Massage as Stress Buster

মানসিক চাপ কমানোর চাবিকাঠি মাসাজ

ক্লান্তি কমাতে সহায় হতে পারে মাসাজ। হ্যাপি হরমোনের ক্ষরণ বাড়লেই, কমবে স্ট্রেস।

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৩১
Share:

স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা, প্রশ্নপত্র তৈরি ও খাতা দেখার চাপ। তার উপরে রয়েছে বোর্ডের পরীক্ষায় ইনভিজিলেটর হওয়ার গুরুদায়িত্ব। পাশাপাশি রয়েছে নানা সাংসারিক কর্তব্য। এই জোড়া ফলার চাপে মানসিক উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছিল স্কুলশিক্ষিকা প্রজ্ঞাপারমিতার। এক সহকর্মীকে সে কথা জানাতে তিনি পরামর্শ দিলেন মাসাজ থেরাপির। ক্লান্তি কমাতে কি সত্যিই মুশকিল আসান হতে পারে মাসাজ? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?

মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, যে কোনও রোগের চিকিৎসার দু’টি দিক থাকে। ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা এবং ওষুধ ছাড়া অন্য উপায়ে চিকিৎসা। যেমন, ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানো, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা— এই সব উপায়ে বহু ক্ষেত্রেই রোগীরা উপকার পান। বিনা ওষুধে এই সব উপায়ের মধ্যেই পড়ে মাসাজ থেরাপি। তিনি বললেন, ‘‘আমরা যখন খুব স্ট্রেসে থাকি, তখন দেহে অ্যাড্রিনালিন হরমোন বেশি ক্ষরণ হয়। সেটা স্ট্রেস আরও বাড়িয়ে দেয়। সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপরে চাপ বাড়ে। ক্ষতিরও ভয় বাড়ে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, এর ফলে দেহে যে প্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দেয়, তার মধ্যে রয়েছে বুক ধড়ফড় করা, ঘাম হওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ। এই প্রতিক্রিয়া কমানোর উপায় স্ট্রেস কমানো। মানুষ খুশি থাকলে দেহে এন্ডরফিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে, যাকে চলতি ভাষায় ‘হ্যাপি হরমোন’ বলা হয়। হ্যাপি হরমোন যত বাড়বে, ততই কমবে স্ট্রেস।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হ্যাপি হরমোন বাড়ানোরই একটা উপায় হতে পারে মাসাজ। এর ফলে দেহে হালকা, ফুরফুরে একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

কেন মেলে এই অনুভূতি?

ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট সুরজিৎ রায় বলছেন, “স্ট্রেসের জেরে আমাদের মাংসপেশি শক্ত হয়ে থাকে। মাসাজের ফলে দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ফলে পেশি নমনীয় হয়ে ওঠে। তার ফলেই মেলে ওই ফুরফুরে অনুভূতি। মানসিক ভাবে হালকা হয়ে যাওয়ার অনুভূতিও মেলে মাসাজের মাধ্যমে।

অবসাদ, স্ট্রেসের সমস্যায় কি মাসাজই সমাধান?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মাসাজ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে, তবে কখনওই একমাত্র উপায় নয়। এ ছাড়াও, কারও স্ট্রেসের তীব্রতা, সমস্যার গভীরতার উপরে নির্ভর করছে তাঁর কী ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবীর মুখোপাধ্যায় বলছেন, “কেউ স্ট্রেসের সমস্যা নিয়ে এলে সরাসরি এমন পরামর্শ দেওয়া হয় না। কোনও মানসিক রোগীর সমস্যার তিনটি দিক থাকে— বায়োলজিক্যাল, সাইকোলজিক্যাল এবং সোশ্যাল। যেমন, তিনি কী কী ওষুধ নিয়মিত খান, অতীতের কোনও ঘটনার প্রভাব, ট্রমা, নেতিবাচক চিন্তা— সবই খতিয়ে দেখতে হয়। মানসিক টেনশন থেকে দেহের উপরে প্রভাব পড়ছে কি না, দেখতে হয় তা-ও।” কারণ এর জেরে হরমোনাল, ইমিউনোলজিক্যাল ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। বেড়ে যেতে পারে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ বা হার্টের রোগ। তিনি বলছেন, ‘‘স্ট্রেস, উদ্বেগ, ডিপ্রেশন কারও বেশি থাকলে ওষুধ এবং সাইকোলজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে প্রথমে তার মাত্রা কমানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাসাজ রোগীকে মানসিক ভাবে হালকাহতে সাহায্য করে। এটি অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে দেয়।’’

তবে মাসাজ করাতে যাওয়ার আগে যে বিষয়টি অবশ্যই দেখে নিতে হবে, তা হল যিনি মাসাজ করবেন, তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞ কি না। তা না হলে হিতে বিপরীত হওয়ার বড়সড় আশঙ্কা রয়েছে। কারণ মানবদেহ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান ছাড়াই মাসাজ করা হলে, তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে নার্ভ, টিসু বা পেশি। এ ছাড়া, কারও অস্থিসন্ধি, মেরুদণ্ডে ব্যথা থাকলে বিশেষ ভাবে সাবধান হতে হবে। কারও কোনও চোট বা চর্মরোগ থাকলেও মাসাজ করা উচিত নয়। রক্তচাপ কম বা বেশি থাকলে, মাসাজ করা যাবে কি না, কী ধরনের মাসাজ করা যাবে, তা একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারেন বলে জানাচ্ছেন অরুণাংশু তালুকদার। সুরজিৎ রায়ের মতে, কেউ বিশেষ কোনও সমস্যার সমাধান চাইলে, কী ধরনের মাসাজ প্রয়োজন, তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অভিজ্ঞ থেরাপিস্ট ঠিক করতে পারবেন।

তাই যে কোনও মাসাজ পার্লারে গিয়ে মাসাজ না করিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আর মনে রাখতে হবে, একই মাসাজ একজনের পক্ষে হিতকর হলেও অন্যজনের জন্য তা না-ও হতে পারে। তাই নিজের কী সমস্যা রয়েছে, সেটা আগে খতিয়ে দেখা দরকার।


ছবি: অমিত দাস, জয়দীপ মণ্ডল

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন