মারণ ব্যাধি ক্যানসার যে সিগারেট-গুটখার মতো তামাকের পথ ধরে হানা দেয়, এ কথা এখন কমবেশি জানেন প্রায় সকলেই। তা নিয়ে প্রচারও চলছে নানা ভাবে। তবু এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই সচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট-গুটখা নিয়ন্ত্রণে এ বার আইনি ব্যবস্থা জোরদার করার উপরে গুরুত্ব দিলেন চিকিৎসকেরা।
ধূমপান বা গুটখা-বিরোধী আইন থাকা সত্ত্বেও এ রাজ্যে তার প্রয়োগের বিষয়টি কত অবহেলিত, বুধবার কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে তা তুলে ধরেন অনেক চিকিৎসক। ক্যানসার চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্র, গোয়া, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে তামাক-বিরোধী আইন যে-ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এখনও তা হয়নি।’’ তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ। অথচ এখানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনেই বিড়ি-সিগারেটের দোকান। গুটখা কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ। অথচ অধিকাংশ দোকানেই তা পাওয়া যাচ্ছে। নাবালকেরাও দোকান থেকে বিড়ি-সিগারেট কিনছে বিনা বাধায়।
আগামী রবিবার, ৩১ মে ‘ওয়ার্ল্ড নো টোব্যাকো ডে’। সেই উপলক্ষে এ দিন ওই সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন এবং নারায়ণ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। সিগারেট-গুটখা নিয়ন্ত্রণের আইন প্রয়োগে সরকারের তরফে আরও সক্রিয়তা প্রয়োজন বলে সেখানে মন্তব্য করেন অনেক চিকিৎসক। তাঁরা জানান, তামাকজাত দ্রব্য থেকে সরকারের যত আয় হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যায় ক্যানসার রোগীর চিকিৎসায়। আখেরে তাই ক্ষতির পাল্লাই অনেক বেশি ভারী।
মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত কিছু রোগী এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। তামাক কী ভাবে তাঁদের জীবন থেকে সুস্থতা কেড়ে নিয়েছে, সেই বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা শোনান তাঁরা।
সরকারের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তো আছেই। এ ব্যাপারে সচেতনতা ও সতর্কতার অভাব আছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। ডাক্তারদের অনেকে এটাকে বলছেন অসাড়তা। ক্যানসার চিকিৎসক সুমন মল্লিক জানান, পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ রাজ্যের ৩৬.২ শতাংশ মানুষ কোনও না কোনও ভাবে তামাক ব্যবহার করেন। আর ৬২ শতাংশ মানুষ নিজের বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। ‘‘নিজেকে বা নিদের পরিবারের লোকজনকে ক্যানসারের দিকে ঠেলে দেওয়ার এই প্রবণতাকে ঠিক সচেতনতার অভাব বলা যায় না। বিপদ সম্পর্কে সচেতন হয়েও এটা করেন তাঁরা,’’ বললেন সুমনবাবু। গোটা সপ্তাহ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই বিষয়গুলিকেই সামনে আনবেন উদ্যোক্তারা।