Kali Puja 2024

দক্ষিণেশ্বরে কালীপুজোর মহাভোগে কী থাকছে? জেনে নিন ভোগ রান্নার নেপথ্যের অজানা কাহিনি

দক্ষিণেশ্বরে কালীপুজোর মহাভোগে কী থাকছে? জেনে নিন ভোগ রান্নার নেপথ্যের অজানা কাহিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১০:০৩
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

দক্ষিণেশ্বর মন্দির তো কেবল ধর্মীয় স্থান হিসাবে বিখ্যাত নয়, এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে ঐতিহাসিক বহু ঘটনা। এই মন্দির সাক্ষী স্বাধীনতা সংগ্রাম, বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো ঘটনার! সকলেই জানেন, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে দেবী কালী ভবতারিণী রূপে পূজিতা হন। মন্দিরের ইতিহাসের নানা পুঁথিপত্র যদি প্রমাণস্বরূপ দেখা হলে বা শাস্ত্রীয় গ্রন্থে খুঁজলে দেখা যাবে, ভবতারিণীরূপে দেবীর পুজোর প্রচলনের কথা আদৌ কোথাও লিপিবদ্ধ নেই। ১৮৫৫ সালের ৩১ মে, স্নান যাত্রার দিনে এই মন্দিরে হিন্দু শাস্ত্রের রীতিনীতি একাগ্র ভাবে মেনে পণ্ডিত রামকুমার চট্টপাধ্যায় মায়ের বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই দেবীর নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে শ্রী শ্রী জগদীশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানী, অথচ ভবতারিণী দেবীর কোনও উল্লেখই নেই! বিষয়টি নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা বোধ হলেও, এর ব্যাখ্যা হিসাবে একমাত্র বলা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভবতারিণী রূপের কথা লোকমুখে প্রচলিত হয়ে যায়। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজে যে হেতু দেবীকে ভবতারিণী মানতেন, তার জেরেই হয়তো হয়েছে এই নামকরণ।

Advertisement

কালীপুজোর দিন হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে। মায়ের পুজোর পাশাপাশি ভোগের অপেক্ষাতেও থাকেন তাঁরা। কালীপুজোর দিন দেবীর ভোগেও আছে নানা বিশেষত্ব। দক্ষিণেশ্বরের অছি পরিষদের বর্তমান সম্পাদক কুশল চৌধুরী বলেন, ‘‘অন্নভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয় ভাত ও ঘি ভাত। সঙ্গে থাকে পাঁচ রকম তরকারি, পাঁচ রকমের ভাজা ও পাঁচ রকমের মাছ, চাটনি, পায়েস এবং পাঁচ রকমের মিষ্টি। এক সময়ে বলি প্রথা থাকলেও, বহু কাল তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই মায়ের ভোগে থাকে না কোনও মাংস। মায়ের ভোগের দায়িত্বে থাকেন সেবাইতরা। এখনও শ্রীরামকৃষ্ণ যে ভাবে পুজো করতেন সেই ভাবেই আরাধনা করা হয় দেবীর।’’

মায়ের ভোগ ছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্যও আলাদা করে ভোগ রান্না হয় কালীপুজোর দিন। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথিদের জন্য পাঠানো হয় দক্ষিণেশ্বরের ভোগ। অতিথিদের তালিকায় থাকেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও। অছি পরিষদের তরফ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সেই ভোগ রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ বছরের সেই ভোগ রান্নার খানিকটা দায়িত্ব পড়েছে শুভজিৎ ভট্টাচার্যের উপর। কী থাকছে এ বারের ভোগের থালিতে, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন। শুভজিৎ বলেন, ‘‘আমি এবং অমিত ঘোষদস্তিদার একসঙ্গে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা চালাই। কোভিড কালে ব্যবসায় খানিকটা মন্দা আসে, তখন আমরা একটা ইউটিউব চ্যানেল শুরু করি। অন্য হাজারটা রান্নার চ্যানেলের থেকে আমাদের চ্যানেলকে আলাদা করার জন্য আমি মূলত পুরনো দিনের হারিয়ে যাওয়া রান্নাকেই চ্যানেলের ইউএসপি বানাই। গত বছর হঠাৎই এক দিন দক্ষিণেশ্বরের অছি পরিষদের তরফ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আমাদের কালীপুজোয় বিশেষ অতিথিদের জন্য ভোগ রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ বারেও সেই দায়িত্ব পেয়েছি আমারা।’’

