সংক্রামক বিভাগে তালা

বৃহত্তর স্বার্থ খুঁজছেন স্বাস্থ্য আধিকারিক

সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে, তাই ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল চত্বরের অবস্থা সঙ্গীন। এমনকী নির্মাণ কাজের জন্য নাকি বন্ধ হয়ে গিয়েছে মহকুমা হাসপাতালের সংক্রামক বিভাগে (আইসোলেশন) যাওয়ার রাস্তাই। আর সে কারণেই কর্তৃপক্ষ তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন গোটা বিভাগ। চিকিৎসাধীন আট জন রোগীর আপাতত ঠাঁই হয়েছে সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই। তবে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এর মধ্যে খুঁজে পাচ্ছেন ‘বৃহত্তর স্বার্থ’।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০২:২০
Share:

মহকুমা হাসপাতালের সংক্রামক বিভাগ। (ইনসেটে) দরজায় তালা। —নিজস্ব চিত্র।

সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে, তাই ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল চত্বরের অবস্থা সঙ্গীন। এমনকী নির্মাণ কাজের জন্য নাকি বন্ধ হয়ে গিয়েছে মহকুমা হাসপাতালের সংক্রামক বিভাগে (আইসোলেশন) যাওয়ার রাস্তাই। আর সে কারণেই কর্তৃপক্ষ তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন গোটা বিভাগ। চিকিৎসাধীন আট জন রোগীর আপাতত ঠাঁই হয়েছে সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই। তবে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এর মধ্যে খুঁজে পাচ্ছেন ‘বৃহত্তর স্বার্থ’।

Advertisement

২০ শয্যা বিশিষ্ট এই বিভাগের আট জন রোগীর মধ্যে সাত জন ডায়রিয়া এবং একজন যক্ষায় আক্রান্ত। অন্যদিকে রবিবার এক বসন্ত আক্রান্ত রোগীকে ভর্তি নেয় হাসপাতাল। তাঁকে রাখা হয়েছে এসএনসিইউ-র বাইরে মায়েদের জন্য বরাদ্দ একটি কক্ষে। কর্তৃপক্ষের সাফাই, আপাতত এসেনসিইউ-র সামনে মায়ের ঘরে কেউ নেই। তাই এই ব্যবস্থা।

কিন্তু রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা তো থেকেই যাচ্ছে। তাতে আর কী করা যাবে? হাসপাতালের সুপার দেবদুলাল মুখোপাধ্যায়ের সাফ কথা, “এই ব্যবস্থা সাময়িক। তা ছাড়া আমি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশেই স্থানান্তর করেছি। দ্রুত ওই বিভাগ চালু হয়ে যাবে।”

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন রোগীকে পৃথক বিভাগে ভর্তি রেখেই তাঁর চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের এই কাজে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য এ ভাবে সংক্রামক বিভাগে যাওয়ার রাস্তা খারাপের অজুহাত দেখিয়ে ওই বিভাগের রোগীদের সাধারণ বিভাগে রাখা যায় না।। অন্যরা সংক্রামিত হলে কে দেখবে?

এমনকী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হাসপাতালের কর্মী থেকে একাধিক চিকিৎসকও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক স্পষ্ট বললেন, “সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। এলাকায় চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধার উন্নতি ঘটতে চলছে, তখন সংক্রামক রোগীদের সরিয়ে সাধারণ বিভাগে ভর্তি করায় একটা ভুল বার্তা গেল।”

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে রোগীর চাপ বরাবরই বেশি। এমনিতেই শয্যা না পেয়ে রোগীরা স্যাঁতসেতে মেঝেতেও পড়ে থাকেন। এমনকী, সদ্যজাতদের নিয়ে প্রসূতিরাও থাকেন মেঝেতেই। শুধু ঘাটাল মহকুমাই নয়, হুগলি ও হাওড়া-সহ দুই মেদিনীপুরের মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল।

মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে একশো ফুট দূরে হাসপাতালের নিজস্ব জমিতেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে। ঠিক ওই একই জায়গায় রয়েছে সংক্রমক বিভাগটি। হাসপাতাল সুপারে কথা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ চলায় ওই জমি যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। দেবদুলালবাবুর দাবি নির্মাণকারী ঠিকাদারি সংস্থাকে জানানো হয়েছিল রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য। কিন্তু তাঁরা রাস্তা পরিষ্কার করতে অস্বীকার করে। ফলে বাধ্য হয়েই ওই বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিতে হয়েছে।

কিন্তু এ ভাবে কি রোগী রাখা যায়? তা ছাড়া এলাকায় যদি হঠাৎ কোনও গণ-বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে তবে কোথায় ঠাঁই হবে রোগীদের। হাসপাতাল সুপার যাবতীয় দায় ছেড়ে দিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের উপর।

এ দিকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরার বক্তব্যও সেই একই, “সাময়িক ভাবে ওই বিভাগ বন্ধ রেখে রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাঁদের মূল ভবনের বারান্দায় নিরাপদ ভাবে আলাদা করেই রাখা হয়েছে।”

যদিও বাস্তবটা অন্য রকম। পুরুষ বিভাগেই শয্যায় বা মেঝেতে রাখা হয়েছে ওই আট জন রোগীকে। তা ছাড়া বারান্দায় থাকাটাও কি নিরাপদ। বিশেষত মহকুমা হাসপাতালে এমনই রোগীর চাপ যে সেখানে বারান্দায় চিকিৎসাধীন রোগী রাখাটা নিয়মই প্রায়। সুতরাং ঘাটালের বাসিন্দা ও সাধারণ বিভাগে ভর্তি থাকা রোগী ও আত্মীয়দের প্রশ্ন, বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না করে কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?

গিরিশবাবুর জবাব, “বৃহত্তর স্বার্থের জন্য এটা হতেই পারে। আশা করি এটা সবাই বুঝবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement