয়। একে বলে প্রোগ্রেসিভ ওভারলোড। এতে কোনও সমস্যা হয় না, বরং মাংসপেশি মজবুত হয়। কখনওই প্রথমে বেশি ওজন দেওয়া হয় না। কিন্তু স্ট্রেংথ-রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং আর ওয়েট লিফটিং-এর মধ্যে পার্থক্য আছে। ওয়েট লিফটিং একটা স্পোর্টস। ওটা পাওয়ার ডেভেলপ করে। যাঁরা ওয়েট লিফটার হবেন তাঁদের প্রশিক্ষণ আলাদা হয়। প্রপার ফ্যাট লস ও ওয়েট লস করতে চাইলে ৩০ মিনিট রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং করার পরে ১৫ মিনিট ইলিপটিক্যাল করতে দেওয়া হয়। স্ট্রেংথ ট্রেনিং, রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং, কার্ডিয়ো ও শেষে স্ট্রেচিং, এটাই এক্সারসাইজ় করার পরপর ধাপ। অবশ্যই উপযুক্ত পরামর্শ নিয়ে।”
পরপর এই ধাপগুলো মানলে সার্বিক ভাবে ওজন কমানো সম্ভব, না হলে হার্টের উপরে চাপ পড়ে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া কোমরে, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হতে পারে। মনে রাখবেন, শরীরে ব্যথা নিয়ে কোনও ব্যায়াম করা উচিত নয়। প্রথমে ব্যথা কমাতে হবে, জয়েন্টের মোবিলিটি বাড়াতে হবে। মাংসপেশি টাইট থাকলে ফ্লেক্সিবল করতে হবে, দুর্বল থাকলে শক্তি বাড়াতে হবে।