Advertisement

কী ছিল গত বছরের ভোগের মেনুতে? শুভজিৎ বলেন, ‘‘কালীপুজোর দিন এই রাজ্যে তো বটেই রাজ্যের বাইরেও ভোগের প্রসাদ পাঠানো হয় বিশেষ অতিথিদের কাছে। ওঁদের দাবি অনুযায়ী এমন রান্না করতে হবে, যেটা কিনা থেকে যায়, আর এক বাক্স থেকে অনেকে মিলে যেন ভোগ করে খেতে পারেন। গত বছর ভোগের মেনুতে ছিল ঘি ভাত, আলু ফুলকপির তরকারি, কমলা সন্দেশ, জাউ পিঠা। জাউ পিঠা মূলত বরিশালের একটি মিষ্টির পদ। চালের খুদ, দুধ আর নাককেল বাটা দিয়েই মূলত রান্নাটি করা হয়। খাানিকটা ফিরনির মতো হয় বিষয়টি। প্রায় ১২০০ লোকের জন্য রান্না করা হয়েছিল সেই ভোগ, প্রায় দু’দিন ধরে চলেছিল রান্নার পর্ব। আমাদের পাশাপাশি ৩-৪ জন ঠাকুর ছিলেন, ১০-১২ জন ছিলেন জোগাড়ে ছিলেন, প্যাকিংয়ের দায়িত্বে হাত লাগিয়েছিলেন অনেকেই। আমাদের পরিবারের লোকজনেও ছিলেন সেই তালিকায়।’’

এ বছর কী বিশেষ রয়েছে মহাভোগের মেনুতে? শুভজিৎ বলেন, ‘‘এ বছর মহাভোগের বানানোর দায়িত্ব অনেকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অন্ন ও তরকারি বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মেনুতে থাকছে পোলাও আর ধোঁকার ডালনা। ধোঁকার ডালনা তৈরির সময় আমি আমার দিদার প্রণালী মেনে চলি।’’

শুভজিৎ জানালেন মহাভোগের সেই বিশেষ দু’টি পদের প্রণালী।

সুগন্ধি চালের পোলাও থাকবে দক্ষিণেশ্বরের মহাভোগে। ছবি: সংগৃহীত।

বাসন্তী পোলাও

কড়াইয়ে ঘি গরম করে কাজু ভেজে তুলে রাখুন। এ বার ঘি তুলে নিয়ে সেই কড়াইয়েই জল দিয়ে দিন। জল ফুটে উঠলে জলে দিয়ে দিন তেজপাতা, এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি আর সামান্য হলুদ গুঁড়ো। আবার জলে দিয়ে দিন আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা গোবিন্দভোগ চাল। এ বার মিশিয়ে দিন কেওড়া জল আর গোলাপ জল। চাল ৯০ শতাংশ সেদ্ধ হয়ে এলে চাল থেকে জল ঝরিয়ে নিন। এ বার একটি বড় পাত্রে অর্ধেকটা গরম ভাত ঢেলে দিন। এ বার তার উপর ছড়িয়ে দিন কাজু-কিশমিশ আর অর্ধেকটা চিনি আর পরিমাণ মতো ঘি। এ বার বাকি ভাতটা দিয়ে উপর থেকে বাকি কাজু-কিশমিশ, চিনি আর ঘি ছড়িয়ে দিন। ১০০ গ্রাম চাল হলে মোট ২০ গ্রাম মতো চিনি দিতে হবে, শুধু এইটুকু মাপ মনে রাখতে পারলেই যথেষ্ট। এ বার পাত্রটি ঢাকা দিয়ে রেখে দিন। মিনিট পাঁচেক পর ভাল করে মিশিয়ে নিলেই পরিবেশনের জন্য তৈরি বাসন্তী পোলাও।

মহাভোগে থাকবে ধোঁকার ডালনাও। ছবি: সংগৃহীত।

ধোঁকার ডালনা

ছোলার ডাল আগের দিন রাতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সেই ডাল সেদ্ধ করে নিয়ে বেটে নিয়ে তার সঙ্গে আদা বাটা, হিং, গরমমশলা গুঁড়ো, কাঁচালঙ্কা বাটা, জিরে আর শুকনো লঙ্কা দিয়ে তৈরি ভাজা মশলা, লঙ্কার গুঁড়ো, নুন চিনি আর ভাজা জিরে সামান্য দানা রেখে গুঁড়ো করে নিয়ে সেই গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। এ বার কড়াইয়ে তেল দিয়ে মিশ্রণটি ঢেলে পাক দিয়ে দিন। খুব বেশি ক্ষণ নয়, মিশ্রণটি আঠালো হয়ে এলেই কড়াই থেকে নামিয়ে একটি পাত্রে সেট করে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ভেজে দিন। এ বার কড়াইতে তেল দিয়ে হলুদ, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো, হিং আর গরমমশলা দিয়ে কষিয়ে ফেটিয়ে রাখা টক দই দিয়ে দিন। এ বার পরিমাণ মতো জল মিশিয়ে ঝোল ফুটতে দিন। তার উপর ঝোল ফুটে উঠলে ধোঁকাগুলি দিয়ে দিন। মিনিটখানেক পর ঘি আর গরমমশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশনের জন্য তৈরি ধোঁকার ডালনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement