তামাক-সতর্কতা বাড়াতেও আসরে মোদী

শেষ পর্যন্ত মাঠে নামতে হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই। সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে তামাক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বার্তা পৌঁছে দিতে কড়া পদক্ষেপ করতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে নির্দেশ দিলেন তিনি। আজ কেন্দ্রের নির্দেশের পরে সিগারেট-বিড়ি বা খৈনির মতো তামাকজাত পদার্থের প্যাকেটের অন্তত ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ অংশ জুড়ে সতর্কবার্তা ও ছবি ছাপাতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৮
Share:

শেষ পর্যন্ত মাঠে নামতে হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই। সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে তামাক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বার্তা পৌঁছে দিতে কড়া পদক্ষেপ করতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে নির্দেশ দিলেন তিনি। আজ কেন্দ্রের নির্দেশের পরে সিগারেট-বিড়ি বা খৈনির মতো তামাকজাত পদার্থের প্যাকেটের অন্তত ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ অংশ জুড়ে সতর্কবার্তা ও ছবি ছাপাতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে।

Advertisement

এর আগেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, গত ১ এপ্রিল থেকেই তামাকজাত পদার্থের প্যাকেটের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ অংশে সতর্কবার্তা ও ছবি ছাপার বিষয়টি কার্যকর করা হবে। কিন্তু হঠাৎই ধূমপানের সঙ্গে ক্যানসারের কোনও যোগ নেই বলে বিতর্ক বাধিয়ে বসেন দুই বিজেপি সাংসদ। ওই দু’জন সাংসদ একটি সংসদীয় কমিটির সদস্য। সেই কমিটির উপরেই প্যাকেটে সতর্কীকরণের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব রয়েছে। এক জন আবার বিড়ি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ওই দুই সাংসদের আপত্তিতে গত বুধবার নিষেধাজ্ঞা জারির প্রশ্নে পিছিয়ে আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু কেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা হঠাৎ পিছিয়ে এলেন তা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অন্দমরহলে।

কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে আগামী দিনে ভারতে মহামারীর আকার নিতে চলেছে ক্যানসার। বিশেষ করে মুখের ক্যানসার। যার একটি বড় কারণ হল তামাকের ব্যবহার। উন্নত দেশগুলি ইতিমধ্যেই ধূমপানের ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ জারি করেছে। সেই সময়ে বিজেপির দুই সাংসদ যে ভাবে প্রকাশ্যে ধূমপানের পক্ষে সওয়াল করা শুরু করেন তাতে অস্বস্তিতে পড়ে যায় সরকার। বিরোধীরা তো বটেই চিকিৎসক শিবির ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি সরকারের সমালোচনায় এগিয়ে আসে।

Advertisement

অভিযোগ ওঠে তামাক শিল্পের চাপে পড়েই ওই কথা বলেছেন দুই বিজেপি সাংসদ। বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্যামচরণ পাল্টা যুক্তি দেন, তিনি ওই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের কথা ভেবে ওই কথা বলেছিলেন। কিন্তু স্বভাবতই সরকারকে আক্রমণের সহজ সুযোগ পেয়ে যান বিরোধীরা। কংগ্রেসের মুখপাত্র সঞ্জয় ঝা-র কথায়, ‘‘কেন শ্যামচরণ ওই কথা বলছেন তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এই সরকার যে সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না, কেবল ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় তৎপর তা আবার প্রমাণ হয়ে গেল।’’

এমনিতেই নানা কারণে বিপাকে পড়েছে মোদী সরকার। দশ মাসেই সরকারের যে আম আদমি বিরোধী ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন মোদী-অমিত শাহেরা। সেই কারণে বেঙ্গালুরুর কর্মসমিতির একটি বড় অংশ ব্যয় হয়েছে আম জনতার উন্নতিতে সরকার কী পদক্ষেপ করেছে তা বোঝাতে। এই পরিস্থিতিতে তামাক ব্যবহার নিয়ে যে ভাবে সব শিবিরে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে তাতে নতুন করে অস্বস্তির মুখে পড়েন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।

আজ তাই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হয় খোদ মোদীকেই। বিজেপি সূত্রের খবর, বেঙ্গালুরুতে কর্মসমিতির বৈঠক চলার ফাঁকেই তিনি ডেকে পাঠান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডাকে। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সরকার কোনও ভাবেই তামাক শিল্পগোষ্ঠীর চাপের কাছে মাথা নোয়াবে না। সিগারেট-সহ অন্যান্য তামাকজাত পদার্থের প্যাকেটে বড় আকারের সতর্কবার্তা দেওয়ার যে সুপারিশ রয়েছে তা মেনে চলতে হবে সমস্ত সংস্থাকে।

ঠিক ছিল ১ এপ্রিল থেকে সমস্ত সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পদার্থের প্যাকেটে ৮৫ শতাংশ জুড়ে সতর্কবার্তা ও ছবি থাকবে। পরে তা কমিয়ে ৬০-৬৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতেও আপত্তি জানিয়েছিলেন দুই বিজেপি সাংসদ। কিন্তু আজ মোদীর নির্দেশ পেতেই তড়িঘড়ি নড্ডা জানান, ‘‘সরকার খুব দ্রুত ওই সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করবে।’’

একই সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে কী ভাবে একজন বিড়ি ব্যবসায়ী ওই ধরনের একটি কমিটিতে স্থান পেলেন। কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি শিবিরও স্বীকার করছে, নিরপেক্ষ বিচারে ওই কমিটিতে কোনও ভাবেই জায়গা হওয়ার কথা নয় তামাক ব্যবসায়ী শ্যামচরণের। কারণ কোনও সাংসদের এই ধরনের ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকলে তাঁকে সেই ক্ষেত্র সংক্রান্ত কমিটিতে না রাখাই রীতি। তা সত্ত্বেও কী ভাবে শ্যামচরণ ওই কমিটিতে ঢুকেছিলেন তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement