কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে সচিন তেন্ডুলকর। সপরিবার অসম ভ্রমণে বেরিয়েছেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত।
খোলা জিপে দাঁড়িয়ে অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সচিন তেন্ডুলকর। এক্স হ্যান্ডলে ক্রিকেটারের কাজিরাঙা ভ্রমণের ছবি পোস্ট করেছেন জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। সমাজমাধ্যমেও স্ত্রী অঞ্জলির সঙ্গে অসম ভ্রমণের একাধিক ছবি, ভিডিয়ো দেখা গিয়েছে।
তাতেই স্পষ্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দারুণ উপভোগ করছেন সচিন তেন্ডুলকর। ভারতীয় ক্রিকেট দল থেকে আনুষ্ঠানিক অবসরের পর প্রায়ই দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ান সচিন। সঙ্গে থাকে পরিবারও। সেই ছবি নিজেই সমাজমাধ্যমে অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন তিনি।
সম্প্রতি অসম, মেঘালয় বেড়াচ্ছেন সচিন। পিটিআই সূত্রের খবর, কাজিরাঙার অরণ্যে বাঘ, গন্ডার দর্শন হয়েছে তাঁর। উচ্ছ্বসিত ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক নিজেই লিখেছেন, ‘‘বাঘ দেখেছি। আমার সামনেই রাস্তা পার করেছে গন্ডার। দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।’’
একশৃঙ্গ গন্ডারের বিচরণক্ষেত্র কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পেয়েছে আগেই। প্রায় ২০০০ কিলোমিটার জুড়ে অরণ্যের বিস্তৃতি। ২২০০-এর বেশি একশৃঙ্গ গন্ডারের আশ্রয়স্থল এই বনভূমি। ২০০৭ সালে এই অরণ্যকে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।ববন
বন দফতরের কর্মীদের সঙ্গে সচিন তেন্ডুলকর।
হাতি, ইন্ডিয়ান বাইসন, বাঘ, গউর, নানা প্রজাতির হরিণ-সহ অসংখ্য শতাধিক প্রজাতির পক্ষীর আশ্রয়স্থল কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান। ক্রিকেটার সচিন তাঁর কাজিরাঙা ভ্রমণ শুরু করেছিলেন সকালে, পশ্চিম বাগোরা রেঞ্জ থেকে । আবার বিকালের জিপ সাফারিতে গিয়েছিলেন মধ্য খোখরা রেঞ্জে। জাতীয় উদ্যান বন্যপ্রাণীর মুক্ত বিচরণক্ষেত্র। ফলে, এখানে গেলে যে বাঘ, গন্ডারের দেখা মিলবেই, তা কিন্তু নয়। কারণ, জাতীয় উদ্যান তৈরি হয়েছে এই কারণে, বন্যপ্রাণীরা যাতে নির্ভয়ে, স্বাধীন ভাবে বিচরণ করতে পারে। তবে সচিন তেন্ডুলকরের অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে ভাল। বাঘ এবং কাজিরাঙার একশৃঙ্গ গন্ডারের দেখা পেয়েছেন তিনি।
সচিনের মতো আপনিও কি কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণ করতে চান? সেখানে যেতে হলে কী ভাবে পরিকল্পনা করবেন জেনে নিন।
অসমের গোলাঘাট ও নগাঁও জেলা জুড়ে জাতীয় উদ্যানের বিস্তৃতি। জাতীয় সড়কের দু’পাশে ঘন অরণ্য। তবে জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করার নির্দিষ্ট প্রবেশদ্বার রয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন হয় বন দফতরের অনুমতিরও।
জঙ্গলের প্রবেশপথ
জিপ এবং হাতির পিঠে চেপে জাতীয় উদ্যান ঘোরার সুযোগ থাকে। জিপ সাফারি হয় সকাল এবং দুপুরে। তবে হাতির পিঠে চেপে শুধু সকালেই ঘোরা যায়।
জাতীয় উদ্যানের প্রবেশের চারটি পথ
• মিহিমুখ ( সেন্ট্রাল রেঞ্জ )
• বাগোরি (পশ্চিম রেঞ্জ)
• আগরাটোলি (পূর্ব রেঞ্জ)
• ঘোড়াকাটি (বুড়াপাহাড় রেঞ্জ)
অরণ্যের সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণ, পাখি দেখার পাশাপাশি জাতীয় উদ্যানের আশপাশে ঘুরে নেওয়া যায় কাকোচাং জলপ্রপাত, দেওপাহাড়, চা-বাগান।
হাতিকে খাওয়াচ্ছেন সচিন।
জিপ সাফারির সময় এবং নিয়ম
সকাল ৮টা থেকে ১০টা এবং দুপুরে ২টো থেকে ৪টে, দু’বেলা জিপ সাফারি হয়। কোহরা এবং বাগোরিতে জিপ সাফারির খরচ জিপপিছু ভারতীয়দের জন্য ৪ হাজার টাকা। ইস্টার্ন রেঞ্জ এবং পুড়া পাহাড়ে জিপ সাফারির খরচ যথাক্রমে ৪ হাজার ৬০০ এবং ৫ হাজার ৪০০।
হাতি সাফারির সময় এবং খরচ
সকাল ৫টা ৬টা এবং ৬টা থেকে ৭টা দু’দফায় হাতির পিঠে চেপে বনাঞ্চলে ভ্রমণের সুযোগ মেলে। হাতির নিজস্ব পথ থাকে। ফলে জিপ সাফারির পাশাপাশি হাতি সাফারির অভিজ্ঞতা একেবারেই অন্য রকম। খরচ পড়ে জনপ্রতি ১৫০০ টাকা।
অনলাইনে আগাম হাতি এবং জিপ সাফারির বুকিং হয়। সচিত্র পরচিয়পত্রের দরকার হয়।
ঘোরার আদর্শ সময়
এপ্রিল এবং মে মাস গরমকাল। তবে বন্যপ্রাণ দেখার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। প্রবল গরমে অরণ্যের ঘাস, গাছপালা শুকিয়ে যায়। বন্যপ্রাণীরা জল খেতে জলাশয়ের আশপাশেই থাকে। বর্ষায় জাতীয় উদ্যান বন্ধ থাকে। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি, তাপমাত্রা তুলনামূলক আরামদায়ক থাকে। এই সময়ও কাজিরাঙা আসতে পারেন।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে গুয়াহাটি গিয়ে গাড়ি ভাড়া করে কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে যেতে পারেন। থাকার জন্য একাধিক হোটেল, রিসর্ট রয়েছে। বিমানে গুয়াহাটি বিমানবন্দর পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতেও কাজিরাঙা যেতে পারেন। জোরহাট বিমানবন্দর থেকে কাজিরাঙার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার।