blood donation. blood transfusion

কোভিড পরিস্থিতিতে বেড়েছে ঘাটতি, রক্তদান নিয়ে এই গুলি খেয়াল রাখতেই হবে

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীর প্লাজমা আক্রান্তকে দিয়ে রোগের বাড়াবাড়ি প্রতিরোধ করা যাচ্ছে।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৫৭
Share:

এক ইউনিট রক্ত থেকে নানা উপাদান আলাদা করে চারজন অসুস্থ মানুষের চাহিদা মেটানো যায়। ফাইল ছবি

প্রতি বছরে আমাদের দেশের অসুস্থ মানুষদের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয় গড়ে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ইউনিট। স্বেচ্ছাসেবকদের দানে ১ কোটি ইউনিট পাওয়া গেলেও ঘাটতি থেকেই যায়। তবে আগের থেকে সাধারণ মানুষের সচেতনতা অনেক বেড়েছে। এ বারের কোভিড পরিস্থিতিতে রক্তদানে কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। গতকাল দেশ জুড়ে পালন করা হল ‘ন্যাশনাল ভলেন্ট্যারি ব্লাড ডোনেশন ডে’।

Advertisement

সাধারণ মানুষকে রক্তদানে উৎসাহ দিতে ১৯৭৫ সাল থেকে এ জাতীয় দিবস যাপন করা হচ্ছে, বেড়েছে মানুষের সচেতনতা। তবে এ বছর কোভিড অতিমারিতে রক্তের কিছুটা আকাল তো আছেই। এক ইউনিট রক্ত থেকে নানা উপাদান আলাদা করে চারজন অসুস্থ মানুষের চাহিদা মেটানো যায়, এমনই জানান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমিউনোহেমাটোলজি ও ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের অধ্যাপক প্রসূন ভট্টাচার্য। ১৬২৮ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক উইলিয়াম হার্ভে রক্ত সংবহন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেন।

১৭৯৫ সালে ফিলাডেলফিয়ায় আমেরিকান চিকিৎসক ফিলিপ স্যাং ফিসিক প্রথম মানুষের শরীরে সফল রক্ত সঞ্চালন করে দেখান। রক্ত শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে কোষকে বাঁচিয়ে রাখে। রক্তের হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন বহন করে কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। বেঁচে থাকার অন্য উপাদান গ্লুকোজ, বিভিন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদিও রক্তের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। শরীরের বিভিন্ন বর্জ্য যেমন- কার্বন ডাই অক্সাইড, ইউরিয়া, ল্যাকটিক অ্যাসিড-সহ নানা ক্ষতিকর জিনিস শরীরের বাইরে বের করতে সাহায্য করে।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা আবহে নখ নিয়ে এই বিষয়গুলি মানতেই হবে

আবার রক্তের শ্বেত কণিকা বিভিন্ন অসুখ বিসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। এছাড়া বিভিন্ন হরমোন সংবহন,অ্যাসিড-ক্ষার ভারসাম্য বা পিএইচ ব্যালেন্স স্বাভাবিক রাখা, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা ইত্যদি অনেক কাজই রক্ত ছাড়া অচল।

প্রসূনবাবুর কথায়, ‘‘পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের মোট ওজনের ৭ থেকে ৮ শতাংশ ওজন রক্তের। দুর্ঘটনায় প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ, সন্তানের জন্ম দিয়ে গিয়ে, স্ত্রীরোগ, অ্যানিমিয়া, সেপ্টিসিমিয়া, ডেঙ্গি অথবা অন্যান্য অসুখ বা ক্যানসারের কারণে শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে গেলে ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। বাইরে থেকে রক্ত দিয়ে রোগীকে স্থিতিশীল করা হয়। এই কারণেই রক্তকে বলা হয় ফার্স্ট লাইন অফ ড্রাগ।’’

আরও পড়ুন:কোভিডের উপসর্গে জ্বরের দোসর হাত-পা ব্যথা? কী খেয়াল রাখতেই হবে?​

রক্তের বিভিন্ন উপাদানকে যন্ত্রের সাহায্যে পৃথক করে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯৪০ সালের ‘ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক্স’ আইন অনুযায়ী রক্তের ওষধি গুণের মাপকাঠি নির্ধারণ করা আছে। এই আইন অনুযায়ী রক্তের গুণগত মান বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে রক্তের বিভিন্ন উপাদান সঠিক পদ্ধতিতে আলাদা করে নিয়ে রোগীকে দেওয়া উচিত। অর্থাৎ রক্তের যে উপাদানের জন্যে মানুষটি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেই উপাদানটি দিলে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। যেমন ডেঙ্গি হলে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট দিতে হয়, হিমোফিলিয়াতে ফ্যাক্টর ৮, পুরো রক্ত দেওয়ার দরকার হয় না এ গুলি খেয়াল রাখা।

বাইরে থেকে রক্ত দিয়ে রোগীকে স্থিতিশীল করা হয় অনেক রোগেই। ফাইল ছবি।

রক্তের বিভিন্ন উপাদান পৃথক করে তার সুনির্দিষ্ট ব্যবহার করার বিষয়টি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে ওয়াকিবহাল ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা। ১৮ বছর থেকে ৬৫ বছর বয়সি যে কোনও সুস্থ মানুষ রক্ত দান করতে পারেন। দাতার শরীর থেকে ৩৫০ সিসি থেকে ৪৫০ সিসি রক্ত নেওয়া হয়। রক্ত দিলে কখনওই শরীর খারাপ হয় না। কিছুদিনের মধ্যেই রক্ত পূরণ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:নিউ নর্মালে সম্পর্ক ভাল রাখতে কী করবেন, কী করবেন না

ইদানীং কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীর প্লাজমা আক্রান্তকে দিয়ে রোগের বাড়াবাড়ি প্রতিরোধ করা যাচ্ছে। ডেঙ্গি ছাড়া অন্য গুরুতর সংক্রমণে (সেপ্টিসিমিয়া) অণুচক্রিকা কমে গেলে রোগীকে তা দিতে হয়।

রক্তের অসুখে লোহিত কণিকা কমে গেলে তাঁদের কনসেন্ট্রেটেড রেড ব্লাড সেল দিলে রোগী দ্রুত সেরে ওঠেন। হিমোফিলিয়া-সহ রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যা হলে ক্রায়োপ্রেসিপিটেট দেওয়া দরকার। লিভারের গুরুতর অসুখ বা লিভার ফেলিওরের রোগীদের প্লাজমা দিলে রোগী সেরে উঠতে সুবিধা হয়।

এ ছাড়া রক্তজমাট সংক্রান্ত সমস্যা বা নন স্পেসিফিক কোঅ্যাগুলেশন ডিজঅর্ডার হলে প্লাজমা দিতে হয়। প্রসূন বাবু জানান, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কে পূর্বভারতের বৃহত্তম ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার তৈরি হতে চলেছে রেড সেল ট্রান্সফিউশনে বিশেষ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে। ব্যাঙ্কে যেমন টাকা জমা না করলে টাকা তোলা যায় না, রক্তের ব্যাপারেও সেভাবে ভাবতে হবে। জীবনে একবারও রক্তদান না করে অসুস্থ নিকটজনের জন্য রক্ত পাবেন কীভাবে! জীবনে এক বার অন্তত রক্ত দান করুন। কারণ রক্তদানই জীবন দান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement